ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সম্মেলনের ৮ মাসেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি পেল না ছাত্রলীগ

প্রকাশিত: ১১:০৫, ৩০ জানুয়ারি ২০১৯

সম্মেলনের ৮ মাসেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি পেল না ছাত্রলীগ

বিভাষ বাড়ৈ/মুনতাসির জিহাদ ॥ প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার হাত ধরে সম্মেলনের মাধ্যমে অনেকটা চমক দিয়েই ৮ মাস আগে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের শীর্ষ পদে এসেছিলেন দুই নেতা। একই অবস্থা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কমিটিরও। মেধাবী ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ পূর্ণাঙ্গ নেতৃত্ব গঠনে ইতিহাসের সবচেয়ে আলোচিত কঠোর যাচাইবাছাইও হয়েছিল অসংখ্য আগ্রহী নেতার। কিন্তু শীর্ষ নেতৃত্বে যারা আসেন তারা দীর্ঘ ৮ মাসেও দিতে পারেননি পূর্ণাঙ্গ কমিটি। কবে হবে কমিটি- উত্তর না পেয়ে হতাশ নেতাকর্মীরা। এতে কেন্দ্র, এমনকি ঢাবি নেতৃত্বেও বাড়ছে দূরত্ব। সংশ্লিষ্টদের আশঙ্কা, সমস্যা জিইয়ে রাখলে মূল্য দিতে হতে পারে আসন্ন ডাকসু নির্বাচনে! অবশ্য নেতাকর্মীদের আশ্বস্ত করে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বলছে, ডাকসু নির্বাচনের আগেই অর্থাৎ ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহেই ঘোষণা করা হবে সংগঠনের পূর্ণাঙ্গ কমিটি। আর ঢাবি নেতৃবৃন্দ বলছেন, ঢাবি কমিটির জন্য আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে নেতাকর্মীদের কাছ থেকে জীবন বৃত্তান্ত বা সিভি আহ্বান করা হবে। পূর্ণাঙ্গ কমিটি হলে ডাকসু নির্বাচনে শক্ত সাংগঠনিক ভিত্তি নিয়ে ছাত্রলীগ কাজ করতে পাববে বলে মনে করছেন কেন্দ্র ও ঢাবি ছাত্রলীগ নেতারা। এর আগে ছাত্রলীগে বহু বছরের সিন্ডিকেটের দাপট, অনুপ্রবেশকারী, অপরাধীদের সদস্যপদ গ্রহণসহ নানা বিতর্কের মধ্যে গত বছর নির্বাচনের পরিবর্তে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার মাধ্যমে সংগঠনের নেতৃত্ব নির্ধারণের দাবি উঠেছিল। বিষয়টিতে ইতিবাচক সাড়াও দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মেলন হয় গত বছরের ২৯ এপ্রিল। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তরের সম্মেলন হয় যথাক্রমে ২৫ ও ২৬ এপ্রিল। এরপর ১১ ও ১২ মে নতুন নেতৃত্ব নির্ধারণে ছাত্রলীগের দুই দিনব্যাপী ২৯তম জাতীয় সম্মেলন হয়। নির্বাচন না হলেও এবার ছাত্রলীগের কমিটি গঠনের লক্ষ্যে আগ্রহীদের কঠোর ও ব্যাপক তথ্য অনুসন্ধানের প্রক্রিয়া ছিল আলোচিত ঘটনা। খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশেষ উদ্যোগে সরকারের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা ছাড়াও নানা মাধ্যমে অনুসন্ধান চালানো হয় নেতৃত্বে আগ্রহী প্রায় আড়াই শ’ নেতাকর্মীর। তথ্য যাচাইবাছাই করা হয় আবেদন করেননি এমন নেতৃত্ব প্রত্যাশী নেতাকর্মীদেরও। মূলত প্রিয় নেত্রীর হাত দিয়ে তাদের কমিটি হচ্ছেÑ এই আশায় অতীতের যে কোন সময়ের তুলনায় এবার ছাত্রলীগের বিভিন্ন পদে আসার প্রতি আগ্রহ অনেক বেশি লক্ষ্য করা গেছে। নেত্রী পদ দিচ্ছেন এমন তথ্যে নেতাকর্মীদের আস্থাও এবার অনেক বেশি লক্ষ্য করা যায়। অবস্থার মধ্যে গত বছরের ৩১ জুলাই রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনকে সভাপতি এবং গোলাম রাব্বানীকে সাধারণ সম্পাদক মনোনীত করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই দিন আওয়ামী লীগ সভাপতির ওপর অর্পিত ক্ষমতাবলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের কমিটিও অনুমোদন করেন। কেন্দ্রীয় সভাপতি সাধারণ সম্পাদক ছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখার সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করা হয় সেদিন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি হয়েছেন সঞ্জিত চন্দ্র দাস, সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে সাদ্দাম হোসাইনকে। কেন্দ্রীয় দুই নেতার মতো তারাও ঢাবির আইন বিভাগের ছাত্র। ঢাকা মহানগর-উত্তরের সভাপতি হয়েছেন মোঃ ইব্রাহিম এবং সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন সাইদুর রহমান হৃদয়। ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি হয়েছেন মেহেদী হাসান, সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন মোঃ জোবায়ের আহমেদ। এরপর থেকেই কেন্দ্রসহ চার ইউনিটির পূর্ণাঙ্গ কমিটির জন্য শুরু হয় কয়েক হাজার নেতাকর্মীর অপেক্ষা। সেই অপেক্ষা যেন শেষই হচ্ছে না। সেই থেকেই নানান প্রশ্ন, সিভি দিয়ে পরীক্ষা দিলাম, ফল প্রকাশ হবে কবে? পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা হচ্ছে শীঘ্রই। গত ৮ মাসে এমন খবর হয়েছে বহুবার। কিন্তু কমিটি ঘোষণা হয়নি আজও। সবাই বলছেন, কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব সক্রিয় হলে বহু আগেই দিতে পারতেন কমিটি। কারণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বহু আগেই আগ্রহী প্রার্থীদের বিষয়ে শেষ করেছেন অনুসন্ধান। যাচাই বাছাই করে বহু আগেই প্রার্থীদের তালিকা করা হয়েছে। ফলে সেই তালিকা দেখেও দ্রুত কমিটি দেয়া সম্ভব ছিল কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের। সাবেক ছাত্রলীগ নেতা যারা এখন আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ পদে আছেন তাদের অনেকেই বলছেন, খোদ আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাও কয়েকবার ছাত্রলীগ নেতাদের দ্রুত পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের জন্য তাগিদ দিয়েছেন। তবু আগ্রহী নেতাকর্মীদের জন্য আসেনি কোন সুখবর। বরং পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে বিলম্ব হওয়ায় নেতাকর্মীদের মাঝে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে ঢাবিসহ দেশের উল্লেখযোগ্য ক্যাম্পাসগুলোতে। নেতাকর্মীদের মধ্যে চরম হতাশা ও ক্ষোভ বিরাজ করছে। সাংগঠনিক কার্যক্রমেও এক ধরনের বিশৃঙ্খল অবস্থা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কেন্দ্রীয় নেতাদের আগের মতো ক্যাম্পাসে না পাওয়া, বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের নতুন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সভাপতি-সেক্রেটারির জন্য আলাদা অফিস কক্ষ থাকার পরেও সেখানে কালেভদ্রে হাজির হওয়া, ঢাবি ইউনিটির সঙ্গে সংগঠনের কাজে চরম সমন্বয়হীনতায় নষ্ট হচ্ছে ঐতিহাসিক এ সংগঠনের শৃঙ্খলা। কেন্দ্রীয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের