ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

লুইসের শতক, ওয়াহাবের হ্যাটট্রিকে বিধ্বস্ত খুলনা

প্রকাশিত: ১২:০১, ২৯ জানুয়ারি ২০১৯

লুইসের শতক, ওয়াহাবের হ্যাটট্রিকে বিধ্বস্ত খুলনা

মোঃ মামুন রশীদ ॥ এবার বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ (বিপিএল) টি২০ আসরে খুলনা টাইটান্সের যেন দুর্গতি কমছেই না। একের পর এক লজ্জাজনক হারে দুঃসহ এক বিপিএল কাটাচ্ছে তারা। এবার তারা ৮০ রানে বিধ্বস্ত হয়েছে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের কাছে। সোমবার চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে আগে ব্যাট করে বিপিএল ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ পায় কুমিল্লা। ওয়েস্ট ইন্ডিজের মারকুটে ওপেনার এভিন লুইসের ৪৯ বলে ১০৯ রানের ঝড়ো ইনিংসে তারা ৫ উইকেটে ২৩৭ রান তোলে। এটি বিপিএলে লুইসের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি এবং চলতি আসরের চতুর্থ ও বিপিএলের ইতিহাসে ১৬তম শতক। মাত্র দু’দিন আগেই এই ভেন্যুতে রংপুর রাইডার্স ৪ উইকেটে ২৩৯ রানের রেকর্ড সংগ্রহ গড়েছিল যা বিপিএলের সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ। জবাব দিতে নেমে খুলনা ১৮.৫ ওভারে ১৫৭ রানেই গুটিয়ে যায় পাকিস্তানী পেসার ওয়াহাব রিয়াজের হ্যাটট্রিকে। এ জয়ের ফলে ৯ ম্যাচে ৬ জয়ে ১২ পয়েন্ট নিয়ে আপাতত শীর্ষে উঠে এসেছে কুমিল্লা। আর ১১ ম্যাচে এটি খুলনার নবম হার। টস জিতে কুমিল্লাকে আগে ব্যাটিংয়ে পাঠায় খুলনা। তামিম ইকবালের সঙ্গে ইনজুরি থেকে ফেরা লুইস দারুণ শুরু এনে দেন কুমিল্লাকে। পাওয়ার প্লে’র ৬ ওভারে বিনা উইকেটে ৪৭ রান তুলে ফেলে তারা। তবে লুইসের চেয়ে অনেকটাই ধীর ছিলেন তামিম। অবশ্য তখনও লুইসের ঝড়টা জোরালো হয়নি তেমন। অষ্টম ওভারে খুলনার অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ বোলিংয়ে এসে ব্রেক থ্রু দেন। ওই ওভারের দ্বিতীয় বলে ২৯ বলে ৩ চার, ১ ছয়ে ২৫ রান করা তামিমকে এবং পরের বলে এনামুল হক বিজয়কে (০) সাজঘরে ফেরান তিনি। প্রতিপক্ষের জোড়া আঘাতে কিছুটা ধীর হয়ে যায় কুমিল্লার রান তোলার গতি। ১১ ওভারে রান ওঠে ২ উইকেটে ৮৩। লুইসের সঙ্গে অধিনায়ক ইমরুল কায়েস বেশ স্বাচ্ছন্দ্যেই ব্যাট চালিয়ে যাচ্ছিলেন। রিয়াদের চতুর্থ এবং ইনিংসের ১২তম ওভারে এ দু’জন ব্যাট হাতে ঝলসে ওঠেন। ওই ওভারে ১৭ রান তুলে নিয়ে কুমিল্লার দলীয় সংগ্রহ ১০০তে নিয়ে যান তারা। এরপর আর থামানো যায়নি ঝড়। লুইস-ইমরুল ব্যাট হাতে তা-ব চালাতে থাকেন। ডেভিড উইজের ১৩তম ওভারেও ১৭ রান তুলে নেন তারা। লুইস ৩১ বলে অর্ধশতক পূর্ণ করেন। চলতি বিপিএলে প্রথম নামা ডানহাতি পেসার সাদ্দাম হোসেনের ওপর ১৪তম ওভারে টর্নেডো বইয়ে দেন লুইস। চারটি ছক্কাসহ তুলে নেন ২৮ রান। টানা এই তিনটি ওভারে ৬২ রান তুলে নেয়াতেই বিশাল সংগ্রহের দিকে এগিয়ে যায় কুমিল্লা। আর লুইসও এগিয়ে যান সেঞ্চুরির দিকে। ১৫তম ওভারে ইমরুলকে তুলে নেন খুলনার পেসার শরীফুল ইসলাম। ফলে মাত্র ৪২ বলে ওঠা ৯৭ রানের ঝড়ো তৃতীয় উইকেট জুটির সমাপ্তি ঘটে। ইমরুল ২১ বলে ৪ চার, ২ ছক্কায় ৩৯ রান করেছিলেন। এরপর ১৬তম ওভারে কার্লোস ব্রেথওয়েটের বলে থিসারা পেরেরা (৪ বলে ১১) ও শহীদ আফ্রিদি (২ বলে ১) ব্যর্থ হয়ে সাজঘরে ফিরেছেন। তবে লুইসের বিধ্বংসী মনোভাব কমেনি এতে। তিনি