ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

টিআইবির কাছে দুর্নীতি সূচকে অবনতির স্পষ্ট ব্যাখ্যা দাবি দুদকের

প্রকাশিত: ১০:৫৪, ৩০ জানুয়ারি ২০১৯

টিআইবির কাছে দুর্নীতি সূচকে অবনতির স্পষ্ট ব্যাখ্যা দাবি দুদকের

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দুর্নীতির পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে বার্লিনভিত্তিক দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) করা ‘দুর্নীতির ধারণাসূচকে’ বাংলাদেশ অবস্থানের চার ধাপ অবনতি ঘটেছে। বাংলাদেশের বর্তমান স্কোর ২৬ যা গত বছরের তুলনায় ২ পয়েন্ট কম। একই স্কোরে বাংলাদেশের সঙ্গে একই অবস্থানের অন্য দুটি দেশ হচ্ছে সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক ও উগান্ডা। তাই দুর্নীতি দমনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর অবস্থান বাস্তবায়নে জাতীয় দুর্নীতিবিরোধী কৌশল প্রণয়নের দাবি জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান। মঙ্গলবার ধানম-ির মাইডাস সেন্টারে দুর্নীতিবিরোধী বেসরকারী এ সংস্থাটি কর্তৃক আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ২০১৮ সালের টিআইয়ের প্রতিবেদনের বিভিন্ন দিক এবং বাংলাদেশের দুর্নীতির পরিস্থিতি তুলে ধরেন। অপরদিকে দুর্নীতি কোথায় কোথায় বেড়েছে, কোন কারণে বেড়েছে তার ফ্যাক্ট এ্যান্ড ফিগার ও বিশ্লেষণ করা ও একইসঙ্গে দুর্নীতি কিভাবে বেড়েছে, সেই বাড়ার কারণ কি? কারণগুলোকে এ্যাড্রেস করার জন্য কী ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন টিআইবির কাছে তার স্পষ্ট ব্যাখা দাবি করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। প্রকাশিত প্রতিবেদনে সূচকের উর্ধক্রম অনুযায়ী অধঃক্রম (খারাপ থেকে ভাল) বিবেচনা করলে বাংলাদেশ আগের ১৭তম অবস্থান থেকে নেমে গেছে ১৩তম অবস্থানে। অর্থাৎ ৪ ধাপ অবনতি হয়েছে। অপরদিকে (ভাল থেকে খারাপ) পৃথিবীর ১শ’ ৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান এ বছর ১শ’ ৪৯ নম্বরে। গত বছরও ১৮০টি দেশ ও অঞ্চলের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১শ’ ৪৩ নম্বরে। অর্থাৎ ৬ ধাপ অবনমন ঘটেছে। মঙ্গলবার বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে একযোগে ’১৮ সালের এই সূচক প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল। ১০০ ভিত্তিতে এই সূচকে বাংলাদেশের স্কোর গত বছরের তুলনায় এ বছর ২ পয়েন্ট কমে ২৬ হয়েছে। এই স্কেলে শূন্য স্কোরকে দুর্নীতির ব্যাপকতার ধারণায় সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত এবং ১০০ স্কোরকে সবচেয়ে কম দুর্নীতিগ্রস্ত বা সর্বোচ্চ সুশাসনের দেশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই সূচক অনুযায়ী দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের চেয়ে খারাপ অবস্থা শুধু আফগানিস্তানের। অধঃক্রম অনুযায়ী (খারাপ থেকে ভাল) আফগানিস্তানের অবস্থান এ বছর নবম। টিআই প্রতিবেদন অনুযায়ী, অন্যদিকে সর্বোচ্চ ৮৮ স্কোর নিয়ে তালিকায় সবচেয়ে ভাল অবস্থানে উঠে এসেছে ডেনমার্ক। স্কোর কমায় গতবারের তালিকায় সবচেয়ে ভাল অবস্থানে থাকা নিউজিল্যান্ড এবার নেমে গেছে দ্বিতীয় অবস্থানে। এরপর ফিনল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, নরওয়ে, নেদারল্যান্ডস, কানাডা ও লুক্সেমবুর্গ। তালিকায় এবারও সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় আছে আফ্রিকার দেশ সোমালিয়া। তাদের স্কোর গতবারের তুলনায় ১ পয়েন্ট বেড়ে ১০ হলেও অবস্থানের নড়চড় হয়নি। এরপরে রয়েছে যথাক্রমে সিরিয়া, সাউথ সুদান, ইয়েমেন, উত্তর কোরিয়া, সুদান, গিনি-বিসাউ, ইকুয়েটোরিয়াল গিনি, আফগানিস্তান ও লিবিয়া। সংবাদ সম্মেলনে ড: ইফতেখার বলেন, বাংলাদেশের অবনমনকে ‘বিব্রতকর’ ও উদ্বেগজনক। বর্তমানে উচ্চ পর্যায়ের দুর্নীতিবাজদের বাদ দিয়ে নিম্ন ও মধ্যম সারিতে ব্যবস্থা নেয়ায় বাংলাদেশ আশানুরূপ উন্নতি করতে পারছে না। আমাদের দুর্নীতিবিরোধী অভিযান নিম্ন ও মধ্যম পর্যায়ে সীমাবদ্ধ। উচ্চ পর্যায়ের দুর্নীতিবাজদের দিকে আমাদের নজর দিতে হবে এখন। দল ও পরিচয়ের উর্ধে উঠে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। তবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহিষ্ণুতা দেখানোয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণাকে ইতিবাচক হিসাবে বর্ণনা করে তিনি বলেন, এ অঙ্গীকার বাস্তবায়নে উদ্যোগী হতে হবে। এজন্য জাতীয় দুর্নীতিবিরোধী কৌশল প্রণয়ন করা জরুরী বলে আমরা মনে করি। এই ধরনের কৌশল প্রণয়ন করা উচিত এবং এটা করা সম্ভব। ব্যক্তির পরিচয় ও অবস্থানের উর্ধে উঠে কাজ করতে না পারলে শূন্য সহিষ্ণুতার বিষয়টি বক্তব্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে। প্রতিবেদনের বলা হয়, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বলছে, সমীক্ষায় দুই-তৃতীয়ংশের বেশি দেশের স্কোর ৫০ এর নিচে। আর প্রতিবেদনের ১৮০টি দেশের গড় স্কোর দাঁড়িয়েছে ৪৩। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে এবারের সূচকে সবচেয়ে ভাল অবস্থানে আছে ভুটান। ৬৮ স্কোর নিয়ে ভুটানের অবস্থান সূচকের উর্ধক্রম অনুযায়ী ২৫ নম্বরে। এরপর ভারত ৭৮ স্কোর ৪১, শ্রীলঙ্কা ৮৯ স্কোর ৩৮, পাকিস্তান ১১৭ স্কোর ৩৩, মালদ্বীপ ১শ ২৪ স্কোর ৩১, নেপাল ১শ ২৪ স্কোর ৩১ এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তান ১শ ৭২তম স্কোর ১৬ অবস্থানে রয়েছে। সম্মেলনে দেশের অবনমনের কারণ হিসেবে ড. ইফতেখার বলেন, অর্থ পাচার ঠেকানোর উদ্যোগ না নেয়া, গণমাধ্যম ও নাগরিক সমাজের মতপ্রকাশের অধিকার সঙ্কুচিত হওয়া এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়মের মধ্যে আনতে না পারা, দুদকে আরও উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, দুর্নীতি দমনের