ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ‘খোয়াবনামা’র নাট্য প্রযোজনা

প্রকাশিত: ১১:০৮, ২৯ জানুয়ারি ২০১৯

আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ‘খোয়াবনামা’র নাট্য প্রযোজনা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ব্রিটিশ আমলের ঘটনাপ্রবাহে আবর্তিত হয়েছে নাটকের প্রেক্ষাপট। উঠে এসেছে জমিদারদের শাসন-শোষণের কথা। নিপীড়নের মাঝেও সংগ্রাম আর বেঁচে থাকার পথ খুঁজে বেড়ায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠী। সবকিছু হারিয়েও আগামীর স্বপ্নে এগিয়ে যায় জীবন। এমনই গল্পের কথা বলে কিংবদন্তি কথাশিল্পী আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের উপন্যাস ‘খোয়াবনামা’। বইয়ের পৃষ্ঠায় থাকা সেই উপন্যাসটি এবার উঠে এলো নাট্যমঞ্চে। উপন্যাসটি অবলম্বনে মঞ্চস্থ হলো প্রাচ্যনাট স্কুলের ৩৫তম ব্যাচের প্রযোজনা ‘খোয়াবনামা’। মোঃ শওকত হোসেন সজীবের নাট্যরূপে নাটকটির নির্দেশনা দিয়েছেন কাজী তৌফিকুল ইসলাম ইমন। সোমবার সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার প্রধান মিলনায়তনে প্রশিক্ষণার্থী নাট্যশিল্পীদের অভিনীতি প্রযোজনাটির প্রদর্শনী হয়। প্রদর্শনীর আগে প্রাচ্যনাট স্কুল অব এ্যাকটিং এ্যান্ড ডিজাইনের ৩৫তম ব্যাচের নাট্যশিক্ষার্থীদের সনদপত্র প্রদান করা হয়। এ অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির ইংরেজী বিভাগের অধ্যাপক খালিকুজ্জামান ইলিয়াস এবং অভিনেত্রী বিপাশা হায়াত। শত বছর আগের ঘটনাপ্রবাহ ধরে এগিয়ে যায় যায় নাটকের কাহিনী। কাৎলাহার বিলের ধারে ঘন জঙ্গল সাফ করে বাঘের ঘাড়ে জোয়াল চাপিয়ে শুরু হয় আবাদ। এক বিকেলে মজনু শাহের অগুণতি ফকিরের সঙ্গে মহাস্থানগড়ের দিকে যাবার সময় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সেপাই সর্দার টেলারের গুলিতে মারা পড়ে মুনসি বয়তুল্লাহ শাহ। কাৎলাহার বিলের দুই ধারের মানুষ জানে, বিলের উত্তরে পাকুড়গাছে আসন নিয়ে রাতভর বিল শাসন করে মুনসি। দূরে কোথাও ভূমিকম্প হলে যমুনা বদলে যায়। বন্যায় ভেঙ্গে পড়ে কাৎলাহারের তীর। মুনসির নিষ্কণ্টক অসিয়তে চাষীরা হয় কাৎলাহার বিলের মাঝি। সময়ের আবর্তনে বিলের মালিকানা চলে যায় জমিদারের হাতে। মুনসির শ্লোকে শ্লোকে মানুষের স্বপ্নের ব্যাখ্যা করে চেরাগ আলি ফকির। তমিজের বাপ শ্লোক শুনে আর ঘুমের মধ্যে বিলে গিয়ে কাদায় পা ডুবিয়ে দেখতে চায় পাকুড়গাছের মুনসিকে। ভবানী পাঠকের সঙ্গে পূর্বপুরুষের জের টেনে বৈকুণ্ঠনাথ গিরি প্রতীক্ষা করে ভবানীর শুভ আবির্ভাবের। তমিজ দেখে জমির স্বপ্ন। আর চেরাগ আলির নাতনি কুলসুম খোয়াবে যার কায়া দেখতে চায় তার দিশা পায় না। তেভাগার কবি কেরামত শেষ পর্যন্ত আটকে পড়ে শুধুই নিজের কোটরে। সে নাম চায় বৌ চায় ঘর চায়। এদিকে কোম্পানির ওয়ারিশ ব্রিটিশের ডা-া উঠে আসে দেশী সাহেবদের হাতে। দেশ আর দেশ থাকে না, বিভক্ত হয় দুই রাষ্ট্রে। দেশী সাহেবরা নতুন রাষ্ট্রের আইন বানায়, কেউ হয় টাউনবাসী, কেউ বা কন্ডাক্টর। আবার নিজদেশে পরবাসী হয় কোটি কোটি মানুষ। হিন্দু জমিদার নায়েব চলে যাওয়ার পরও আজাদ পাকিস্তানে জমি আর বিলের মানুষ নিজেদের মাটি আর পানির পত্তন ফিরে পায় না। পাকুড়গাছ নাই। মুনসির খোঁজ করতে করতে চোরাবালিতে ডুবে মরে তমিজের বাপ। ভবানী পাঠক আর আসে না। বৈকুণ্ঠ নিহত হয় হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গায়। জেলেরা নিজেদের ইচ্ছেমতো মাছ ধরতে পারে না কাৎলাহার বিলে। কাৎলাহারের জেলেদের সঙ্গে যমুনার জেলেদের মাছ ধরা নিয়ে শুরু হয় দ্বন্দ্ব। সেখানে তমিজের হাতে খুন হয় এক জেলে। ক্ষমতাবান ভদ্রলোকের বাড়িতে চাকর হয়ে বিল দ্বন্দ্বের আসামি তমিজ পুলিশকে এড়ায়। কিন্তু তার কানে আসে কোথায় কোথায় চলছে তেভাগার লড়াই। নিরাপদ আশ্রয় ছেড়ে তমিজ বেরিয়ে পড়ে তেভাগার খোঁজে। ফুলজানের গর্ভে তমিজের ঔরসজাত মেয়ে সখিনাকে নিয়ে ফুলজান ঠাঁই নেবে কোথায়? নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন ফজলে রাব্বী, সৌমিক কুমার সাহা জয়, রথি দাশগুপ্ত, সাদিয়া জান্নাত জয়া, উচ্ছ্বাস তালুকদার, সাগর বড়ুয়া, মাহবুব উর রহমান, জাহারুল ইসলাম হৃদয়, জোনায়েত ফেরদৌস প্রান্ত, সাইম বিন মুজিব, আব্দুল মুকিত রাজু, শায়লা মারিয়াম হোসেন, মনোয়ার হায়দার খান, সাজ্জাদুর রহমান, আহনাফ আবিদ রহমান, ফাইরুজা কৃষ্টি, শোয়েব আহম্মেদ, স্বর্ণালী রায়, সাদিয়া সুলতানা, রাসেল কবির, আফাজ আল আরাফ, বৃষ্টি আক্তার, সিনথিয়া হাই, সৌন্দর্য প্রিয়দর্শিনী ও ঊর্মি সাহা রায়। নীল কামরুলের সঙ্গীত পরিকল্পনায় কোরিওগ্রাফি করেছেন স্নাতা শাহরিন।
×