ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

ডাকসু নির্বাচন- তারিখ নিয়ে চূড়ান্ত রিপোর্ট আজ

প্রকাশিত: ১১:০৭, ২৯ জানুয়ারি ২০১৯

ডাকসু নির্বাচন- তারিখ নিয়ে চূড়ান্ত রিপোর্ট আজ

মুনতাসির জিহাদ ॥ ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের গঠনতন্ত্র, নির্বাচনী আচরণবিধি ও নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ নিয়ে আজ চূড়ান্ত প্রতিবেদন পাওয়া যাবে। সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ডাকসুর সংশোধিত গঠনতন্ত্র ও আচরণবিধিসহ আনুষঙ্গিক বিষয়াদি নির্ধারিত হবে বলে জানা গেছে। রাতে বিশ^বিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চোধুরী সিনেট ভবনে সিন্ডিকেটের সভা বসবে। সভার পরেই জানা যাবে বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসন ডাকসু নির্বাচনের গঠনতন্ত্র ও নির্বাচনী আচরণবিধিতে কি কি অন্তর্ভুক্ত করছে, কারা হতে পারবেন ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের ভোটার। এ কারণে সব ছাত্র সংগঠনের চোখ এখন সিন্ডিকেট সভার দিকে। নতুন বছরের প্রথম সপ্তাহেই ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন ইস্যুতে নতুন করে হাওয়া লাগে। গত ৬ জানুয়ারি আদালতের দেয়া স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে নেয়ার পর থেকে ডাকসু নির্বাচনের বাধা দূর হয়ে যায়। এর পর থেকে ডাকসু নির্বাচন উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনা হাতে নিতে শুরু করে প্রশাসন। গঠনতন্ত্র সংশোধন, পরিমার্জন ও নির্বাচনী আচরণবিধি নিয়ে পরিবেশ পরিষদে অন্তর্ভুক্ত ছাত্র সংগঠনগুলোর পরামর্শ জানতে দুটি আলাদা কমিটি গঠন করেছে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আখতারুজ্জামান। নিয়োগ দেয়া হয়েছে রিটার্নিং কর্মকর্তা। এছাড়া ডাকসুর গঠনতন্ত্রের ৮ (ই) ধারা অনুযায়ী আগামী ১১ মার্চ ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেন তিনি। ডাকসু নির্বাচন উপলক্ষে আচরণ বিধিমালা প্রণয়নের জন্য গত ১৯ জানুয়ারি শনিবার বিশ^বিদ্যালয়ের উপউপচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. নাসরীন আহমাদকে আহ্বায়ক করে কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি ছাত্র সংগঠনগুলোর সঙ্গে সভা করে এবং তাদের মতামতের ভিত্তিতে একটি খসড়া আচরণ বিধিমালা প্রণয়নসহ আবারও মতামত চাওয়া হয়। আচরণ বিধিমালার কিছু কিছু ধারা পরিবর্তনের জন্য প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রাব্বানীর কাছে লিখিতভাবে সুপারিশমালা প্রেরণ করা হয়। ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনী আচরণ বিধিমালা ২০১৯ (খসড়া) অনুযায়ী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ বা জমা দেয়ার সময় কোন ধরনের মিছিল বা শোভাযাত্রা না করে সর্বোচ্চ পাঁচজনকে নিয়ে সংগ্রহ বা জমা দিতে বলা হয়। নির্বাচনী প্রচার চালানোর সময় যানবাহন নিয়ে শোভাযাত্রা কিংবা ব্যান্ড পার্টি চলবে না। নির্বাচনের দিন ভোটারদের কেন্দ্রে আনা-নেয়ার ক্ষেত্রে যানবাহনের সাহায্য নেয়া যাবে না। শুধু ডাকসু নির্বাচন কমিশন কর্তৃক অনুমোদিত স্টিকারযুক্ত গাড়ি চলাচল করতে পারবে। প্রচারের সময় নির্ধারণ করা হয় সকাল দশটা থেকে রাত দশটা। সভা, সমাবেশ ও শোভাযাত্রা করতে চাইলে রিটার্নিং অফিসার থেকে ৪৮ ঘণ্টা আগে অনুমতি নিতে হবে। ক্লাসকক্ষ, পাঠকক্ষ কিংবা পরীক্ষার কেন্দ্রে প্রচার চালানো যাবে না। ক্যাম্পাসে দুপুর দুটো থেকে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত এবং আবাসিক হলগুলোর অডিটরিয়ামে বিকেল পাঁচটা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত মাইক ব্যবহার