ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বাগেরহাটে হ্যাচারি বন্ধ ॥ গলদা পোনা সঙ্কটে বিপাকে চাষী

প্রকাশিত: ০৯:১৪, ৩০ জানুয়ারি ২০১৯

বাগেরহাটে হ্যাচারি বন্ধ ॥ গলদা পোনা সঙ্কটে বিপাকে চাষী

বাবুল সরদার, বাগেরহাট ॥ পোনা সঙ্কটে গলদা চিংড়ি চাষীরা বিপাকে পড়েছেন। দেশে হিমায়িত রফতানি পণ্যে ‘সাদা সোনা’ খ্যাত গলদা চিংড়ির এক-তৃতীয়াংশই উৎপাদন হয় এ জেলায়। জেলার প্রায় তিন লাখ লোক গলদা চাষের ওপর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত। জেলার গলদা চিংড়ির পোনা উৎপাদনকারী হ্যাচারিগুলো বিভিন্ন কারণে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ফলে পোনা সঙ্কটে গলদা চাষীদের মাথায় হাত উঠেছে। প্রাকৃতিক উৎসের রোগাক্রান্ত পোনা ও পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে আসা কিছু পোনার ওপর ভরসা করে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন চাষীরা। ভারতীয় এসব পোনার উৎপাদন ও টিকে থাকা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন গবেষকরা। এদিকে প্রকৃতিতে এ্যামোনিয়া গ্যাস ও লবণাক্ততা বৃদ্ধি পাওয়ায় গলদা পোনা উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় লোকসানে পড়ে হ্যাচারি বন্ধ করে দিয়েছেন মালিকরা। কোন কোন গলদার হ্যাচারিতে বিকল্প হিসেবে কার্প জাতীয় মাছের চাষ শুরু হয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন গলদা চিংড়ি চাষীরা। জেলা মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, দেশে মোট উৎপাদিত চিংড়ির এক-তৃতীয়াংশ গলদা চিংড়ি উৎপাদন হয় বাগেরহাটে। এ জেলায় ১৯ হাজার হেক্টর জমিতে ৪৯ হাজার গলদা চিংড়ির ঘের রয়েছে। এতে ৪০ হাজার চাষী গলদা চাষ করে। এসব ঘেরে প্রতিবছর প্রায় ২১ কোটি পোনার চাহিদা রয়েছে। কিন্তু বাগেরহাট জেলার কোন হ্যাচারিতে বর্তমানে একটি পোনাও উৎপাদন হচ্ছে না। চিংড়ি হ্যাচারিজেলায় মৎস্য অধিদফতরের লাইসেন্সকৃত গলদা পোনা উপাদনকারী ৭টি হ্যাচারি এবং লাইসেন্স ছাড়াও বেশ কয়েকটি হ্যাচারি ছিল ; যা দিয়ে মোট চাহিদার একটা বড় অংশ পূরণ হতো। লাইসেন্সকৃত হ্যাচারিগুলোর মধ্যে সদর উপজেলার শ্রীঘাট এলাকায় ব্র্যাক গলদা চিংড়ি হ্যাচারি-১ ও ২, বাগেরহাট হ্যাচারি, আশা মৎস্য হ্যাচারি, একই উপজেলার পশ্চিমভাগে খানজাহান আলী হ্যাচারি ও নার্সারি, চিতলমারিতে মনোয়ার কবির হ্যাচারি এবং মোরেলগঞ্জ উপজেলায় রুপা এ্যাগ্রো ফিশারিজ। মৎস্য অধিদফতরের লাইসেন্স ছাড়াও বাগেরহাট সদরের হাইটেক গলদা চিংড়ি হ্যাচারি, কচুয়ার রেইনবো গলদা চিংড়িসহ কয়েকটি হ্যাচারি দুই এক বছর উৎপাদন করে বন্ধ হয়ে গেছে। চিংড়ি পোনা কারবারি মজিদ শেখ বলেন, এক সময় আমরা হ্যাচারি ও নদী দুই ধরনের পোনা বিক্রি করতাম। কিন্তু জেলার হ্যাচারিগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমাদের নদীর পোনার ওপর নির্ভর করতে হয়। চাষীদের পোনার চাহিদা মেটাতে আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। চিংড়ি চাষী সরদার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, পোনা উৎপাদনকারী হ্যাচারিগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় গলদা চাষে সমস্যা হচ্ছে। সময় মতো ভাল পোনা সংগ্রহ করা সম্ভব হচ্ছে না। প্রাকৃতিক উৎসের প্রতি নির্ভর হওয়ায় সময় মতো পোনা পাই না। যতদিন পর্যন্ত হ্যাচারিতে ভাল পোনা উৎপাদন না হয় ততদিন পর্যন্ত প্রাকৃতিক উৎস থেকে পোনা আহরণের দাবি জানান তিনি। বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জিয়া হায়দার চৌধুরী জানান, গত দুই বছর ধরে উৎপাদন ভাল না হওয়ায় জেলার হ্যাচারিগুলো একবারে বন্ধ হয়ে গেছে। হঠাৎ এ্যামোনিয়া গ্যাস বৃদ্ধির কারণে হ্যাচারিতে উৎপাদিত লার্ভা (পোনা) মরে যাচ্ছে। যেসব হ্যাচারিতে ভাল পোনা উৎপাদন হয় চাষীদের সেখান থেকে পোনা সংগ্রহের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। তবে মৎস্য অধিদফতরের নিজস্ব হ্যাচারিতে ভাল পোনা উৎপাদনের পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।
×