মধ্যে মতবিরোধ দৃশ্যমান হয়ে ওঠার ঘটনা চিন্তার বিষয় বলে উল্লেখ করছেন নেতাকর্মীরা। এরই মধ্যে বহুবার প্রকাশ্যেই বিরোধের আভাস লক্ষ্য করা গেছে নেতাদের সামনেই। এজন্য ঢাবি নেতাকর্মীরা দায়ী করছেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কর্তৃত্মপরায়ণ মনোভাবকে। যদিও কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, এমন ধারণা ঠিক নয়। ইতিহাসে সব সময়ই দেখা গেছে, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ ও ঢাবি ছাত্রলীগ সমন্বিতভাবে কেন্দ্রীয় কর্মসূচী পালন করে। অথচ নতুন কমিটি গঠনের পর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কিছু কর্মসূচীতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতাদের উপস্থিতি লক্ষ করা যায়নি। আবার কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের বেশকিছু কর্মসূচীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক আসেননি। সংগঠনের সদ্যসমাপ্ত প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানেও বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে বক্তব্য দিতে না দেয়ায় দূরত্ব প্রকাশ্য হয়েছে। যদিও নেতাকর্মীরা আশা করছেন, পূর্ণাঙ্গ কমিটি হলে অনেক সমস্যারই সমাধান হয়ে যাবে। ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রের ১১(খ) ও (গ) ধারায় বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের কার্যকাল দুই বছর। এর মধ্যে সম্মেলন না হলে সংসদের কার্যকারিতা থাকবে না। বিশেষ বা জরুরী পরিস্থিতিতে বর্ধিত সভায় অনুমোদনের মাধ্যমে কমিটি তিন মাসের জন্য সময় বাড়াতে পারে। এছাড়া গঠনতন্ত্রে জেলা ইউনিটগুলোর মেয়াদ রাখা হয়েছে এক বছর। সেই হিসেবে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কমিটি এরই মধ্যে নির্ধারিত সময়ের একটা অংশ পার করে ফেলেছে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ছাড়াই। সাধারণত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতাকর্মীদের বড় একটি অংশ কেন্দ্রীয় কমিটিতে চলে আসেন। কিন্তু এবার কেন্দ্রীয় কমিটি না হওয়ায় ঢাবি কমিটিও আটকে আছে। ঢাকা মহানগরের দুই গুরুত্বপূর্ণ শাখারও একই সঙ্কট। ফলে ভুগতে হচ্ছে দেশের সব ইউনিটকেই। এরই মধ্যে সামনে চলে এসেছে ডাকসু নির্বাচন। আগামী ১১ মার্চ এ নির্বাচনে ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্র ফ্রন্ট, ছাত্র ফেডারেশন, এমনকি কোটা আন্দোলনের নামে সক্রিয় নেতারাও নির্বাচনের জন্য সংগঠনের হয়ে কাজ শুরু করেছেন। কমিটি থাকায় বাম সংগঠনগুলো ইতোমধ্যেই হলগুলোতে আগ্রহী ও যোগ্য নেতাদের বাছাই করা শুরু করেছে। ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক লিটন নন্দী জনকণ্ঠকে বলছিলেন, তারা হলে হলে ইতোমধ্যেই কাজ শুরু করেছেন। কারা নির্বাচন করতে পারেন। কারা প্রার্থী হবেন আমরা কাজ করছি। ছাত্রলীগে সাংগঠনিক কাজের চেহারা এখনও খুব একটা দৃশ্যমান হয়নি। তবে অনেকেই মাঠে নেমে পড়েছেন। তার মধ্যে ছেলেদের সঙ্গে আছেন মেয়েরাও। তবে নেতাকর্মীদের আশা নির্বাচনের তফসিল ও কমিটি গঠনের হলে ছাত্রলীগের ইতিবাচক অবস্থান নিয়ে সামনে আসতে সময় লাগবে না। ডাকসু নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ পদে প্রার্থী