ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ইস্কাটনে জোড়া খুন

এমপিপুত্র রনির যাবজ্জীবন

প্রকাশিত: ১০:৫৫, ৩১ জানুয়ারি ২০১৯

এমপিপুত্র রনির যাবজ্জীবন

কোর্ট রিপোর্টার ॥ নিউ ইস্কাটনে জোড়া খুনের দায়ে আওয়ামী লীগ নেত্রী ও সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাবেক এমপি পিনু খানের ছেলে বখতিয়ার আলম রনির যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে। বুধবার ঢাকা মহানগর দ্বিতীয় অতিরিক্ত দায়রা জজ মঞ্জুরুল ইমাম এই রায় ঘোষণা করে বলেন, ‘মামলার একমাত্র আসামির বিরুদ্ধে দুইজনকে হত্যার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। এই হত্যার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। কিন্তু ঘটনার সময়কার আসামির মানসিক ও শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে মৃত্যুদণ্ডের পরিবর্তে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হলো।’ রায়ে বিচারক আরও বলেন, মামলার সাক্ষ্য প্রমাণ থেকে স্পষ্ট হয় আসামির মেয়ে অসুস্থ ছিল। সে কারণে তার মানসিক অবস্থাও খারাপ ছিল। ঘটনার সময় আসামি মাদকাসক্তও ছিলেন। এছাড়া এই হত্যাকাণ্ডে কোন পূর্ব পরিকল্পনা ছিল না। হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে আসামি ঘটনাটি ঘটিয়েছেন। আদালতে উপস্থিত আসামি রনি রায়ের পর কোন কথা বলেননি। মামলায় প্রত্যক্ষদর্শী কোন সাক্ষী ছিল না উল্লেখ করে রায়ে বলা হয়, ঘটনার সময় আসামির ব্যক্তিগত গাড়িচালক ছিলেন। তিনি ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দিয়ে ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন। আবার আসামির পিস্তল পরীক্ষা করেও জানা গেছে, তার পিস্তল থেকেই গুলি করা হয়েছে এবং ভিকটিমরা ওই গুলিতেই মারা গেছেন। এ কারণেই আসামি রনি সাজা এড়াতে পারেন না। আসামির পক্ষে এ্যাডভোকেট কাজী নজিবুল্লাহ হিরু এবং রাষ্ট্রপক্ষে এসএম জাহিদ হোসেন মামলা পরিচালনা করেন। ’১৫ সালের ১৩ এপ্রিল রাত পৌনে দুটোর দিকে রাজধানীর নিউ ইস্কাটন রোডে নির্মাণাধীন ভবন এলএমজি টাওয়ারের সামনে আসামি রনি মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি থেকে এলোপাথাড়ি গুলি ছোড়ে। এতে দৈনিক জনকণ্ঠের সিএনজিচালিত অটোরিক্সাচালক ইয়াকুব আলী (৪০) ও রিক্সাচালক আবদুল হাকিম (২৫) আহত হন। পরে ঢাকা মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৫ এপ্রিল হাকিম ও ২৩ এপ্রিল ইয়াকুব মারা যান। রনির পিস্তলের গুলি ইয়াকুবের বুকে ও হাকিমের পিঠে ঢুকে নাভির নিচ দিয়ে বেরিয়ে যায়। হাকিমের মা মনোয়ারা বেগম ১৫ এপ্রিল রাতে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করে রমনা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ পরীক্ষা করে এবং প্রত্যক্ষদর্শীর জিজ্ঞাসাবাদ থেকে জানা যায়, রনিই ওই গুলি ছোড়ে। প্রথমে রমনা থানা পুলিশ এবং পরে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) মামলার তদন্ত করে। ডিএমপি পুলিশ সে বছরের ৩১ মে এলিফ্যান্ট রোডের বাসা থেকে রনিকে গ্রেফতার করে। পরে গাড়িচালক ইমরান ফকির ও রনির বন্ধু কামাল মাহমুদও আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দীতে দিয়ে জানান, রনি গাড়িতে মদ্যপ অবস্থায় ছিলেন এবং ইস্কাটন রোডে গাড়ি কিছুটা সময় থেমে থাকায় অধৈর্য হয়ে রনি তার পিস্তল দিয়ে এলোপাথাড়ি গুলি ছোড়ে। তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির উপ-পরিদর্শক দীপক কুমার দাস রনির পিস্তল জব্দ করে পরীক্ষা করিয়ে দেখতে পান মৃতদের শরীরে যে গুলি লেগেছে তা রনির পিস্তল থেকেই করা হয়েছিল। তিনি ’১৫ সালের ২১ জুলাই রনির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন। পরে মামলাটি ঢাকার চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে বিচারের জন্য প্রথমে মহানগর দায়রা আদালতে, সেখান থেকে অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতে যায়। ’১৬ সালের ৬ মার্চ রনির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন এবং ২৬ মে বিচার শুরু হয়। মামলায় ৩৭ সাক্ষীর মধ্যে ২৮ জন সাক্ষ্য দেন।
×