ক্ষেত্রে তারা সরকারের আজ্ঞাবহ নয়, সেই ম্যান্ডেট তাদের আছে। পরিচয় ও অবস্থানের উর্ধে উঠে দুর্নীতিবাজদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। বাংলাদেশে যেসব উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে বা অভিযুক্ত অথবা দুর্নীতি করেছেন, খুব কম ক্ষেত্রেই তারা বিচারের মুখোমুখি হয়েছেন। ড. জামান বলেন, দুর্নীতিতে আমাদের অবস্থান বৈশ্বিক অবস্থানের চেয়ে অনেক নিচে। এখানে আত্মতুষ্টির কোন অবস্থা নেই। আমাদের অপার সম্ভাবনার বিষয়টি দুর্নীতির কারণে আটকে আছে। বাংলাদেশে দুর্নীতি বেড়ে যাওয়ার কারণ এখানে রাজনৈতিক অঙ্গীকার ও ঘোষণা থাকলেও এটার বাস্তবায়ন সেভাবে নেই। উচ্চ পর্যায়ের লোকদের বিচারের আওতায় আনার সেরকম উদাহরণ কম। ব্যাংক খাতে অবারিত দুর্নীতি, জালিয়াতি, ভূমি-নদী-জলাশয় দখল, সরকারী ক্রয় খাতে রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণের কারণে দুর্নীতি এক ধরনের ছাড় পেয়ে যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, আমাদের স্বার্থের দ্বন্দ্ব প্রকট। আমাদের প্রশাসনে, সরকারী ক্ষেত্রে রাজনৈতিক ও ব্যক্তি অবস্থানকে ব্যক্তিস্বার্থের জন্য প্রভাব খাটিয়ে দুর্নীতির সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এক্ষেত্রে মত প্রকাশের স্বাধীনতাও ক্ষুণœ। টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, আমাদের ব্যাংকিং ও ফাইন্যান্স সেক্টরে দুর্নীতি স্পষ্ট। এখানে ব্যাংক জালিয়াতি, ঋণ নিয়ে পরিশোধ না করা, রাজনৈতিক প্রভাব, সারাদেশে বিভিন্নভাবে ভূমি সেক্টরে দুর্নীতি, রাষ্ট্রীয় ক্রয় খাতে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ ও ক্রমবর্ধমানহারে বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে অর্থ পাচারের দৃষ্টান্ত খুবই খারাপ। আজকের গণমাধ্যমেও অর্থপাচারের দৃষ্টান্তের খবর অত্যন্ত বিব্রতকর ও নেতিবাচক। যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তিনি বলেন, দুর্নীতি যে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিযোগ্য অপরাধ সেটি প্রতিষ্ঠিত করার জন্য জবাবহিদিতাসহ যেসব মৌলিক উপাদান থাকা দরকার তার অনুপস্থিতি লক্ষণীয়। আর এর প্রভাব অপরাপর সেক্টরেও পরিলক্ষিত। আর দুর্নীতি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বচ্ছতা, জবাবদিহির আওতায় নিয়ে আসা এবং স্বাধীনভাবে কাজ না করার বিষয়গুলোও ক্রমাগতভাবে দুর্বল হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কাজে গতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে ও সক্রিয় রয়েছে। তবে তাদের দুর্নীতিবিরোধী যেসব অভিযান তা নিম্ন ও মধ্যম লেভেলে সীমাবদ্ধ রয়েছে। তাদের রেঞ্জ অব অপারেশন উচ্চ পর্যায়ে নেই। দুদকের কাজের ক্ষেত্রে পদে পদে জবাবদিহিতার ঘাটতি কাটিয়ে উঠতে হবে। এককভাবে দুর্নীতি দমনের এ প্রতিষ্ঠানটি দুর্নীতি দমন বা কমিয়ে আনতে পারবে না। এজন্য