ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

এ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারে সতর্কতা

প্রকাশিত: ১৩:১৭, ২৯ জানুয়ারি ২০১৯

এ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারে সতর্কতা

এ্যান্টিবায়োটিক এখন আর শুধু ডাক্তারের প্রেসক্রিপশনের বিষয় নয়। হাতুড়ে ডাক্তার তো বটেই, সাধারণ মানুষের কাছেও সহজলভ্য হয়ে উঠেছে এই এ্যান্টিবায়োটিক। একটু অসুস্থ বোধ করলেই বলা নেই কওয়া নেই লোকজন গোগ্রাসে গিলছেন এ্যান্টিবায়োটিক। শিশুরাও বাদ যাচ্ছে না। অভিভাবকেরা তাদের সন্তানদের নির্বিবাদে একটু জ্বর হলেই বোতল বোতল এ্যান্টিবায়োটিক সেবন করাচ্ছেন। আর এভাবেই নিজের অজান্তেই এ্যান্টিবায়োটিককে অকার্যকর উপাদানে পরিণত করা হচ্ছে প্রতিনিয়ত। পেনিসিলিন দিয়ে যাত্রা শুরু করে এ্যান্টিবায়োটিক এখন সংখ্যায় অনেক, আবার একেকটার কাজের ধরনও ভিন্ন। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে চিকিৎসার জন্য এ্যান্টিবায়োটিক একটি বড় স্থান দখল করে আছে! আমাদের এবং তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে মানুষের অজ্ঞতা এবং অনেক ক্ষেত্রে দায়িত্বহীনতার কারণে এ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স (প্রতিরোধ্যতা) তৈরি হচ্ছে মানুষের শরীরে। যে এন্টিবায়োটিক এক সময় বহু মানুষের জীবন রক্ষাকারী ওষুধ হিসেবে কাজ করত, তা এখন আর শরীরে সেভাবে কাজ করছে না। জীবন রক্ষাকারী মোক্ষম ওষুধের অভাবে জীবন হয়ে পড়ছে আরও ঝুঁকিপূর্ণ। সেজন্যই এন্টিবায়োটিক ব্যবহারে সতর্কতা খুব জরুরী। যেভাবে এ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্ট তৈরি হয় ব্যাকটেরিয়া তার জেনেটিক মিউটেশনের মাধ্যমে রেজিস্ট্যান্ট হয়ে ওঠে। আর একটি ব্যাকটেরিয়া রেজিস্ট্যান্ট হওয়া মাত্রই তা বিভিন্নভাবে অন্য ব্যাকটেরিয়াকে রেজিস্ট্যান্ট করে ফেলে। কখনও প্লাসমিডের মাধ্যমে আবার কখনওবা জাম্পিং জিনের মাধ্যমে ব্যাকটেরিয়া এই কাজ করে থাকে। এ্যান্টিবায়োটিকের ভুল ব্যবহারের জন্য এমনটা হয়ে থাকে। ওষুধের ডোজ ভুল হওয়া, বা পর্যাপ্ত দিন পর্যন্ত ওষুধ সেবন করা না হলে এবং সর্বোপরি সঠিক এ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা না হলে, এ ধরনের বিপত্তি দেখা দিতে পারে। প্রথম দুটো ভুল নিজেরা সংশোধন করতে পারলেও তৃতীয়টির জন্য চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া এবং প্রয়োজনীয় ইনভেস্টিগেশনের বিষয়টি জড়িত! পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এ্যান্টিবায়োটিক চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া বিক্রয় সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কিন্তু আমাদের দেশে আইন মানা হয় না। এনটেরিক ফিভার বা টাইফয়েড জ্বরের জন্য এক সময় সিপ্রোফ্লক্সাসিন নামের এ্যান্টিবায়োটিক যথেষ্ট কার্যকর থাকলেও এখন আর আগের মতো কাজ করে না। অনেকের শরীরেই, শুধু ওষুধের যথেচ্ছা ব্যবহারের জন্যই এমনটা হয়েছে, এখন সেই টাইফয়েড রোগের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন হয় তৃতীয় প্রজন্মের সেফালোস্পোরিন গ্রুপের এ্যান্টিবায়োটিক! অনেক ক্ষেত্রে মুখে ওষুধ দিয়ে তেমন কাজ হয় না, বাধ্য হয়ে শিরা পথেও ওষুধ দিতে হয়। টিবি রোগীরাও ইদানিং ব্যাপক হারে এ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্সের শিকার হচ্ছে। এজিথ্রোমাইসিনের মতো শক্তিশালী এন্টিবায়োটিকও যেনতেনভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। যতই কাছের মানুষ হোক না কেন কম্পাউন্ডার বা সেলসম্যানের পরামর্শে ডায়রিয়ায় মেট্রোনিডাজল,কফ কাশি হলে সেফ্রাডিন- এসব ওষুধ সেবন করা যাবে না। অযথা এ্যান্টিবায়োটিক সেবনে পেটের পীড়া তো কমে না উল্টো ‘সিইডো মেমব্রেনাস কোলাইটিস’ নামক মারাত্মক আন্ত্রিক ব্যাধি দেখা দিতে পারে। রক্ত আমাশয় চিকিৎসায় নেলিডেক্সিক এসিডের মাত্রাধিক ডোজ সেবনে মারাত্মক শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। মনে রাখতে হবে রোগ নিরাময়ে এ্যান্টিবায়োটিক বহু গবেষণা আর ট্রায়ালের পর তবেই ব্যবহৃত হয়। এ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ যেন মামুলি দাওয়াই হিসেবে ব্যবহৃত না হয় সেদিকে সবার নজর রাখা জরুরী। ডাঃ আব্দুল্লাহ শাহরিয়ার জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটউট ও হাসপাতাল
×