ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আরও ঐক্যবদ্ধ হোন

প্রকাশিত: ১০:৫১, ৩১ জানুয়ারি ২০১৯

আরও ঐক্যবদ্ধ হোন

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা, আইনের শাসন ও অব্যাহত আর্থসামাজিক উন্নয়নের মতো মৌলিক প্রশ্নে সকল রাজনৈতিক দল, শ্রেণী ও পেশা নির্বিশেষে সকলের ঐকমত্য গড়ে তোলার সম্মিলিত উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ। তিনি বলেন, জাতীয় ঐকমত্য ব্যতীত শান্তি ও সমৃদ্ধি স্থায়ী রূপ পেতে পারে না। গৌরবোজ্জ্বল স্বাধীনতা সমুন্নত ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুজ্জ্বল রাখতে দেশ থেকে সন্ত্রাস, মাদক, দুর্নীতি ও জঙ্গীবাদ সম্পূর্ণরূপে নির্মূলের মাধ্যমে শোষণমুক্ত সমাজ-প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলতে বাঙালী জাতিকে আরও ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, নতুন প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ, কর্মচঞ্চল, সুখী, সুন্দর ও উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ সকলের কাম্য। ইতিহাসের সাহসী সন্তানেরা লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে একটি স্বাধীন দেশ উপহার দিয়ে গেছেন। আমাদের দায়িত্ব এ দেশ ও জাতির অগ্রযাত্রাকে বেগবান করা। একাত্তরের শহীদদের কাছে আমাদের অপরিশোধ্য ঋণ রয়েছে। আসুন, ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে এবং দল-মত-পথের পার্থক্য ভুলে জাতির গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা ও দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার মধ্য দিয়ে আমরা লাখো শহীদের রক্তের ঋণ পরিশোধ করি। স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বুধবার একাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনে ভাষণ দিতে গিয়ে রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, নতুন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর জাতীয় জীবনে নতুন প্রাণ সঞ্চারিত হয়েছে। আশা করি বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারের গৃহীত উদ্যোগ আরও সুসংহত ও গতিশীল হবে। শান্তি, গণতন্ত্র, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির যে পথে আমরা হেঁটেছি, সেই পথেই বাংলাদেশকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। প্রায় এক ঘণ্টা ৪ মিনিটের বক্তব্যে রাষ্ট্রপতি বর্তমান সরকারের গত ১০ বছরের দেশব্যাপী ব্যাপক উন্নয়ন, অগ্রগতির কথা সবিস্তারে তুলে ধরেন। রাষ্ট্রপতি সংসদে তাঁর ভাষণের সংক্ষিপ্তসার তুলে ধরলেও তাঁর পুরো ভাষণটি পঠিত বলে গণ্য করা হয়। তিনি বলেন, ২০২০ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং ২০২১ সালে মধ্যআয়ের দেশ হিসেবে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করব। আমাদের দৃষ্টি ২০২১ সাল ছাড়িয়ে আরও সামনের দিকে, ২০৪১ সালে বিশ্বসভায় বাংলাদেশ একটি উন্নত-সমৃদ্ধ দেশের মর্যাদায় অভিষিক্ত হবে, এটাই জাতির প্রত্যাশা। আমি দৃঢ়ভাবে আশাবাদী, মানবাধিকার, সুশাসন ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিক রূপায়ন এবং সমাজের সকল স্তরে প্রত্যক্ষ জনসম্পৃক্তির মধ্য দিয়ে আমরা নির্ধারিত লক্ষ্যসমূহ অর্জনসহ একটি কল্যাণমূলক রাষ্ট্র গঠনে সক্ষম হব। চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বভার গ্রহণ করায় শেখ হাসিনাকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে এবং সার্চ কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী গঠিত বর্তমান নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানে সকল রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হয়, যা দেশে-বিদেশে সকল মহলে প্রশংসিত হয়েছে। বাংলাদেশের জনগণের বিপুল সমর্থনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠিত হয়। জনগণের এ রায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জননন্দিত নির্বাচনী ইশতেহার ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’-এর