অপরাপর সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকেও সক্রিয় ও স্বাধীন ভূমিকা পালন করতে হবে। ইফতেখারুজ্জামান বলেন, আইনের শাসনের যে পরিবেশ সেখানেও ঘাটতি রয়েছে। দুর্নীতি দমনের ক্ষেত্রে যাদের ভয়েস খুবই গুরুত্বপূর্ণ সেই নাগরিক সমাজ ও গণমাধ্যমও শঙ্কিত। কারণ তাদের কণ্ঠস্বর রোধ করা হয়েছে জিডিটাল নিরাপত্তা আইনের মতো আইন দিয়ে। এক্ষেত্রে পরিবর্তন জরুরী। তিনি বলেন, এবারের জাতীয় নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুর্নীতির ব্যাপারে জিরো টলারেন্সের কথা বলেছেন। তিনি দুর্নীতিগ্রস্ত কারো এদেশে ঠাঁই হবে না। তার ওই ঘোষণা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও রাজনৈতিক সদিচ্ছার বহিঃপ্রকাশ বলে মনে করি। এখন বাস্তবায়নের পালা। টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, জাতীয় দুর্নীতিবিরোধী কৌশল প্রণয়ন করা দরকার। সংসদকে জবাবদিহিমূলক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা দরকার। এ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়, এনবিআর, অর্থনৈতিক দুর্নীতির তদন্ত সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর আরও বেশি সক্রিয় ভূমিকা স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। তাদের স্বাধীনভাবে কাজ করার পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। তিনি বলেন, আসামিদের পরিচয় ও রাজনৈতিক অবস্থান নির্বিশেষে বিচারের আওতায় আনতে হবে। দুর্নীতি দমনের বিষয়টি হতে হবে জিরো টলারেন্স। তথ্যের অবাধ প্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে। আর নাগরিক সমাজ, গণমাধ্যম ও সাধারণের স্বাধীন মত প্রকাশের বিষয়টিও নিশ্চিত করতে হবে। অপরদিকে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) প্রতিবেদনে দুর্নীতি বাড়ার পেছনে (দুদক)কে স্বাধীনভাবে কাজ করতে না দেয়ার অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছেন সংস্থার চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ। টিআইয়ের সূচক প্রকাশের পর সাংবাদিকদের কাছে তাৎক্ষণিকভাবে দেয়া এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, আমাদের দুর্বল বলাটা ঠিক নয়, বরং ওনারাই দুর্বল। আজ পর্যন্ত আমি কখনওই বলিনি যে আমরা স্বাধীন নই। আমরা সম্পূর্ণভাবে স্বাধীন। সেই কারণে আমাদের যে ম্যান্ডেট আছে আইনে, আমরা সেই আইন নিয়ে যাচ্ছি। কেউ তো আমাদের বাধা দিচ্ছে না। অপর এক অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, পার্লামেন্টে পাস হওয়া আইন আমাদের শিরোধার্য। সেটা পরিবর্তন করার কোন ইচ্ছা বা উদ্যোগ আমাদের নিই। পার্লামেন্ট হচ্ছে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটানোর জন্য। জনগণের ইচ্ছায় তৈরি হওয়া আইন পরিবর্তন করার জন্য কোনো উদ্যোগ দুদক নেবে না। দুদকের স্বাধীনতা খর্ব করে এমন কোন আইন আজ পর্যন্ত হয়নি। কাউকে