ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

লোক কারুশিল্প মেলা সোনারগাঁওয়ে

বাহারি রং ও কারুকাজে ভরপুর, হস্তশিল্প পণ্যের সমাহার

প্রকাশিত: ১১:০২, ৩০ জানুয়ারি ২০১৯

বাহারি রং ও কারুকাজে ভরপুর, হস্তশিল্প পণ্যের সমাহার

মোঃ খলিলুর রহমান ॥ শিশু ইরাম ও ইন্নি গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য নাগরদোলাসহ বিভিন্ন রাইডে চড়ে হইহুল্লোড়ে মেতে উঠেছিল সারাদিন। নাগরদোলার আনন্দ ছুঁইয়ে গ্রাম বাংলার আরেক ঐতিহ্য বায়োস্কোপ দেখে আনন্দে তারা বেশ উদ্বেলিত। শুধু ইরাম বা ইন্নিই নয়, রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আগত শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণী, বৃদ্ধ-বৃদ্ধাসহ নানা বয়সী লোকজন বিনোদন পেতে লেকের নৌকায় ভ্রমণ, সারাদিন ছুটাছুটি, হারিয়ে যাওয়া লোকজগান উপভোগ করা, বাহারি রঙের ও ডিজাইনের হস্তশিল্পের তৈজসপত্রের সমাহারে মুগ্ধ হয়েছেন। দর্শনার্থীরা মাটির তৈরি ও কারুকাজের পুতুল, হাঁড়ি, সাজি, পক্ষসাজি, কড়ই, চুলো ও ঢাকনাসহ নানান জিসিনপত্র কিনতে পেরেও আনন্দিত হয়েছেন। কোলাহলে ব্যস্ত নগরী পেরিয়ে গ্রামের ঐতিহ্যের খোঁজে ও একগুচ্ছ বিনোদন পেতে দলে দলে ছুটে আসেন লোক কারুশিল্প মেলা ও লোকজ উৎসবে। বিনোদন পিয়াসীরা লোকজ মেলায় ঘুরে ঘুরে ফিরে যান সেই শৈশব স্মৃতির মণিকোঠায়। কিছুক্ষণের জন্য হারিয়ে যান গ্রাম বাংলার সেই অতীত স্মৃতির পাতায়। নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে ঐতিহ্যবাহী বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনে ১৫ জানুয়ারি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ম্যাসব্যাপী শুরু হয়েছে লোক কারুশিল্প মেলা ও লোকজ উৎসব। যা শেষ হবে আগামী ১৩ ফেব্রুয়ারি। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের মধ্যে মেলা প্রাঙ্গণটি উন্মুক্ত থাকবে। গত ২৫ ও ২৬ জানুয়ারি সোনারগাঁও জাদুঘরে হইহুল্লোড়, হৈ চৈ, ছুটাছুটিতে মেতে ছিল দেশী-বিদেশী নানা বয়সী পর্যটক। মেলার স্টলগুলো ঘুরে ঘুরে দেখে বেশ মুগ্ধ হয়েছেন তারা। পর্যটকরা সারাদিন কেনা-কাটায় ব্যস্ত সময় পার করেছেন। গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী ও হারাতে বসা বিভিন্ন তৈজসপত্র কিনে ধন্যও হয়েছেন। মেলা রয়েছে বাংলার সোনালি আঁশ বলে পরিচিত পাটের তৈরি বিভিন্ন ব্যাগ, নক্সা করা জামদানি শাড়ি, থ্রি পিস, পাঞ্জাবির কাপড়, খেলনা, শো-পিসসহ নানান ধরনের উপকরণ। বেশ জমে উঠেছে কারুশিল্প মেলা। প্রতিবছরই শীত মৌসুমে শুরু হয় ম্যাসব্যাপী লোককারুশিল্প মেলা ও লোকজ উৎসব। ২৫ জানুয়ারি দিনভর দেশী-বিদেশী পর্যটকদের উপচেপড়া ভিড় ছিল জাদুঘর প্রাঙ্গণে। বিনোদনের খোঁজে ছুটে আসা পর্যটকরা জাদুঘরের লেকে নৌকাভ্রমণ থেকে শুরু করে বিভিন্ন রাইডসে চড়ে হারিয়ে গিয়েছিল সেই গ্রামবাংলার স্মৃতির মণিকোঠায়। দর্শনার্থীরা হারিয়ে যাওয়া লোকজ গান উপভোগ করেন, নিজেদের নিয়ে মোবাইলে সেলফি তোলেন ও একসঙ্গে পরিবারের ছবি ক্যামেরাবন্দী করেন, জামদানি শাড়ি ও বিভিন্ন স্টলে রাখা কারুকাজের নানা ঐতিহ্যের জিনিসপত্র কেনেন। সারাদিন তাদের আনন্দের কমতি ছিল না। মেলার প্রধান ফটক পার হয়ে একটু গেলেই চোখে পড়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য। এ মহান মানুষটির ভাস্কর্যের সামনে দাঁড়িয়ে সেলফি তুলতে দেখা গেছে পর্যটকদের। মেলার প্রশাসনিক ভবন পেরিয়ে উত্তর দিকে যেতেই চোখে পড়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সর্ব কনিষ্ঠ সন্তান শেখ রাসেলের ভাস্কর্য। শেখ রাসেলের ভাস্কর্যের সামনে দাঁড়িয়েও শিশু-কিশোরদের সেলফি তুলতে দেখা গেছে। রাজধানী ঢাকা থেকে এ মেলায় পরিবার নিয়ে ঘুরতে এসেছেন মোঃ ইউসুফ। তিনি তার দুই শিশু সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে মেলার বিভিন্ন স্টল ঘুরে ঘুরে দেখেছেন। তিনি বলেন, এ মেলায় আসলে গ্রামের ঐতিহ্যের কথা মনে পড়ে যায়। গ্রামের ছোট বয়সের মার্বেল খেলা, ডাঙ্গুলির মতো ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন খেলার কথাও মনে পড়ে যায়। তবে মেলায় কোন পিকনিকে স্পট না থাকায় দর্শনার্থীদের সমস্যা হচ্ছে। খাবারের জন্য বাইরে যেতে হচ্ছে। আবারও টিকেট কেটে মেলায় ঢুকতে হচ্ছে। এতে খরচের পরিমাণও বেড়ে যায়। সরকারী চাকরিজীবী মাহবুব মিয়া শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় বিনোদনের জন্য পুরো পরিবার নিয়ে লোকজ মেলায় বেড়াতে যান। তিনি তার এক সন্তানকে নাগর দোলায় উঠিয়েছেন। নাগরদোলায় চড়তে ত্রিশ টাকা গুনতে হয়। ত্রিশ টাকায় নাগরদোলায় একবার ১২ চক্কর দেয়। পাশের একটি রাইডসে লেখা আছে ‘আসেন ময়ূরে চড়ি’। এখানেও শিশু-কিশোররা ময়ূরে চড়ে আনন্দ উপভোগ করছে। বিশ টাকা দিলেই একবার ময়ূরে চড়া যায়। মাহবুব বলেন, হারিয়ে যাওয়া কারুকাজে ভরপুর বিভিন্ন তৈজসপত্র দেখে মুগ্ধ হয়েছি।
×