করা যাবে। নির্বাচন কেন্দ্র করে চাঁদা, অনুদান লেনদেন করা যাবে না। নির্বাচনী কর্মকর্তা, ভোটার, প্রার্থী, পোলিং এজেন্ট ও রিটার্নিং অফিসার অনুমোদিত ব্যক্তি ছাড়া অন্য কেউ কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবে না। রিটার্নিং অফিসারের অনুমতিতে গণমাধ্যমকর্মীরা ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবে এবং ছবি তুলতে পারবে কিন্তু সরাসরি সম্প্রচার করা যাবে না। নির্বাচন চলাকালীন ভোটার-প্রার্র্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ভিন্ন কেউ ক্যাম্পাসে অবস্থান করতে পারবে না। কোন প্রার্থী নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করলে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা জরিমানা, প্রার্থিতা বাতিল, বিশ^বিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার কিংবা রাষ্ট্রীয় বা বিশ^বিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী অন্য কোন দ-ে দ-িত হবেন। ঢাবি ছাত্রলীগ খসড়া আচরণবিধির কিছু ধারা সংশোধনের দাবি লিখিত আকারে প্রকাশ করার দাবি জানায়। সেগুলো হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যায়তনিক পরিবেশ, একাডেমিক কার্যক্রম, ক্লাস-পরীক্ষা-সেমিনার-সিম্পোজিয়াম-লাইব্রেরির পরিবেশ ব্যাহত করে নির্বাচনী কার্যক্রম পরিচালনা করা যাবে না। মাইকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করে ছাত্র সমাবেশ ও অডিটরিয়ামের অভ্যন্তরে মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। দেয়াল লিখনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা যাবে না। প্রশাসনের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয়ভাবে ও হলগুলোতে নির্বাচনী বিতর্কসভার আয়োজন করতে হবে। ডাকসু বা হল সংসদের সাবেক নেতৃবৃন্দকে রাজনৈতিক প্রচারে সম্পৃক্ত করানো যাবে না। সাংবাদিকদের কার্যক্রম পরিচালনা করার পূর্ণ স্বাধীনতা দিতে হবে। সভা, সমাবেশ বা শোভাযাত্রা করার অনুমতি নেয়ার ক্ষেত্রে ৪৮ ঘণ্টার পরিবর্তে ২৪ ঘণ্টা করতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের প্রস্তাবগুলো ॥ নির্বাচনী প্রচার সময় প্রতিদিন সকাল ১০ টা থেকে রাত ১২ টা পর্যন্ত করতে হবে। কোন প্রার্থীর প্রচারের অংশ হিসেবে ডাকসুর সাবেক নেতাদের অংশগ্রহণের সুযোগ দিতে হবে। সভা, সমাবেশ বা শোভাযাত্রার অনুমতি ৪৮ ঘণ্টা আগে নেয়ার বদলে ২৪ ঘণ্টা আগে নেয়ার সুযোগ দিতে হবে। ক্লাসের আগে-পরে ক্যাম্পেনের সুযোগ দিতে হবে। দেয়ালে প্রচার করা যাবে না এবং পূর্ববতী সকল দেয়াল লিখন মুছে দিতে হবে। ভোটকেন্দ্র সিসি ক্যামেরার আওতায় আনতে হবে। প্রার্থী ও গণমাধ্যমকর্মীকে ভিডিও ফুটেজ দিতে বাধ্য থাকবে রিটার্নিং কর্মকর্তা। হল প্রাধ্যক্ষ স্বাক্ষরিত ভোটার স্লিপ তৈরি করে বিভাগের মাধ্যমে বিতরণ করতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আবুল বাসার সিদ্দিকী স্বাক্ষরিত সুপারিশমালায় বলা হয়, প্যানেল পরিচিতি অনুষ্ঠানে সাবেক ডাকসু নেতাদের অংশগ্রহণের সুযোগ দিতে হবে। ভোটকেন্দ্রসহ ক্যাম্পাসের সকল গুরুত্বপূর্ণ জায়গা ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার আওতায় আনতে হবে। সভা, সমাবেশের অনুমতি ৪৮ ঘণ্টা আগে নেয়ার বিধানটি শিথিল করতে হবে। গণমাধ্যমকর্মীদের রিটার্নিং অফিসারের অনুমতি ছাড়াই ভোটকেন্দ্রে প্রবেশের সুযোগ দিতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আখতারুজ্জামান বলেন, আগামীকাল সিন্ডিকেট সভা হবে। আচরণবিধি ও গঠনতন্ত্র সংশোধন নিয়ে গঠিত কমিটিগুলো প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে চূড়ান্ত আকারে গঠনতন্ত্র ও নির্বাচনী আচরণবিধিমালা প্রণয়ন করা হবে।
×