ধরা বা কাউকে প্রসিকিউট করার ক্ষেত্রে আমাদের কেউ বাধা দেয়নি। তিনি বলেন, অনেকে টকশোতে বলেন- এইটা কী দুদকের কাজ? আরে মামলা করেন না দুদকের বিরুদ্ধে যে দুদক এইটা বেআইনী করেছে। আমরা সেটা কোর্টে ফেস করব। আমরা মোটেও ভিত নই। টিআইবি সঠিক বলেন নাই, আমরা স্বাধীন। হ্যাঁ, এটা ঠিক যে আমরা অনেক বড় দুর্নীতিবাজকে ধরতে পারিনি। উদাহরণস্বরূপ, দুর্নীতিবাজ এখন যদি লন্ডনে বসে থাকে। টিআইবিকে পরামর্শ দিয়ে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, আপনারা সরকার বা রাষ্ট্রের বা যে কোন প্রতিষ্ঠানের ভাল কাজটা আপনারা মূল্যায়ন করবেন। প্রতিষ্ঠানগুলোর ভাল কাজগুলো যদি আপনি না বলেন, শুধু খারাপটাই বলতে থাকেন তাহলে সেটা আর প্রতিষ্ঠান হতে পারবে না। টিআইবি তখনই একটি ভাল প্রতিষ্ঠানে পরিণতি হবে যখন টিআইবি ভাল-খারাপ দুটোই বলবে। অর্থপাচার সম্পর্কে তিনি বলেন, অর্থপাচার সারাবিশ্বের সমস্যা, যে কারণে সব দেশেই মানিলন্ডারিং আইন পাস হয়েছে। আমরা দুর্নীতি বন্ধ করতে পারব না, আমরা দুর্নীতি কমাতে পারব। জনগণকে সচেতন করতে পারব। এখন কথা হচ্ছে যে সেই সচেতনতা বৃদ্ধিতে, দুর্নীতি কমাতে আমাদের কমিটমেন্ট আছে কি-না, রাজনৈতিক কমিটমেন্ট আছে কি-না সেসব জিনিস আমাদের দেখতে হবে। ইকবাল মাহমুদ বলেন, প্রতি বছরই টিআইবি রিপোর্ট তৈরি করে, টিআইবিকে অনেক আগেও আমরা বলেছি যে আপনারা আপনাদের মেথডলজি আমাদের জানান। আপনারা ফ্যাক্টস এ্যান্ড ফিগার দিয়ে বলেন। আমরা এখনও রিপোর্ট পাইনি, পেলে ভাল হতো। আপনাকে ফ্যাক্টস এ্যান্ড ফিগার দিয়ে বলতে হবে দুর্নীতি এভাবে কমেছে। তিনি বলেন, আপনি যখন কাউকে জিজ্ঞাসা করবেন ভাই দেশে কোন দুর্নীতি আছে কি-না, তখন সে বলবে হ্যাঁ, হ্যাঁ, দেশে অনেক দুর্নীতি। কিন্তু এটা তো সত্য সারাদেশে দুর্নীতির ব্যাপারে জনসাধারণ সচেতন হয়েছে। সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং যারা দুর্নীতির কাছাকাছি থাকেন বা যাদের সুযোগ থাকে, আমরা তো মনে করি তারা অনেক সচেতন হয়েছি। এই সচেতনতাই প্রমাণ করে দুর্নীতি আসলে, এটা নিম্নগতির দিকে। দুদক চেয়ারম্যান বলেন, শুধু টিআইবির রিপোর্ট দিয়ে তো আর কাজ হবে না। আর শুধু দুর্নীতি দমন কমিশন দিয়ে দুর্নীতি কমানো, সেটাও হয়তো সম্ভব নয়। সবাই মিলে একসঙ্গে সম্মনিত, সমন্বিতভাবে যদি কাজটা না করি সেক্ষেত্রে দুর্নীতি দমন বা কমানো সম্ভব না। তিনি আরও বলেন, টিআইবি বলেছে, আমরা অভিনন্দন জানাই। তবে আমরা টিআইবির কাছে ব্যাখ্যাটা চাই। আপনারা কেন বললেন? দুর্নীতি কোথায় কোথায় বেড়েছে এ সব ফ্যাক্টস এ্যাড ফিগার আপনাদের কাছে আছে কি-না এবং যেসব কারণে দুর্নীতি বেড়েছে তার বিশ্লেষণ আপনাদের কাছে আছে কি না। এইগুলো যদি বলতে পারেন, তবে আমরা আমাদের কর্মপদ্ধতি পরিবর্তন করতে পারব। দুদক চেয়ারম্যান দেশের উন্নয়ন হচ্ছে- এটা টিআইবি মানে কী মানে না? সামাজিকভাবে সচেতনতা বেড়েছে কি-না টিআইবির কাছে এই প্রশ্ন রাখেন তিনি।
×