শক্তির বিকল্প ব্যবহারে মানুষের জীবন কিছুটা সহজ করতে কাজ করছেন তরুণ উদ্ভাবক এ্যান ম্যাকোসিন্সকি। তার উদ্ভাবিত হলো ফ্ল্যাশলাইট- যেটি কেবল মানুষের হাতের উত্তাপে আলো দেয়, তাকে দিয়েছে খ্যাতি। এ ছাড়াও আছে ই-মগ। অসংখ্য পুরস্কারের পাশাপাশি মাত্র ১৯ বছর বয়স ঠাঁই করে নিয়েছেন ফোর্বসের থার্টি আন্ডার থার্টি তালিকায়। নিজের উদ্ভাবন নিয়ে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেয়া এ্যান সম্প্রতি এক সেমিনারে জানালেন তার অনুপ্রেরণার কথা।
যে বিষয়গুলো কাজের ক্ষেত্রে আমাকে অনুপ্রাণিত করে তা নিয়ে আমাকে প্রায়ই প্রশ্ন করা হয়। আমার প্রতিদিনের কাজের পেছনে অনেকগুলো অনুপ্ররেণা আমাকে চালিত করে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো আমি সময়ের অপচয়ে মোটেই বিশ্বাসী নই। এই শিক্ষাটি আমি পেয়েছি আমার অভিভাবকদের কাছ থেকে। অর্থ থাকলে আপনি অনেক কিছুই কিনতে পারবেন কিন্তু পেরিয়ে আসা সময়ের বেলায় সেটি সম্ভব নয়। কাজেই প্রতিটি দিনের শুরুতে আমি নিজেকে জিজ্ঞেস করি, আজকের দিনটি আমি কীভাবে দক্ষতার সঙ্গে কার্যকরভাবে কাজে লাগাতে পারি। প্রতিটি দিন আমি কিছুু শিখতে এবং গঠনমূলক কিছু করতে চাই। তাতে ব্যর্থ হলে আমি রীতিমতো অপরাধবোধে ভুগি।
আরেকটি বিষয় হলো আমার আবেগ এবং আগ্রহ। আমি যে বিষয়গুলো পছন্দ করি তা নিয়ে নিরলস কাজ করতে আমার কোন ক্লান্তি নেই। আমার চারপাশের লোকজন প্রায়ই অভিযোগ করেন আমি কেবল সে কাজগুলোই করি, যাতে আমার সত্যিকারের আগ্রহ আছে। আর এ কারণে নিজের জন্য লাভজনক অনেক প্রজেক্টও আমাকে ছাড়তে হয়েছে। ভাল না লাগায় অনেক প্রজেক্ট অসম্পূর্ণ রেখেই আমি নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছি। মনে হচ্ছে এ বিষয়টি নিয়ে আমাকে নতুন করে ভাবতে হবে। সব সময় সব কিছু কেবল ভাল লাগা না লাগার ওপর নির্ভর করে না। আমাকে এটা মনে রাখতে হবে যে, সময়ের প্রয়োজনেই পছন্দ না হলেও আমাকে অনেক কিছু শিখতে হবে, জানতে হবে। এটাকে বলা যেতে পারে সময়ের সঠিক ব্যবহার। উদাহরণ হিসেবে বলি, গ্রেড টুয়েলভ শেষ করার পরও আমি আলাদা করে সে শ্রেণীর পদার্থবিদ্যার কোর্স সম্পন্ন করি গ্রীষ্মকালীন অবকাশে। বিষয়টি কি আমি উপভোগ করেছি? মোটেই নয়। বরং ্এ নিয়ে আমাকে অনেক ভুগতে হয়েছে। আবার যখন আমি নিজেকে জিজ্ঞেস করি, আমি কি সেখান থেকে কিছু শিখেছি? উত্তর হলো হ্যাঁ শিখেছি এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা উপভোগও করেছি। জীবন কিন্তু এমনই। ভাল না লাগলেও আপনাকে অনেক কিছুই করতে হয় সেখান থেকেও শেখার আছে।
আমার অনুপ্রেরণার শেষ কারণটি বলতে আমি ফিরে যাব আমার সেই গল্পের বইয়ে মুখ গুজে কেঁদে বুক ভাসানোর দিনগুলোতে। আমি একটা বই পড়ছিলাম হ্যারি হুডিনির জীবন নিয়ে। ফ্রেড এসটেইর, জিঙ্গার রজার্স, র্যাসিল ব্যাথবোন, পিতর বেকজালা, লেসলি হোওয়ার্ড এমন অনেকের মতো হুডিনিও ছিলেন আমার নায়কদের একজন। ১২তম জন্মদিনে হুডিনি তার পিতাকে কথা দিয়েছিলেন তিনি তার মা সেসেলিয়ার খেয়াল রাখবেন। ১৯১২তে হুডিনি যখন বিশ্বজুড়ে পারফর্ম করছেন, তিনি আয়োজকদের কাছে স্বর্ণ মুদ্রায় পারিশ্রমিক দাবি করেন। সে স্বর্ণমুদ্রা তার মায়ের কোলে রেখে তিনি রক্ষা করেছিলেন পিতাকে দেয়া তার প্রতিশ্রুতি। আমি যখন গল্পটি পড়ি আমার বয়সও তখন ১২। আমি নিজের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম একদিন আমিও এমন কিছু করব। হতে পারে সেই দিন আসতে এখনও ২০ বছর বাকি কিন্তু সেই প্রতিজ্ঞা আমাকে আমার প্রতিদিনের কাজে প্রেরণা যোগায়।
শীর্ষ সংবাদ: