ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

স্বাগত একাদশ সংসদ

প্রকাশিত: ০৮:৩১, ৩০ জানুয়ারি ২০১৯

স্বাগত একাদশ সংসদ

একাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন আজ বুধবার ৩০ জানুয়ারি শুরু হচ্ছে। সংসদীয় গণতন্ত্রের পথে আরও এক ধাপ এগিয়ে যাওয়ার মনোরথে শুরু হলো যাত্রা। এ পথ শুধু এগিয়ে চলার, নয়কো থামার। এক মাস আগে ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে দেশের নিবন্ধিত ৩৯টি রাজনৈতিক দল এবং অনিবন্ধিত অনেক দল, গ্রুপ ও ব্যক্তি অংশ নেয়। এবারের ভোটে কোন হানাহানি, সংঘর্ষ, কেন্দ্র দখল, জালভোট প্রদানের তেমন কোন ঘটনা ঘটেনি। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ভোটারের উপস্থিতি ছিল ব্যাপক। বাধাহীন, হুমকি-ধমকিবিহীন পরিস্থিতি ভোটে নতুন মাত্রা এনে দিয়েছে। দেশী-বিদেশী পর্যবেক্ষকরাও এক বাক্যে স্বীকার করেছেন নির্বাচন অবাধ, স্বচ্ছ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতৃবৃন্দও অভিনন্দন জানিয়েছেন অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য। এবারের নির্বাচনে ধর্মান্ধ, ধর্মব্যবসায়ী, সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থান রহিত ছিল। যুদ্ধাপরাধীদের দল জোটের শরিক দলের প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিয়ে হেরেছে এবং জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে তাদের। নির্বাচনে আওয়ামী লীগসহ মহাজোটের ভূমিধস বিজয় হয়েছে। বিরোধী ঐক্যফ্রন্ট প্রত্যাখ্যাত হয়েছে ভোটে, আসন পেয়েছে মাত্র আটটি। ২৯৯ আসনে ভোট হয়েছে। একটি আসনে ভোটের আগে একজন প্রার্থী মৃত্যুবরণ করায় ভোটগ্রহণ স্থগিত রাখা হয়। গত ২৬ জানুয়ারি এ আসনে ভোট হয়। আওয়ামী লীগ প্রার্থী বিজয়ী হন। ফল ঘোষণার পর নির্বাচিত আওয়ামী লীগ প্রার্থী মৃত্যুবরণ করায় আরেক আসন শূন্য হয়ে যায়। ফেব্রুয়ারিতে এ আসনে নির্বাচন হবে। ২৯৯ আসনে আওয়ামী লীগ দলীয়ভাবে জয় পেয়েছে ২৫৭ আসনে আর মহাজোটগতভাবে পেয়েছে ২৮৮ আসন। মহাজোটের নির্বাচিতরা সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নিয়েছেন। ঐক্যফ্রন্টের গণফোরাম দলীয় দুই সদস্য শপথ নিতে যাচ্ছেন। তবে বিএনপির নির্বাচিত ছয়জন শপথ নিতে গড়িমসি করছেন। সংবিধান অনুযায়ী শপথ নেয়ার ৩০ দিনের মধ্যে প্রথম অধিবেশন বসার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। আর দশম সংসদের পাঁচ বছর মেয়াদ শেষ হয়েছে ২৮ জানুয়ারি। দশম সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরু হয়েছিল ২০১৪ সালের ২৯ জানুয়ারি। এই সংসদ ছিল সংসদীয় গণতন্ত্রের জন্য এক মাইলফলক। সরকারী ও বিরোধী দলের সহাবস্থানে সুচারুরূপে সম্পন্ন হয়েছে অধিবেশন। নানামুখী সমালোচনা, বিরোধিতা উপেক্ষা করেই সংসদীয় গণতন্ত্র চর্চার ধারা অব্যাহত রেখেছে দশম সংসদ। সকল প্রতিবন্ধকতা দূরীভূত করে দেশ ও জনগণের চাহিদা পূরণে সক্রিয় অবস্থান তৈরি করে নিতে পেরেছে বিদায়ী সংসদ। অধিবেশন বর্জনের যে অব্যাহত ধারা ও সংস্কৃতি ইতোপূর্বের সংসদগুলো অবলোকন করেছে, দশম সংসদ তা থেকে বেরিয়ে এসে সংসদীয় গণতন্ত্রের ধারাকে উচ্চাসনে ঠাঁই দিয়েছে। সাংবিধানিকভাবে নির্বাচন হলেও এ নিয়ে বর্জনকারীরা নানামুখী অপপ্রচার, বিদ্বেষ, বিষোদগার চালালে তা ধোপে টেকেনি দেশে-বিদেশে। বর্জনের কারণে দলগুলো নিজেরা যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তা বিলম্বে হলেও স্বীকার করেছে তারা। দশম সংসদের মতো একাদশ সংসদেও প্রধান বিরোধী দলের আসনে বসেছে জাতীয় পার্টি। তাদের কেউ এবার মন্ত্রিসভায় নেই। আওয়ামী লীগ ছাড়া মহাজোটের নির্বাচিত অন্যান্য দলের সদস্যরাও বিরোধীদলীয় আসনে এবার ঠাঁই পাচ্ছেন। নিয়মানুযায়ী এই অধিবেশনজুড়ে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আলোচনা হবে। বিকেল তিনটায় অধিবেশন শুরু হবে। রাষ্ট্রপতি ভাষণ দেবেন। শুরুতেই স্পীকার এবং ডেপুটি স্পীকার নির্বাচন হবে। তারা রাষ্ট্রপতির কাছে শপথ নেবেন। নতুন স্পীকার সংসদে শোক প্রস্তাব উত্থাপন করবেন। সৈয়দ আশরাফুল ইসলামসহ অন্যদের মৃত্যুতে শোক প্রস্তাব তোলা হবে। এই অধিবেশনকালে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি এবং বিভিন্ন সংসদ কমিটি গঠন করা হবে। সংসদীয় গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতায় চলতি সংসদ দেশ ও জাতির জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে- এমন প্রত্যাশা দেশবাসীর। একাদশ সংসদ অধিবেশনকে স্বাগত জানাই।
×