প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থনের বহির্প্রকাশ। সরকার নির্বাচনী ইশতেহারে বর্ণিত প্রতিশ্রুতিসমূহ বাস্তবায়নে বদ্ধপরিকর। এই সকল প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সকলকে ঐকান্তিকভাবে কাজ করতে হবে। মোঃ আবদুল হামিদ আরও বলেন, দেশে আইনের শাসন সুসংহত ও সমুন্নত রাখার ক্ষেত্রে সরকারের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনকে শক্তিশালী করা হয়েছে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ও তথ্য কমিশন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। কুখ্যাত ‘ইনডেমনিটি’ আইন বাতিল করে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা এবং যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার রায় কার্যকর করা হয়েছে। পলাতক আসামিদের স্বদেশে ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এ ছাড়া ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা ও হত্যা মামলা এবং বিডিআর হত্যাকা- মামলার বিচারকার্য সম্পন্ন হয়েছে এবং আদালত কর্তৃক দোষীদের বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি প্রদান করা হয়েছে। মাদক, জঙ্গীবাদ ও উগ্র সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরোধে সরকারের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি ব্যাপক সাফল্য পেয়েছে, যা বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হচ্ছে এবং জনজীবনে স্বস্তি ফিরে এসেছে। বর্তমান সরকারের গত ১০ বছরে দেশের ব্যাপক অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির কথা তুলে ধরে রাষ্ট্রপতি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার ‘রূপকল্প-২০২১’, দিনবদলের সনদ এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ার লক্ষ্যে নিরন্তর প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। বাংলাদেশ আর্থসামাজিক উন্নয়নের সকল সূচকে রূপকল্পে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চাইতে বেশি সাফল্য অর্জন করেছে। বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের শ্রেণীতে উত্তরণের সকল যোগ্যতা অর্জন করেছে। বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের এ অগ্রযাত্রা বিপুলভাবে প্রশংসিত হচ্ছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল। তিনি বলেন, সরকারের দক্ষ পরিচালনায় অর্থনীতির সকল সূচকে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। বিগত ২০১৫-১৬ অর্থবছর থেকে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৭ শতাংশের উপরে রয়েছে। চূড়ান্ত হিসাব অনুযায়ী ২০১৭-১৮ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ। বাংলাদেশ আজ জিডিপি ক্রয়ক্ষমতার ভিত্তিতে বিশ্ব-অর্থনীতিতে ৩৩তম এবং জিডিপি’র আকারের ভিত্তিতে ৪১তম। বর্তমানে মাথাপিছু জাতীয় আয় ১ হাজার ৭৫১ মার্কিন ডলার। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ওপরে। অপরদিকে মূল্যস্ফীতির হার ৫ দশমিক ৪ শতাংশে নেমে এসেছে। রাষ্ট্রপতি বলেন, বর্তমানে জাতীয় বাজেটের আকার এবং রাজস্ব আহরণের পরিমাণ অনেকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। জাতীয় বাজেট বর্তমান অর্থবছরে ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা এবং এডিপি ১ লাখ ৭৩ হাজার কোটি টাকায় নির্ধারণ করা হয়েছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে রাজস্ব আদায় হয়েছে ২ লাখ ৩০ হাজার ৯৬৫ কোটি টাকা এবং চলতি অর্থবছরে ৩ লাখ ৩৯ হাজার ২৮০ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ক্রমবর্ধমান রাজস্ব আহরণের মাধ্যমে নিজস্ব অর্থে আমরা পদ্মা সেতু, বিভিন্ন নদীর ওপর সেতু এবং ফ্লাইওভার নির্মাণসহ অনেক বৃহৎ প্রকল্প সফলভাবে বাস্তবায়ন করছি। আর্থিক ও ব্যাংকিং খাতের উন্নয়নের কথা তুলে ধরে মোঃ আবদুল হামিদ বলেন, আর্থিক অন্তর্ভুক্তি ও ব্যাংকিং খাতের উন্নয়নে ব্যাপক সংস্কার সাধিত হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- ইএফটি ব্যবহারের