ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

নিউজিল্যান্ডেও উড়ল ভারতের পতাকা

প্রকাশিত: ১২:০২, ২৯ জানুয়ারি ২০১৯

নিউজিল্যান্ডেও উড়ল ভারতের পতাকা

শাকিল আহমেদ মিরাজ ॥ নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসে প্রথমবারের মতো অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে টেস্ট-ওয়ানডে দুটি সিরিজ জয়ের রেশ না কাটতেই অসিদের তাসমান প্রতিবেশী নিউজিল্যান্ডে উড়ল ভারতের পতাকা। টানা তিন জয়ের পথে কিউইদের উড়িয়ে দিয়ে ওয়ানডে সিরিজ নিশ্চিত করলো সুপার বিরাট কোহলি এ্যান্ড কোং। সোমবার বে-ওভালের (মাউন্ট ম্যাঙ্গানিউয়ে) তৃতীয় ম্যাচে সফরকারীদের জয় ৭ উইকেটে। ব্ল্যাক ক্যাপসদের ২৪৩ রানে গুটিয়ে দেয়ার পর ৩ উইকেট হারিয়ে ৭ ওভার আগেই লক্ষ্যে পৌঁছে যায় কোহলির ভারত। ফলে এক দশক পর নিউজিল্যান্ডে ওয়ানডে সিরিজ জিতল দলটি। দারুণ বোলিংয়ে ম্যাচসেরা হয়েছেন পেসার মোহাম্মদ শামি। বিতর্কিত ঘটনার পর দলে ফেরা তারকা অলরাউন্ডার হারদিক পা-িয়াও আলো ছড়িয়েছেন। হ্যামিল্টনে বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হবে পাঁচ ম্যাচ সিরিজের চতুর্থ ওয়ানডে। সিরিজের আগের ম্যাচটিও হয়েছিল একই উইকেটে। এদিন উইকেট তাই একটু ছিল মন্থর, বল এসেছে থেমে। তবে স্পিনারদের আগে ভারতের পেসাররাই বিপাকে ফেলে নিউজিল্যান্ডকে। দ্বিতীয় ওভারেই কলিন মুনরোকে ফেরান শামি। মার্টিন গাপটিল একটি করে চার ও ছক্কা মারলেও তাকে ১৩ রানে থামান ভুবনেশ্বর কুমার। তিনে নেমে ইনিংস গড়ার চেষ্টা করছিলেন উইলিয়ামসন। ২৮ রানে তিনি বিদায় নেন যুবেন্দ্র চাহালের স্পিনে। কিউইদের রান তখন ৩ উইকেটে ৫৯। চতুর্থ উইকেটে রস টেইলর ও টম লাথামের ব্যাটে ঘুরে দাঁড়ায় স্বাগতিকরা। ১২৮ বলে ১১৯ রানের জুটি গড়েন এই দু’জন। ভারতের দুর্ভাবনা হয়ে ওঠা এই জুটি ভাঙ্গেন চাহাল। বাঁহাতি লাথামকে ফিরিয়ে দেন ৫১ রানে। সফরকারীদের দুর্দান্ত বোলিংয়ে এরপর আর কোন জুটি গড়ে তুলতে পারেনি কিউইরা। নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে দলে ফেরা হারদিক পা-িয়া পরপর দুই ওভারে ফেরান হেনরি নিকোলস ও মিচেল স্যান্টনারকে। তবু চ্যালেঞ্জিং স্কোরের স্বপ্ন দেখছিল নিউজিল্যান্ড। কারণ আশা হয়ে টিকে ছিলেন অভিজ্ঞ রস টেইলর। এগোচ্ছিলেন সেঞ্চুরির দিকে। ১০৬ বলে ৯৩ রান করা ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়ে দেন শামি। লোয়ার অর্ডারে ঝড় তুলতে পারেননি কেউ। দল থমকে যায় আড়াই শ’র নিচে। রান