ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

পাম্প নষ্ট ॥ ভোগান্তির শিকার রোগীরা

প্রকাশিত: ১১:৩৯, ২৯ জানুয়ারি ২০১৯

পাম্প নষ্ট ॥ ভোগান্তির শিকার রোগীরা

নিজস্ব সংবাদদাতা, রূপগঞ্জ, ২৮ জানুয়ারি ॥ রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তীব্র পানি সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এতে করে রোগীদের মাঝে পানির জন্য হাহাকার দেখা দিয়েছে। গত ১০ দিন ধরে পানির পাম্প নষ্ট থাকায় এ পানির সঙ্কট দেখা দিয়েছে বলে জানা যায়। জানা যায়, গত তিন মাস ধরে হাসপাতালের পাম্পটিতে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিচ্ছে। বেশ কয়েকবার উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও তারা কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেন নি। এর প্রেক্ষিতে গত ২৭ ডিসেম্বর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী অধিদফতরে লিখিত চিঠি দেয়া হলেও এর কোন সুফল পাওয়া যায় নি। ১৫ দিন ধরে পাম্প নষ্ট থাকায় হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীদের চরম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যেন নিজেই অসুস্থ। পানি না থাকায় অতিরিক্ত দুর্গন্ধের কারণে হাসপাতালের ভিতরে প্রবেশ করাই দায়। রোগীদের ওয়ার্ডে প্রবেশ করে দেখা যায় চারদিক নোংরা ও দুর্গন্ধময় হয়ে আছে। এখানে রোগীদের সঙ্গে রোগীদের আত্মীয় স্বজন এসে তারাও অসুস্থ হয়ে পড়ছে। হাসপাতালের সবগুলো টয়লেটের অবস্থা করুণ। হাসপাতালে প্রবেশ করলে দুর্গন্ধে মুখে কাপড় দিয়ে নাক চেপে ধরতে হয়। হাসপাতালে ভর্তি রোগীরা অভিযোগ করে জানান, নিয়মিত হাসপাতালের ওয়ার্ড ও টয়লেট পরিষ্কার করা হয় না বলেই এ তীব্র দুর্গন্ধের সৃষ্টি হচ্ছে। তার উপর গত ১৫ দিন ধরে পানি না থাকায় এ ভোগান্তির মাত্রা আরও বহুগুণে বেড়ে গেছে। পানি না থাকায় হাসপাতালে থাকা রোগী পায়খানা ও প্রস্রাব করতে অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছে। তাদের পায়খানা প্রস্রাব করার জন্য নিচে গিয়ে কখনও নদী থেকে অথবা অন্য মানুষের বাড়ি থেকে পানি নিয়ে এসে প্রয়োজন মেটাতে হয়। তবে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির শিকার হতে হয় হাসপাতালে ভর্তি থাকা প্রসূতি মায়েদের । প্রসূতি মায়েদের পক্ষে হাসপাতালের নিচে নেমে অন্য কোথাও গিয়ে পায়খানা প্রস্রাব করা সম্ভব হয় না। এতে করে বেশিরভাগই রোগীই হাসপাতালবিমুখ হয়ে পড়ছে। প্রসূতি ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায় দুই থেকে তিন জন রোগী বাদে পুরো ওয়ার্ডই খালি রয়েছে। মধুখালী এলাকা থেকে আসা শহিদুল ইসলাম জানান, তিনি গত ১০ দিন আগে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হন। ভর্তি হওয়ার পর থেকেই তিনি হাসপাতালের পানি পাচ্ছেন না। পানি না থাকায় চরম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে তাকে। এছাড়া খাওয়ার পানিও দোকান থেকে কিনে খেতে হচ্ছে। ভিংরাবো এলাকা থেকে আসা বৃদ্ধা রাইজা বেগম (৭০) বলেন, আমি গত এক সপ্তাহ ধরে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। হাসপাতালে পানি না থাকায় পায়খানা প্রস্রাব করতে পারছি না। আমি বৃদ্ধ মানুষ ঠিকমতো হাঁটতেও পারি না। পায়খানা প্রস্রাবের জন্য নিচে যেতে অনেক সমস্যা হয়। জাঙ্গীর এলাকা থেকে আসা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রোগী জানান, হাসপাতালের জন্য বরাদ্দ সরকারী ওষুধও তারা সঠিকভাবে পায় না। হাসপাতালের ফার্মেসিতে গিয়ে ফার্মাসিস্ট বাদল ও মোস্তফার কাছে সরকারী ওষুদের প্রেসক্রিপসন নিয়ে গেলে তারা ওষুধ না দিয়ে রোগীদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন। এ সময় তিনি আরও বলেন, সামর্থ্য না থাকায় সরকারী হাসপাতালে সেবার জন্য আসি কিন্তু সঠিকভাবে সেবা ওষুধ সঠিকভাবে না পেলে আমরা কোথায় যাব। এ বিষয়ে রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সাঈদ আলম মামুন বলেন, পানির পাম্পটি মেরামত করতে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী অধিদফতর থেকে লোকজন এসেছে। শীঘ্রই পানির পাম্পটি মেরামত করা হবে। পানির পাম্প নষ্ট থাকায় হাসপাতালে পায়খানা ও ওয়ার্ড পরিষ্কার করা সম্ভব হচ্ছে না। পাম্পটি ঠিক হয়ে গেলে এ সকল সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
×