ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় এগিয়ে যাচ্ছে দেশ

প্রকাশিত: ০৮:৪২, ৩০ জানুয়ারি ২০১৯

অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় এগিয়ে যাচ্ছে দেশ

দক্ষিণ এশিয়ায় উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে বাংলাদেশ। বিশ্ব এখন অবাক বিস্ময়ে চেয়ে থাকে বাংলাদেশের উন্নয়নের দিকে। বিগত দশ বছরে বাংলাদেশ উন্নয়নে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে। বিশ্বব্যাংক ও এডিবির সাহায্য ছাড়া সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়ন দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলছে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ। দৃশ্যমান হয়েছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু। সম্ভাবনার বাংলাদেশে উন্নয়নে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এখন সবকিছু সম্ভব। আগামী বছরের মধ্যে পদ্মা সেতুর কাজ শেষ হবে। উন্নয়নে বাংলাদেশের মাইলফলক হবে পদ্মা সেতু। পদ্মা সেতুর কাজ শেষ হলে দৌলতদিয়ায় তৈরি হবে দ্বিতীয় পদ্মা সেতু। কয়েকদিন আগে উদ্বোধন হয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট। এত বড় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট আমেরিকা, যুক্তরাজ্য, চীন, জাপানসহ বিশ্বের আর কোথাও নেই। ৩০০ কোটি টাকার চিকিৎসা সরঞ্জাম কেনার কাজও শুরু হয়েছে। এসব অপ্রতিদ্বন্দ্বী উন্নয়নে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। কয়েক মাস আগে বাংলাদেশ মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ পাঠিয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ কখনও ভাবেনি বাংলাদেশ মহাকাশে স্যাটেলাইট পাঠাতে পারবে। অন্যান্য দেশের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মহাকাশে আমরাও আমাদের অস্তিত্ব জানান দিয়েছি এটা ভাবলে ভাল লাগে। বাংলাদেশের বিরাট অর্জন। বাংলাদেশকে সমৃদ্ধ দেশ গড়তে গত এক দশকে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবেশ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, দারিদ্র্য মোচনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অভাবনীয় অর্জন হয়েছে। নবজাতক ও শিশুমৃত্যু হার হ্রাস করতে পেরেছে। একদশকে দেশে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। মাথাপিছু আয় ও ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে। সমৃদ্ধ হয়েছে নগরায়ণ ও গ্রামাঞ্চল। জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত ও চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে এ সরকার। কারণ, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ঝুঁঁকিপূর্ণ রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ একেবারেই প্রথম সারিতে। নারী অধিকার ও নারীর ক্ষমতায়নে আমাদের অগ্রগতি লক্ষণীয়। নারী শিক্ষায় বাংলাদেশ আগের থেকে এখন অনেক এগিয়ে। একাদশ জাতীয় নির্বাচনে দেশের জনগণ বিপুল ভোটে আবারও শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ ও শরিক দলকে জয়ী করেছেন। এটি হচ্ছে দেশের জনগণ ও উন্নয়নের বিজয়। এক দশকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার দেশ ও জনগণের যে উন্নয়ন করেছে, তা অব্যাহত রাখতে হবে। এক দশকে আর্থ-সামাজিক খাতে অভাবনীয় উন্নয়ন হয়েছে। আমাদের মনে রাখতে হবে, মানুষ চায় একটি সমৃদ্ধ দেশের নাগরিক হতে। কিন্তু সমৃদ্ধ দেশ হতে গেলে শুধু বস্তুগত সমৃদ্ধি অর্জনই শেষ কথা নয়; বরং নাগরিকদের জন্য সে সমৃদ্ধি অর্জনের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টিই এখানে মূল কথা। আমরা যাদের সমৃদ্ধ দেশ বলে মনে করি, তারা শুধু সম্পদেই সমৃদ্ধ নয়, মানবিক উন্নয়ন ও জীবনযাত্রার মানেও তারা সমৃদ্ধ। প্রধানমন্ত্রী ২০২১ সালের মধ্যে দেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে গড়ার লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করেছেন। এরই মধ্যে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছে বর্তমান সরকার। সরকারের ধারাবাহিক উন্নয়নের ফলেই এটি সম্ভব হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনের আগে উন্নয়নের এ অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে জনগণের কাছে আবেদন করেছিলেন। আর জনগণ শেখ হাসিনার আহ্বানে সাড়া দিয়ে ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী করেছেন। আমাদের মনে রাখা দরকার, রাজনৈতিক কাঠামোয় সরকার পরিবর্তন হলে উন্নয়নের ধারাবাহিকতাও বিনষ্ট হয়। উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ, উন্নয়ন-পরিকল্পনা হয়ে থাকে সাধারণত মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদী। মাঝপথে সেসব কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হলে তাতে দেশেরই ক্ষতি। বিশ্ব অভিবাসনকে একটি সঙ্কট হিসেবে দেখছে। বাংলাদেশ সে সঙ্কটকে সম্ভাবনায় পরিণত করতে চায়। কিন্তু রাজনৈতিক অভিবাসন ও শরণার্থী সঙ্কট