তাড়ায় নিউজিল্যান্ডকে কোন সুযোগই দেয়নি ভারত। ৬ চারে ২৭ বলে ২৮ করে শিখর ধাওয়ান আউট হন। দ্বিতীয় উইকেটে রোহিত শর্মা ও বিরাট কোহলি গড়েন ১১৩ রানের জুটি। থিতু হয়ে যাওয়া দুই ব্যাটসম্যানকেই পুরনো বলে ফেরান ট্রেন্ট বোল্ট। ৭৭ বলে ৬২ করেছেন রোহিত, ৭৪ বলে ৬০ কোহলি। তাতে ভারতের জিততে বেগ পেতে হয়নি একটুও। অবিচ্ছিন্ন চতুর্থ জুটিতে ৭১ বলে ৭৭ রান তুলে দলকে জিতিয়ে দেন আম্বাতি রইডু ও দীনেশ কার্তিক। ৫ চার ও ১ ছক্কায় ৪০ রানে অপরাজিত থেকে যান রাইডু। ধোনির চোটে সুযোগ পাওয়া কার্তিক ৩৮ রানে অপরাজিত সমান চার ও ছক্কায়। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে ভারত ওয়ানডে সিরিজ জিতেছিল একবারই। সেটি সেই ২০০৯ সালে। মহেন্দ্র সিং ধোনির নেতৃত্বে ৫ ম্যাচ ৩-১ ব্যবধানে। ২০১৪ সালে সর্বশেষ সফরে ভারত হেরেছিল ৪-০তে। অথচ গত বিশ্বকাপের পর থেকে হার-জিতের অনুপাতে এই নিউজিল্যান্ডই তাদের ঘরের মাঠে ছিল সেরা দল। কিন্তু কোহলির দুর্দমনীয় ভারত তাদের মাটিতেও সিরিজ জিতে বুঝিয়ে দিলেন এবার তারা তাসমান সাগরের দুই পাড়ই জিততে এসেছিলেন। ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ড ওয়ানডে সিরিজের প্রথম তিন ম্যাচ সর্বশেষ হেরেছিল ২০১২ সালে। বোঝাই যাচ্ছে পুরো শক্তির দল নিয়েও ভারতের বিপক্ষে পেরে না ওঠার কারণ একটাই কোহলির এই ভারত সত্যিই অসাধারণ, স্পেশাল। সেটি কতটা তা এই পরিসংখ্যানেই পরিষ্কারÑ প্রতিপক্ষের মাঠে সর্বশেষ ৭টি দ্বিপক্ষীয় সিরিজের মধ্যে ৬টিই জিতেছে ভারত। আর ২০১৭ সালে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পর ১১টি ওয়ানডে সিরিজের মধ্যে মাত্র একটিতে হেরেছে দলটি। অস্ট্রেলিয়া তবু শেষ ম্যাচ পর্যন্ত সিরিজ টেনে নিতে পেরেছিল। কিন্তু নিউজিল্যান্ড অত জটিল সমীকরণে যায়নি, কেন উইলিয়ামসনদের নির্ভেজাল আত্মসমর্পণ দুই ম্যাচ বাকি থাকতেই। স্কোর ॥ নিউজিল্যান্ড- ২৪৩/১০ (৪৯ ওভার; গাপটিল ১৩, মানরো ৭, উইলিয়ামসন ২৮, টেইলর ৯৩, ল্যাথাম ৫১, নিকোলস ৬, স্যান্টনার ৩, ব্রেসওয়েল ১৫, সোধি ১২, বোল্ট ২, ফার্গুসন ২*; ভুবেনশ্বর ২/৪৬, শামি ৩/৪১, চাহাল ২/৫১, হার্দিক ২/৪৫, কুলদীপ ০/৩৯, কেদার ০/১৭)। ভারত- ২৪৫/৩ (৪৩ ওভার; রোহিত ৬২, ধাওয়ান ২৮, কোহলি ৬০, রাইডু ৪০*, কার্তিক ৩৮*, কেদার ২২*; বোল্ট ২/৪০, ব্রেসওয়েল ০/৪৯, ফার্গুসন ০/৫৭, স্যান্টনার ১/৪৫, সোধি ০/৫৭)। ফল ॥ ভারত ৭ উইকেটে জয়ী। ম্যাচসেরা ॥ মোহাম্মদ শামি (ভারত)। সিরিজ ॥ পাঁচ ওয়ানডেতে ভারত ৩-০তে এগিয়ে।
×