ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

প্রত্যয় ফাউন্ডেশন নিয়ে মিফতাহ

প্রকাশিত: ১৩:১৫, ২৯ জানুয়ারি ২০১৯

প্রত্যয় ফাউন্ডেশন নিয়ে মিফতাহ

এলাকার গরিব ও অসহায় মানুষদের সহযোগিতা করার প্রয়াসে প্রত্যয় ফাউন্ডেশনের যাত্রা শুরু হয়। সংগঠনের কর্ণধার মোঃ মিফতাহ আহমেদ লিটন বললেন, সূচনা থেকে আমি সবার সহযোগিতায় দেশ-বিদেশ তথা সোশ্যাল মিডিয়াসহ সব জায়গায় সংগঠনের কার্যক্রম উপস্থাপন করি। সেই থেকে প্রত্যয় ফাউন্ডেশনের এগিয়ে চলা। এক পর্যায়ে সংগঠনটি জুড়ি উপজেলার সবচেয়ে জনপ্রিয় সংগঠন হিসেবে পরিচিতি পায়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তে আমাদের কাজের পরিধি বাড়তে থাকে। প্রত্যয়ের মাধ্যমে বর্তমানে ৭০ জন শিক্ষার্থীর পড়াশোনা চলছে, পাশাপাশি চলছে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর সন্তানদের বিনামূল্যে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ। এখন পর্যন্ত আইসিটি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন ৩০০ জন চা শ্রমিক ও সুবিধাবঞ্চিতদের সন্তানেরা। মূলত সুবিধাবঞ্চিত এসব শিক্ষার্থীর পড়াশোনার খরচে সহযোগিতা করা, বন্যা মোকাবেলা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিস্তার, বিতর্ক প্রতিযোগিতা, মাদক, জঙ্গীবাদ, বাল্যবিয় বিরোধী সচেতনতা, স্বাস্থ্য সচেতনতা, মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তি চালু, পিএসআর ফ্রি ফ্রাইডে স্কুলের মাধ্যমে সমাজ পরিবর্তনে কাজ করছে প্রত্যয়। মৌলভীবাজারের জুড়ির সন্তান তারা। তাদের বড় বিজয় এসেছে যখন ২০১৬ সালে সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা ও ইয়াং বাংলার এ্যাওয়ার্ডি মিফতাহ আহমেদ লিটন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের কাছ হতে পুরস্কার গ্রহণ করেন। লিটন বললেন, ‘পুরস্কার ও যে কোন অর্জন সব সময় অনুপ্রেরণার। এই প্রাপ্তিও ছিল স্বপ্নের মতো। কারণ সে সময় এক হাজারেরও বেশি তরুণ মনোনয়ন পেয়েছিলেন। তার মধ্যে আমিও মনোনয়ন পেয়ে ছিলাম।’ এই পুরস্কার গ্রহণের পর সাংগঠনিকভাবে সংগঠনকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন। চা শ্রমিক বাবু লাল দাসের বারান্দায় গড়ে তোলা প্রত্যয় শেখ রাসেল ফ্রি ফ্রাইডে স্কুলটিকে নিজের ৫ শতক ভূমিতে স্থানান্তর করেন। সেখানে গত দুই বছরে ২৫০ জনকে বিনামূল্যে পাঠদান, বছরব্যাপী শিক্ষা উপকরণ সরবরাহ করা, ঝরে পড়া প্রতিরোধে কাজ করছে। প্রতিবন্ধীদের জন্য গড়ে তোলা হয়েছে সহায়তা ও সেবা কেন্দ্র। সে সেবা কেন্দ্র থেকে তাদের কয়েকজন সেবা গ্রহণ ও পড়াশোনায় সহযোগিতা পাচ্ছেন। লিটন আরও বললেন, আমার মাথায় চিন্তা এলো, প্রযুক্তিকে কীভাবে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী তথা সকলের কাছে পৌঁছে দেয়া যায়। সে ধারণা থেকে কাজ করতে থাকি প্রযুক্তি নিয়ে। বঞ্চিত এ জনগোষ্ঠীর সন্তানদের প্রযুক্তি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করি ৩টি কম্পিউটার দিয়ে। ১ বছর এই প্রশিক্ষণ চলতে থাকে। ‘টেকনোলজি ফর টি’ নামে এ প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের মাধ্যমে অনেক শিক্ষার্থী প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। বর্তমানে প্রশিক্ষণ চলমান। এ কার্যক্রম পরিচালনা করতে আইটি মন্ত্রণালয় থেকে প্রণোদনা পুরস্কার হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা প্রদান করেন। এ অর্থ দিয়ে ৭টি কম্পিউটার কিনে এ জনগোষ্ঠীর সন্তানদের প্রশিক্ষণ প্রদান করছেন। এখন আরও একটি প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সেটি প্রযুক্তি এখন সবার দোড়গোরায় এ স্লোগানে ইউনিয়নভিত্তিক ভ্রাম্যমাণ কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কার্যক্রম। এটি চলবে আগামী ৩ বছর। লিটন জানালেন, সংগঠনটি পরিচালনা করতে গিয়ে আমরা নানাবিধ চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছি। মূলত আমাদের সংগঠনটি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী। তাই আমরা বিভিন্ন মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে গিয়ে নানা প্রতিকূলতার সম্মুখীন হয়েছিলাম। কিন্তু কোন বাধা আমাদের দমিয়ে রাখতে পারেনি। আমরা নিজেদের জমানো অর্থ দিয়ে অসহায় রোগাক্রান্ত মানুষ এবং গরিব শিক্ষার্থীদের পড়শোনার খরচ চালিয়ে গেছি এবং যাচ্ছি, বন্যায় ত্রান সহায়তা, শীতবস্ত্র ও এতিম শিশুদের ঈদে বস্ত্র, শারদীয় দুর্গা পূজায় কাপড় বিতরণ, কম্পিউটার প্রশিক্ষণ প্রদানের সময় অনেক লোক আমাদের পাগল পর্যন্ত বলতে পিছপা হননি। কিন্তু আমরা পিছিয়ে যাইনি। আমরা কাজ করেছি। বিশেষ করে পুরস্কারপ্রাপ্তির পর আমরা আরও বেশি আত্মবিশ্বাসী এবং আগামীতে আমাদের কাজের গতি আরও বাড়বে। এলাকার পিছিয়ে পড়া নারীদের আমরা তথ্য ও প্রযুক্তিভিত্তিক উন্নত ও টেকসই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের স্বাবলম্বী করতে চাই। বিশেষ করে তাদের বাল্যবিয়ে সম্পর্কে সচেতন, অক্ষরজ্ঞানহীন নারীদের শিক্ষিত করে তোলা, স্বাস্থ্য সচেতন, শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় সহযোগিতা করা, ইভটিজিং বিরোধী কর্মকা-ে সচেতন করা, বিশেষ করে স্কুল ও কলেজে পড়া মেয়েদের কম্পিউটার প্রশিক্ষণের মাধ্যমে স্বাবলম্বী করা। প্রয়োজনে তাদের জন্য ছোট কম্পিউটার ল্যাবটি আরও বড় করা। যদি নারীর অধিকার নিশ্চিত করা যায় তা হলে স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়া সহজ হবে। যে স্বপ্ন দেখে ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান- দৃপ্তকণ্ঠে বললেন মিফতাহ। আরও বললেন, আমরা সে পথে আরও দ্রুত এগিয়ে যেতে পারব। শিক্ষার প্রসারে ইতোমধ্যে আমরা চালু করেছি শেখ রাসেল ফ্রি ফ্রাইডে স্কুল এই স্কুলের মাধ্যমে আমার সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবীরাÑ মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রতিযোগিতা, প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক বিদ্যালয়, উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের নিয়মিত বিনামূল্যে পাঠদান করেন। তাদের বিতর্ক, কুইজ, আইসিটি, মাদক বিরোধী ও ব্যক্তিত্ব বিকাশের ট্রেনিং প্রদান, মাধ্যমিক বৃত্তি প্রদান, নিয়মিত বিনামূল্যে শিক্ষা সহায়তাসহ একটি কম্পিউটার ল্যাব স্থাপনের মাধ্যমে এই কার্যক্রমকে আরও বেগবান করা সম্ভব। যেহেতু আমার এলাকাটি বাংলাদেশের এক প্রান্তে অবস্থিত, সীমান্তবর্তী এলাকার পিছিয়ে পড়া নারীদের আমরা তথ্য ও প্রযুক্তিভিত্তিক উন্নত ও টেকসই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের স্বাবলম্বী করতে চাই। যা বাস্তবায়ন করছে ‘টেকনোলজি ফর টি’, ‘টেকনোলজি ফর অল’, ‘ভ্রাম্যমাণ কম্পিউটার স্কিল ডেভেলপমেন্ট কোর্স’ ও ‘শেখ রাসেল ফ্রি ফ্রাইডে স্কুল।’ এ প্রকল্পগুলো আরও বড় পরিসরে ভবিষ্যতে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। সংগঠনটি বিভিন্ন কাজের জন্য পরবর্তীতে ইয়ুথ আইকন-২০১৮, সোনার বাংলা সমাজ কল্যাণ সংস্থার সমাজসেবা সম্মাননা-২০১৮, আমি ঠিক দেশ ঠিক সম্মাননা-২০১৮ অর্জন করে। ৩১ জনের কার্যনিবাহী কমিটি ও ৬০০ স্বেচ্ছাসেবী দেশ-বিদেশে রয়েছেন সংগঠনটির। ইয়াং বাংলার মতো একটা বড় প্ল্যাটফর্মের স্বীকৃতি অর্জন করায় তাদের দায়িত্ব আরও বেড়েছে বলেই সংগঠনের কর্মীদের বিশ্বাস।
×