ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মুন্নার তারবিহীন চার্জিং প্রযুক্তি

প্রকাশিত: ১৩:১৪, ২৯ জানুয়ারি ২০১৯

মুন্নার তারবিহীন চার্জিং প্রযুক্তি

ডিপ্রজন্ম : কীভাবে এই ধারণা মাথায় আসল? মুন্না : নতুন কিছু নিয়ে কাজ করার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু কী নিয়ে কাজ করব সেটাই বুঝে উঠতে পারছিলাম না। শেয়ারইট এ্যাপ থেকেই আমার মাথায় আসে ছবি, ভিডিও শেয়ার করা গেলে কেন চার্জ নয়? ৩.১ সেমিস্টারে বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের নতুন কিছু করে দেখাতে হতো। সেখানে এই আইডিয়া দিলেও শেষ পর্যন্ত গ্রহণ করা হয়নি। ডিপ্রজন্ম : আপনার এই আবিষ্কারের যাত্রা শুরু কীভাবে? মুন্না : আইডিয়া নিয়ে অনেকের কাছেই গিয়েছিলাম। কেউ হেসে উড়িয়ে দেয় কেউ বলে পারলে কর, কিন্তু সেভাবে কেউই আগ্রহ দেখায়নি। এক বছর পর যখন ৪.১ সেমিস্টারে আমাকে থিসিস জমা দিতে হতো তখন ভাবলাম থিসিসের সঙ্গে এই কাজটাও করি। কিন্তু শাম্মি ম্যাম এটাকেই থিসিস হিসেবে নিয়ে এগিয়ে যেতে বললেন। ব্যস কাজে লেগে পড়ি! ডিপ্রজন্ম : কীভাবে কাজ করে এই পদ্ধতিটি? মুন্না : প্রাথমিক অবস্থায় একটি ফোনের মাদার বোর্ডের সঙ্গে ট্রান্সমিটার অপরটির সঙ্গে রিসিভার যুক্ত করতে হয়। ট্রান্সমিটার ৪ সেমির মধ্যে ম্যাগনেটিক ওয়েভ তৈরি করে এবং রিসিভার এই তরঙ্গ থেকে চার্জ গ্রহণ করে। আপাতত এই ট্রান্সমিটার সরাসরি ফোনের সঙ্গে সংযুক্ত করা। মাদার বোর্ডের পিন সংখ্যা নির্দিষ্ট হওয়ায় কোন এ্যাপ দিয়ে এটা নিয়ন্ত্রণ (অন/অফ) করা যায় না। ফলে চার্জ নিয়ন্ত্রণের জন্য আমাকে বাইরে একটি বাড়তি সুইচ যুক্ত করতে হয়েছে। নির্মাতারা সহযোগিতা করলে চার্জ পয়েন্টেই জ্যাক আকারে ট্রান্সমিটার বসানো সম্ভব। রেঞ্জ বৃদ্ধি নিয়েও কাজ করছি। ডিপ্রজন্ম : এখন পর্যন্ত কী ধরনের প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয়েছে? মুন্না : প্রথমে যখন প্রেজেন্টেশন করে দেখাই অনেক হাসাহাসি করেছিল। বলেছিল ইটের মতো ফোনে বানাবে নাকি? শাম্মি ম্যাম বলেছিলেন চালিয়ে যাও। এই কাজে দুটো স্মার্টফোন দরকার ছিল। সহপাঠী মিমি এবং প্রিয়াঙ্কা আমাকে আরেকটি স্মার্টফোন কিনতে অর্থ যোগাড় করে দেয়। অর্থায়ন একটা বড় সমস্যা ছিল। বর্তমানে এই উদ্ভাবনের কার্যক্ষমতাও পরীক্ষা করা যাচ্ছে না গবেষণাগারের অভাবে। ডিপ্রজন্ম : এখন পর্যন্ত সব থেকে বেশি উৎসাহ এবং সহযোগিতা পেয়েছেন কার কাছ থেকে? মুন্না : এই সাফল্যের উৎসাহ পেয়েছি শাম্মি আক্তার ম্যামের কাছ থেকে। আমার আইডিয়া তিনি গ্রহণ না করলে এতদূর আসা সম্ভব হতো না। এ জন্য আমি কৃতজ্ঞ। শাকরান হায়াত ভাই আমাকে প্রতি মুহূর্তে এগিয়ে নিয়েছেন। উৎসাহ দিতেন আশরাফুল আলম সুজন ভাই। রাকিব স্যারও অনেক সহযোগিতা করেছেন। মিমি এবং প্রিয়াঙ্কাকেও ধন্যবাদ। ডিপ্রজন্ম : কোন বাণিজ্যিক কোম্পানি কি আপনার এই আবিষ্কারকে বাজারজাত করতে চেয়েছে? মুন্না : এখন পর্যন্ত কারও সঙ্গে সেভাবে কথা বলার সুযোগ হয়ে ওঠেনি। কয়েকদিন আগে একটা মুঠোফোন কোম্পানির একজন উর্ধতন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা হলেও পরে আর কথা আগায়নি। ডিপ্রজন্ম : আপনার এই আবিষ্কার নিয়ে কী স্বপ্ন দেখেন আপনি (এখানে আপগ্রেড করে কি করতে চান এটাও বলতে পারেন)? মুন্না : কিছুদিন আগে অনেক স্বপ্ন দেখলেও সেটা এখন কমে আসছে। আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় কার্নিভালে প্রফেসর জামিলুর রেজা স্যার আমার প্রজেক্ট দেখে নিজে মন্ত্রণালয়ে ফোন দিয়ে প্যাটেন্টের বিষয়ে আমাকে সহযোগিতা করতে বলেন। এ ছাড়াও স্যারের কারণেই সাবেক বিভাগীয় প্রধান আলোক স্যার এবং এশিয়া প্যাসিফিক বিশ্ববিদ্যালয় আমাকে বিশেষভাবে সহযোগিতা করে যার ফলে আমি ডেনমার্ক যাই। আমি পূর্ণ সহযোগিতা পেলে হয়ত এই প্রযুক্তি সংযুক্ত হয়ে নতুন একটা ফোনে বাজারে আসত যেটার পেছনে লেখা থাকত ‘গঅউঊ ওঘ ইঅঘএখঅউঊঝঐ’ ডিপ্রজন্ম : নতুন উদ্ভাবনে বাংলাদেশে কেমন সম্ভাবনা দেখছেন? মুন্না : দেশে টিকটকে ভিডিও বানিয়ে যে সাড়া পাওয়া যায় সেটা একজন উদ্ভাবকের ভাগ্যে জোটে না। অনেক মেধাবী উদ্ভাবক সাড়া না পেয়ে বিদেশগামী হয়। এদিকটাতে নজর দেয়া দরকার। ডিপ্রজন্ম : তারুণ্যের কাছে প্রত্যাশা... মুন্না : তরুণ হিসেবে আমি চাই তারুণ্যের আইডিয়াগুলোর মূল্য দেয়া হোক। অসম্ভব মনে হলেও তাদের ধারনাকে বাস্তব করার সুযোগ দেয়া হোক। মনে রাখতে হবে প্রযুক্তিতে সবই সম্ভব। ডিপ্রজন্ম : কেমন বাংলাদেশ দেখতে চান? মুন্না : ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে হলে মাঠ পর্যায়ে কাজ জরুরী। বিশ্বমানের গবেষক তৈরি হোক আমাদের দেশে এটাই প্রত্যাশা।
×