হওয়ার কথা ইতোমধ্যেই জানান দিয়েছেন ছাত্রলীগের গত কমিটির উপ-অর্থ বিষয়ক সম্পাদক ও কবি সুফিয়া কামাল হলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক তিলোত্তমা সিকদার। তিনি বলছিলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনা দেশের মানুষ, দেশের তরুণ সমাজের চাওয়া অনুসারে সব সময় কাজ করেন। দেশের জন্য যেটা মঙ্গল সেটাই তিনি করেন। এবারও আমরা দেখছি ডাকসু নির্বাচনের জন্য আমাদের প্রিয় নেত্রী কতটা আন্তরিক। আমি আশাবাদী জননেত্রীর ইতিবাচক অবস্থানের কারণে আজ যে নির্বাচন হতে যাচ্ছে সেখানে আমাদের প্রাণের সংগঠনই নেতৃত্ব নিয়ে সামনে আসবে। তবে ছাত্রলীগের প্রতিটি নেতাকর্মীই মনে করছেন, ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রলীগের প্যানেল নির্ধারণ ও বিজয়ী করার জন্য কেন্দ্র, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাবির হলগুলোয় নতুন কমিটি করে তা পূর্ণাঙ্গ করার কোন বিকল্প নেই। অন্যথায় হল সংসদের প্যানেল নির্ধারণসহ সব ক্ষেত্রেই ছাত্রলীগকে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হতে পারে। চ্যালেঞ্জ স্বীকার না করলেও নতুন কমিটির অপেক্ষায় থাকা সাবেক কেন্দ্রীয় কমিটির কর্মসূচী ও পরিকল্পনা সম্পাদক রাকিব হোসেন বলছিলেন, হ্যাঁ কমিটি না থাকায় সাংগঠনিকভাবে তো কাজ এগোয় না। ডাকসু নির্বাচন সামনে চলে এসেছে। কমিটি না থাকায় নেতাকর্মীদের মধ্যে তো একটা হতাশাই বিরাজ করছে। বিষয়টি নিশ্চয়ই আমাদের নেতারা চিন্তা করছেন। আশা করি তারা ইতিবাচকভাবেই এগোচ্ছেন। পূর্ণাঙ্গ কমিটি হলে ডাকসু নির্বাচনে নিশ্চয়ই আমাদের প্রিয় সংগঠন অনেক বেশি একতাবদ্ধ হয়ে এগোতে পারবে। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহ-সভাপতি মেহেদী হাসান রনি বলেন, শুধু সভাপতি-সেক্রেটারি নির্ভর একটি কেন্দ্রীয় কমিটি দীর্ঘদিন এভাবে চলতে পারে না। যেসব কর্মী দীর্ঘদিন ধরে ছাত্রলীগের সঙ্গে আছে বিভিন্ন কমিটির অধীনে, তাদের নিয়ে সাংগঠনিক কমিটির মাধ্যমে সংগঠনকে শক্তিশালী করতে হবে। পূর্ণাঙ্গ কমিটি না করে, মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সম্মেলন না দিয়ে, শুধু দু’জন সভাপতি সাধারণ সম্পাদকের মাধ্যমে সংগঠন চললে তা ভাল দেখায় না। এতে সংগঠন শক্তিশালী হয় না। সংগঠন অনেকটা মানবদেহের মতো। বর্তমানে শুধু মাথা আছে, শরীরের আর কোন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ না থাকার মতো। তাছাড়া মাদক মুক্ত সংগঠন গড়ে তুলতে পদ প্রত্যাশীদের ড্রাগ টেস্ট করে কমিটি দিলে খুবই ভাল হয়। কবি জসীম উদ্দীন হল ছাত্রলীগের সভাপতি সৈয়দ মোঃ আরিফ হোসেন বলেন, আমাদের জাতির পিতা সর্বদা সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী সংগঠনের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করতেন। আর এই উপলব্ধিবোধ থেকেই তিনি একে একে ছাত্রলীগ এবং আওয়ামী লীগের সৃষ্টি করেছেন। আমি বিশ্বাস করি, জাতির পিতার কন্যার তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটিও সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী। তবে সংগঠন সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী হওয়ার পূর্বশর্তই হচ্ছে অতিদ্রুত পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা। সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের উপর আস্থা রাখি যে, উনারা শীঘ্রই বাংলাদেশ ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করবেন, যাতে সব নেতাকর্মী আনন্দ আর উচ্ছ্বাসের সঙ্গে ডাকসু নির্বাচনে মনোনিবেশ করতে পারে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সঞ্চিত চন্দ্র দাস বলেন, আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেয়ার জন্য সিভি নেয়ার পরিকল্পনা করেছি। হয় তো সপ্তাহ খানেকের প্রেস রিলিজের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভি আহ্বান করব। তবে তিনি দীর্ঘ আট মাস পরেও কেন্দ্রীয় কমিটি পূর্ণাঙ্গ না হওয়ার বিষয়ে কোন মন্তব্য করেননি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসাইন বলেন, আশা করি খুব দ্রুত কেন্দ্রীয় কমিটি পূর্ণাঙ্গ হবে। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির জন্য আমাদের সব প্রস্তুতি শেষ। আমরা পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিয়ে দেব। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী বলেন, আমরা সর্বোচ্চ তিন থেকে চার দিনের মধ্যে কমিটি দিয়ে দিচ্ছি। সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। শুধু আপার (প্রধানমন্ত্রী) সঙ্গে আলোচনা করেই কমিটি ঘোষণা করব। ডাকসু নির্বাচনের আগে কমিটি ঘোষণা করলে তা ইতিবাচক ফল দেবে মনে করি। সবার মধ্যে স্বতঃস্ফূর্ততা কাজ করবে। আশা করি ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহেই কমিটি দিয়ে দিতে পারব। ডাকসুর জন্য সংগঠনকে শক্তিশালী করার কথা উল্লেখ করে সাবেক কেন্দ্রীয় কমিটির উপ স্কুলছাত্র বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার বৈদ্য বলছিলেন, ডাকসুর জন্য পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা অবশ্যই জরুরী। নেতৃবৃন্দ নিশ্চয়ই বিষয়টি বিবেচনা নিয়ে কাজ করছেন। আশা করি দ্রুতই সুখবর আসবে। এদিকে এতদিন হতাশ করলেও আশার কথা শোনালেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী। তিনি বলেন, আমাদের জন্য কমিটি আসলে দেরি হচ্ছে এমনটা নয়। আমরা কাজ করছি। বলতে পারেন কাজ গোছাচ্ছি। নেত্রীর সঙ্গে দুই-চার দিনের মধ্যেই দেখা করে আমরা কমিটি দিয়ে দেব। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হ্যাঁ নেত্রীর তালিকা আমাদের কাজকে সহজ করেছে। আগামী মাস অর্থাৎ ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহেই আমরা কমিটি ঘোষণা করে দেব। আমরাও মনে করি, পূর্ণাঙ্গ কমিটি হলে ডাকসু নির্বাচনেও আমাদের সংগঠন আরও শক্তিশালী হয়ে অংশ নিতে পারবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কমিটিও হচ্ছে বলে জানালেন সভাপতি সঞ্জিত চন্দ্র দাস। তিনি বলছিলেন, কেন্দ্রীয় কমিটির বিষয় আমরা বলতে পারি না। তবে আগামী ৭ দিনের মধ্যে আমরা কমিটির জন্য সিভি আহ্বান করব। দ্রুতই কমিটি হবে। যা নির্বাচনেও সংগঠনকে শক্তিশালী করবে। সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসাইন বলেন, খুব দ্রুত কমিটি হবে। আমরা কাজ করছি। কমিটি হলে ডাকসু নির্বাচনে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আশা করছেন নির্বাচনে ছাত্রলীগের সম্ভাব্য প্রার্থীদের অন্যতম একজন সাদ্দাম হোসাইন।
×