ব্যাট চালিয়ে গেছেন ঝড়ের বেগে। তার সঙ্গে যোগ দিয়ে শামসুর রহমানও ঝড় তোলেন। শেষ ওভারের দ্বিতীয় বলে সাদ্দামকে লং অনের ওপর দিয়ে ছক্কা হাঁকিয়ে শতক পূর্ণ করেন লুইস। ফিফটি করেছিলেন ৩১ বলে, শতক পেতে খেলেছেন ৪৭ বল। অর্থাৎ পরবর্তী ৫০ রান পেয়েছেন লুইস মাত্র ১৬ বলে। এর আগে লুইস ২০১৫ সালের তৃতীয় বিপিএল আসরে এই ভেন্যুতেই বরিশাল বুলসের হয়ে ঢাকা ডায়নামাইটসের বিপক্ষে ৬৫ বলে ১০১ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেছিলেন। শেষ পর্যন্ত লুইস অপরাজিত থাকেন ৪৯ বলে ৫ চার, ১০ ছক্কায় ১০৯ রানে। কুমিল্লা পায় ৫ উইকেটে ২৩৭ রানের বিশাল সংগ্রহ। খুলনার বোলাররা নিয়ন্ত্রণহীন বোলিং করেছেন সেটার প্রমাণ অতিরিক্ত থেকেও ২৪ রান এসেছে। শামসুর ১৫ বলে ১ চার, ২ ছক্কায় ২৮ রানে থাকেন অপরাজিত। বিপিএলে এ নিয়ে মোট ১৭ বার দুই শতাধিক রানের ইনিংস দেখা গেল যার মধ্যে কুমিল্লা প্রথমবারেই দুই শ’ পেরিয়ে রেকর্ড সংগ্রহ পেয়েছে। এ মাঠে গত শুক্রবার (২৫ জানুয়ারি) রংপুর ৪ উইকেটে ২৩৯ রান তুলেছিল চিটাগং ভাইকিংসের বিপক্ষে। খুলনার পক্ষে ২টি করে উইকেট নেন ব্রেথওয়েট ও রিয়াদ। বিশাল সংগ্রহ টপকানোর রেকর্ড গড়তে হবে খুলনাকে জেতার জন্য। তবে চলতি আসরে তাদের যে দলগত নৈপুণ্য তাতে করে সেটা শুরুতেই অসম্ভব মনে হয়েছে। তবে এরপরও জুনায়েদ সিদ্দিকী ও ব্রেন্ডন টেইলর দারুণ ব্যাট করে ৫৫ রানের ঝড়ো উদ্বোধনী জুটি গড়েন। রানের মধ্যে থাকা জুনায়েদ ২৪ বলে ৪ চার, ১ ছক্কায় ২৭ রান করার পর অফস্পিনার মেহেদী হাসানের শিকার হলে জুটি ভাঙ্গে। এরপর আর কেউ বড় ইনিংস খেলতে পারেননি। শুধু ব্রেথওয়েট ১৩ বলে ১ চার, ২ ছক্কায় ২২ রানের একটি ছোট্ট ঝড় দেখিয়েছেন। তবে টেইলর দারুণ খেলছিলেন। তিনি তুলে নেন অর্ধশতক। ৩৩ বলে ৫ চার ১ ছক্কায় ৫০ রান করে তিনি শহীদ আফ্রিদির বলে সাজঘরে ফিরলে লড়াইয়ের আশাও শেষ হয়ে যায় খুলনার। অধিনায়ক রিয়াদও ব্যর্থতার বৃত্ত থেকে বেরোতে না পেরে ১১ রানেই মাঠ ছাড়েন। টপঅর্ডার ভেঙ্গে পড়ে আফ্রিদির ঘূর্ণিতে, তিনি ৪ ওভারে ২৭ রানে ৩ উইকেট শিকার করেন। আর শেষদিকে আরেক পাক ওয়াহাবের পেস তোপে ৭ বল আগেই ১৫৭ রানে গুটিয়ে যায় খুলনার ইনিংস। ১৯তম ওভারের তৃতীয় বলে উইজ, চতুর্থ বলে তাইজুল ইসলাম ও পঞ্চম বলে সাদ্দামের উইকেট নিয়ে হ্যাটট্রিক পূর্ণ করেন ওয়াহার। এটি বিপিএলের ইতিহাসে চতুর্থ হ্যাটট্রিক এবং চলতি আসরের দ্বিতীয়। ঢাকায় প্রথমপর্বে ডায়নামাইটসের স্পিনার আলিস আল ইসলাম চলতি আসরের প্রথম হ্যাটট্রিক করেছিলেন। ৮০ রানের জয়ে এখন ৯ ম্যাচে ৬ জয়ে ১২ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে উঠে এসেছে কুমিল্লা। স্কোর ॥ কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ইনিংস- ২৩৭/৫; ২০ ওভার (তামিম ২৫, লুইস ১০৯*, বিজয় ০, ইমরুল ৩৯, থিসারা ১১, আফ্রিদি ১, শামসুর ২৮*; রিয়াদ ২/৩২, ব্রেথওয়েট ২/৪২, শরীফুল ১/৫৩)। খুলনা টাইটান্স ইনিংস- ১৫৭/১০; ১৮.৫ ওভার (টেইলর ৫০, জুনায়েদ ২৭, মালান ১৩, রিয়াদ ১১, ব্রেথওয়েট ২২, শান্ত ১৪, উইজ ৮, আরিফুল ২, তাইজুল ১, শরীফুল ০, সাদ্দাম ০; ওয়াহাব ৩/১৪, আফ্রিদি ৩/২৭)। ফল ॥ কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ৮০ রানে জয়ী। ম্যাচসেরা ॥ এভিন লুইস (কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স)।
×