মাধ্যমে সরকারী কর্মচারীদের বেতন-ভাতা এবং সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীর আওতায় ভাতাদি প্রদান; অনলাইন ব্যাংকিং; মোবাইল ব্যাংকিং; ১ কোটি ৭৫ লাখ প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য ১০ টাকায় ব্যাংক হিসাব খোলা ইত্যাদি। ব্যাংক ব্যবস্থায় ঋণ প্রদানের সুদের হার কাঙ্খিত পর্যায়ে হ্রাস পেয়েছে। সুদের হারের নিম্নমুখী প্রবণতা বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে। রাষ্ট্রপতি বলেন, বিগত ১০ বছরে দেশে-বিদেশে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এ সময়ে দেশের অভ্যন্তরে মোট ১ কোটি ৩৪ লাখের অধিক এবং বিদেশে প্রায় ৮০ লাখ কর্মীর কর্মসংস্থান হয়েছে। তন্মধ্যে বিগত ৫ বছরে ৩৪ লাখ ৮২ হাজার কর্মী বিদেশে গমন করায় প্রায় ৭৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিটেন্স অর্জিত হয়েছে। এ সময়ে বিভিন্ন দেশে ১৯টি শ্রম উইং খোলা হয়েছে। রাষ্ট্রপ্রধান আবদুল হামিদ বলেন, অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি দারিদ্র্যবিমোচন ও সামাজিক উন্নয়নেও সরকারের অর্জন ছিল লক্ষ্যণীয়। ১৩০টি সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীর আওতায় ৭৬ লাখ ৩২ হাজার ব্যক্তি বা পরিবারকে সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। এই খাতে বরাদ্দ চলতি অর্থবছরে ৬৪ হাজার ১৭৭ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে, যা বাজেটের ১৩ শতাংশের বেশি। ফলে দারিদ্র্যের হার ২০১০ সালের ৩১ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ২০১৮ সালে ২১ দশমিক ৮ শতাংশে এবং হতদরিদ্রের হার ১৭ দশমিক ৬ শতাংশ থেকে ১১ দশমিক ৩ শতাংশে হ্রাস পেয়েছে। এ সময়ে আয়-বৈষম্যের হারও সন্তোষজনকভাবে হ্রাস পেয়েছে। রাষ্ট্রপতি তার ভাষণে আরও বলেন, গত দশ বছরে রফতানি আয় প্রায় চারগুণ বৃদ্ধি পেয়ে ৪১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। যুগোপযোগী ‘রফতানি নীতি ২০১৮-২১’ প্রণীত হয়েছে। বর্তমানে ১৯৯টি দেশে ৭৪৪টি পণ্য রফতানি হচ্ছে। তৈরি পোশাক শিল্পখাত থেকে বাংলাদেশের রফতানি আয়ের ৮০ শতাংশের বেশি অর্জিত হচ্ছে। এ শিল্পে ৪০ লাখ শ্রমিক সরাসরি কাজ করে, যার প্রায় ৬০ ভাগ স্বল্প-সুবিধাভোগী নারী। দেশের রফতানি আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে নতুন বাজার সৃষ্টি এবং পণ্য বহুমুখীকরণের জন্য ২ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত নগদ সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। তিনি বলেন, অতীতের তুলনায় উল্লেখযোগ্য হারে দেশে বিনিয়োগ বেড়েছে। ডিসেম্বর ২০১৮ পর্যন্ত ইপিজেডসমূহে ক্রমপুঞ্জিত প্রকৃত বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ৪০ হাজার ৫৭৫ কোটি টাকা এবং রফতানির পরিমাণ ৫ লাখ ৯১ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। এ সময় ইপিজেডসমূহে মোট ৪৭৪টি শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হয়েছে এবং ৫ লাখ ৮ হাজার ৬৮৯ জন বাংলাদেশী শ্রমিকদের কর্মসংস্থান হয়েছে। বিনিয়োগ-বৃদ্ধি উৎসাহিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠন, বিভিন্ন প্রকার রফতানি প্রণোদনা প্রদান, ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালুসহ ইজ অব ডুইং বিজনেস-এর জন্য সর্বাত্মক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। জানুয়ারি ২০১৪ হতে ডিসেম্বর ২০১৮ মেয়াদে বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষে প্রস্তাবিত মোট বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ৮৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। রাষ্ট্রপতি বলেন, বাংলাদেশ খাদ্যশস্য উৎপাদনে শুধু স্বয়ংসম্পূর্ণতাই অর্জন করেনি বরং উদ্বৃত্ত খাদ্যশস্যের দেশ হিসাবে বিশ্বে পরিচিতি লাভ করেছে। বাংলাদেশ খাদ্যশস্য উৎপাদনে বিশ্বে দশম, চাল উৎপাদনে চতুর্থ, সবজি উৎপাদনে তৃতীয়, আম উৎপাদনে সপ্তম এবং আলু উৎপাদনে অষ্টম স্থান অর্জন করেছে। দানাদার খাদ্যশস্য উৎপাদন বর্তমানে ৪ কোটি ১৩ লাখ ২৫ হাজার মেট্রিকটনে উন্নীত হয়েছে। ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের বীজ, সার ও অন্যান্য উপকরণ সহায়তাবাবদ বিগত ৫ বছরে ৩২ হাজার ৪৯০ কোটি ৫১ লাখ টাকা এবং প্রণোদনা ও কৃষি পুনর্বাসনে ৫৮৭ কোটি ৮৪ লাখ টাকা বিতরণ করায় ৩৭ লাখ ৭৪ হাজার ৬৮৮ জন কৃষক উপকৃত হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ মুক্ত জলাশয়ে মৎস্য আহরণে বিশ্বে তৃতীয় স্থানে উন্নীত হয়েছে। ইতোমধ্যে দেশ মাছ ও মাংস উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে এবং শীঘ্রই ডিম ও দুধ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা লাভ করতে সক্ষম হবে। রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, সরকারের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ২০১২ ও ২০১৪ সালে মিয়ানমার এবং ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা মামলার নিষ্পত্তির ফলে বাংলাদেশ সর্বমোট ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটার সমুদ্র অঞ্চল লাখ করেছে, যা মূল ভুখ-ের ৮০ দশমিক ৫১ ভাগ। এ রায় দুটির ফলে ২০০ নটিক্যাল মাইলের বাইরে মহীসোপানে বাংলাদেশের অবাধ প্রবেশাধিকার সুরক্ষিত হয়েছে এবং গভীর সমুদ্রে মৎস্য আহরণ, সমুদ্রের তলদেশ থেকে প্রাকৃতিক সম্পদ অনুসন্ধান ও উত্তোলনের মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে টেকসই ও গতিশীল করার এক নতুন দিগন্তের উম্মোচন ঘটেছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কে রাষ্ট্রপতি বলেন, সরকার সামরিক বাহিনীর উন্নয়নে ফোর্সেস গোল-২০৩০ প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করছে। সিলেট, বরিশাল এবং কক্সবাজারের রামুতে তিনটি সেনানিবাস প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। তাছাড়া কিশোরগঞ্জ জেলার মিঠামইন উপজেলায় নতুন ব্যাটালিয়ান, পদ্মা সেতু কম্পোজিট বিগ্রেটসহ ৩টি পদাতিক ডিভিশন গঠন করা হয়েছে। সেনাবাহিনীর আধুনিকায়নে নতুন প্রজন্মের ট্যাংক, আধুনিক ট্যাংক বিধ্বংসী অস্ত্র, অত্যাধুনিক হেলিকপ্টার, লোকেটিং রাডার ইত্যাদি সংযোজন করা হয়েছে। বৈদেশিক সম্পর্ক রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ বলেন, বাংলাদেশের ভূখ-ের জঙ্গীবাদ, আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ এবং বিচ্ছিন্নতাবাদী কোন শক্তিকে প্রশ্রয় দেয়া হচ্ছে না। মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা নির্যাতনের শিকার ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে নিজ দেশে আশ্রয় দিয়ে প্রধানমন্ত্রী মানবতার যে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তা বিশ্বের ইতিহাসে বিরল। এই বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গার জন্য প্রয়োজনীয় মানবিক সহায়তার সংস্থান করাসহ তাদের নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করার প্রক্রিয়ায় সরকার মানবিক কূটনীতির সফল ও বাস্তবসম্মত প্রয়োগের এক যুগান্তকারী উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। সরকারের নারী উন্নয়নের কথা তুলে ধরে রাষ্ট্রপতি বলেন, নারীর ক্ষমতায়নে জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত আসনসংখ্যা বাড়িয়ে ৫০টি করা হয়েছে। ‘যৌতুক নিরোধ আইন, ২০১৮’ এবং ‘বাল্য বিবাহ নিরোধ আইন, ২০১৭’ প্রণয়ন করা হয়েছে। গত ১০ বছরে প্রায় ৩৪ লাখ নারীকে বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। আটটি কর্মজীবী মহিলা হোস্টেল এবং ৫৮টি ডে- কেয়ার সেন্টার চালু করা হয়েছে। পথ শিশু, অটিস্টিক ও বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের জন্য পুনর্বাসন কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। সব শেষে রাষ্ট্রপতি দল-মত-পথের পার্থক্য ভুলে জাতির গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা ও দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার মধ্য দিয়ে লাখো শহীদের রক্তের ঋণ পরিশোধ করার জন্য দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান।
×