অর্থনীতির ওপর একটি অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করলেও সরকার তা সামলে নিয়েছে। এ সঙ্কট মোকাবেলায় বিশ্বকে এগিয়ে আসতে হবে, যদিও এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সাড়া পাওয়া গেছে। উন্নয়নের সুযোগ সৃষ্টিতে কর্মসংস্থান একটি বড় নিয়ামক। চাহিদার তুলনায় আমরা কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারিনি; তবে অগ্রগতিও কম হচ্ছে না। প্রতি বছরই চাকরির বাজারে যোগ হচ্ছে প্রায় ২০ লাখের বেশি শ্রমশক্তি। তাই কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি আর একই সঙ্গে দক্ষতা উন্নয়নেও কাজ করছে সরকার। প্রায় সোয়া কোটি জনশক্তি এখন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কর্মরত। দেশি ও আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারের চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আমাদের দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে পারলে এক্ষেত্রে আসবে বিরাট সাফল্য। বৃত্তিমূলক ও কারিগরি শিক্ষায় ক্রমান্বয়ে অগ্রগতি হচ্ছে। সব উন্নয়নের মূলকথা হচ্ছে মানবসম্পদ উন্নয়ন। এক্ষেত্রে যদিও অগ্রগতি কিছুটা কম; তবে প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় ভাল। বাংলাদেশ বর্তমানে মধ্যম মানব সম্পদ উন্নয়ন দেশের অন্তর্ভুক্ত। মানব সম্পদ উন্নয়নের যেসব সূচক আছে, যেমন শিক্ষা, স্বাস্থ্য, দক্ষতার বিকাশ এসব খাতে আরও অধিক সম্পদের সঞ্চালনের ওপর গুরুত্বারোপ করতে হবে। এটি বর্তমান সরকারের বিবেচনাধীন। এক্ষেত্রে উপযুক্ত নীতি ও কৌশল প্রণয়ন জরুরী। ২০১০ সালে যে শিক্ষানীতি প্রণয়ন করা হয়, তা এখন বাস্তবায়নাধীন। কিন্তু শিক্ষা-গবেষকরাই বলছেন, জাতীয় শিক্ষানীতি আরও সময়োপযোগী হওয়া বাঞ্ছনীয়। শিক্ষা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে প্রাথমিক স্তরে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ এগিয়ে চলছে। এ ছাড়া অন্যান্য শিক্ষা উপকরণ বিতরণও চলছে। পাশাপাশি উপবৃত্তি, স্কুল ফিডিং, শিক্ষা অবকাঠামো নির্মাণ ও সংস্কার, শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত হ্রাস, শিক্ষায় তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধিতে আরও জোর দিতে হবে। কারণ শিক্ষা সুযোগ নয়, অধিকার। সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা এখনও নিশ্চিত হয়নি। বিশেষ করে গ্রামের বা প্রান্তিক জনগোষ্ঠী আজও স্বাস্থ্যসেবার আওতায় আসেনি। যদিও কমিউনিটি ক্লিনিক গড়ে তোলা হয়েছে; কিন্তু সেখানে পর্যাপ্ত সেবা নিশ্চিত করা না গেলেও অগ্রগতি কম হয়নি। দরিদ্রদের জন্য স্বাস্থ্য সুরক্ষা কর্মসূচী চালু করা হয়েছে; কিন্তু এর সুফল মানুষের দোরগোড়ায় এখনও না পৌঁছলেও সরকারের ধারাবাহিকতায় দ্রুত তা সম্ভব হবে। সাবর্জনীন শিক্ষা, জনমুখী স্বাস্থ্যসেবা, পরিবার কল্যাণ কার্যক্রম, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচী, কর্মসংস্থান, দক্ষতা উন্নয়ন ও প্রশিক্ষণ এবং সচেতনতামূলক কার্যক্রমের সম্প্রসারণ করা সময়ের দাবি। এমনকি রাষ্ট্রীয় সুযোগ ও সেবাকেন্দ্রের বিকেন্দ্রীকরণ এবং তাতে জনগণের অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সে জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন কৌশল নির্ধারণের প্রয়োজন আছে। এ কথা সত্য, সামাজিক খাতে বিগত একদশকে অগ্রগতি লক্ষণীয়। ডিজিটাল বাংলাদেশকে শুধু রাজনৈতিক স্লোগানে সীমাবদ্ধ না রেখে একে দক্ষতা-উন্নয়ন, সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে একটি হাতিয়ার হিসেবে কাজে লাগাচ্ছে বর্তমান সরকার। দারিদ্র্য ও অসমতা হ্রাসেও এটি একটি কার্যকর হাতিয়ার। আমাদের প্রবৃদ্ধি বেড়েছে। দেশে খাদ্য উৎপাদন বাড়ছে; খাদ্য নিরাপত্তা পুরোপুরি অর্জিত হওয়ার পথে। দেশের সব মানুষের জন্য নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করতে হয়ত আর বেশি সময় লাগবে না। দেশকে তলাবিহীন ঝুড়ির শাপমোচন করে বর্তমান সরকার উন্নয়নের রূপকল্প তৈরি করেছে। সরকার রূপকল্প ২০২১ বাস্তবায়ন করে রূপকল্প ২০৪১ নিয়ে কাজ করছে। এটি বর্তমান সরকারের বড় অর্জন। দেশে মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি ও এভিয়েশন ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। যা বাংলাদেশের জন্য একটি সুদূরপ্রসারী ও যুগান্তকারী পদক্ষেপ। ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় দুটি। মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। নতুন করে আর কয়েকটি সরকারী মেডিকেল কলেজ স্থাপন করা হয়েছে। দারিদ্র্যের হার উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। দিন দিন জাতীয় প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি পাচ্ছে। সবকিছু স্বপ্নের মতো হয়। সেই বাংলাদেশ, এই বাংলাদেশ। সবকিছু ছাপিয়ে উন্নয়নের মহাসড়কে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে আমাদের সবার প্রাণপ্রিয় বাংলাদেশ। লেখক : যুক্তরাজ্য প্রবাসী শিক্ষাবিদ
×