ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ফুলের হাটে শীতের স্নিগ্ধতা, গোলাপে মুগ্ধ দর্শনার্থী

প্রকাশিত: ১০:৫৯, ২৯ জানুয়ারি ২০১৯

ফুলের হাটে শীতের স্নিগ্ধতা, গোলাপে মুগ্ধ দর্শনার্থী

মামুন-অর-রশিদ ॥ প্রকৃতিতে বসন্ত এখনও আসেনি। তবে হাজারো ফুল ফুটেছে সর্বত্র। আর সব ফুল একসঙ্গে শোভা পাচ্ছে এখন রাজশাহী নগরীর মণিবাজার মাঠে। শীতের সকালে হাজারো ফুলের সমারোহে রাজশাহীতে শুরু হয়েছে পাঁচ দিনব্যাপী পুষ্পমেলা। ফুলের প্রতি ভালবাসায় সকাল থেকেই ফুলপ্রেমীরা ভিড় জমান মেলা প্রাঙ্গণ রাজশাহী নগরীর মণিবাজার চত্বরে। পরিবার পরিজন ও শিশুদের নিয়ে এসে অনেকে মুগ্ধ হন পছন্দের ফুলের সঙ্গে নিজেদের ছবি তুলে স্মৃতিময় করতে। যেন ফুল প্রেমীদের হাট বসেছে মেলা প্রাঙ্গণজুড়ে। এবারও মেলায় নিয়ে আসা হয়েছে শত প্রজাতির গোলাপ। স্টল ঘুরেই এসব গোলাপ দেখছেন দর্শনার্থীরা। ফুলের কমতি নেই মেলায়। দেশী-বিদেশী নানা প্রজাতির ফুলের মেলা বসেছে এখানে। দর্শনার্থীদের নানা প্রজাতির ফুলের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতেই রাজশাহীতে এই আয়োজন। ওয়ান ব্যাংকের পুষ্পমেলা সহায়তায় ক্রীড়া সংগঠন ‘বৈকালি সংঘ’ প্রতিবছরের মতো এবারও পাঁচ দিনের এই মেলার আয়োজন করেছে। সোমবার সকালে আনুষ্ঠানিকভাবে মেলার উদ্বোধন করেন রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) কমিশনার একেএম হাফিজ আক্তার। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ বেতারের ভারপ্রাপ্ত আঞ্চলিক পরিচালক হাসান আখতার, ওয়ান ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট আবদুল মান্নান, বৈকালি সংঘের সভাপতি এওয়াইএম মনিরুজ্জামান এবং সাধারণ সম্পাদক রইস উদ্দিন আহমেদ বাবু। আয়োজকদের দাবি, ফুল বিক্রি করা ওয়ান ব্যাংক পুষ্পমেলার উদ্দেশ্য নয়। উদ্দেশ্য হলো, ফুল সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মাঝে আগ্রহ আরও বেশি করে জাগিয়ে তোলা এবং ফুলকে চেনা। আবার শহুরে জীবনের গ-ি পেরিয়ে সামান্য সময়ের জন্য মানুষকে কিছুটা আনন্দ দেয়াও এ মেলা আয়োজনের অন্যতম লক্ষ্য। তাই ১৯৮৫ সাল থেকে এ মেলার আয়োজন করা হয়। মেলার স্টলে স্টলে সাজানো রয়েছে নানা জাতের ফুলগাছ ও ফুল। দর্শনার্থীরা কেউ একটু হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেখছেন, আবার কেউ নিজের মুখটিকে ফুলের সৌন্দর্যে রাঙাতে ক্যামেরার ফ্রেমে বন্দী করে রাখছেন। মেলার উদ্বোধনী দিনেই কেউ আসেন বন্ধু-বান্ধবীর সঙ্গে, আবার কেউ আসেন সপরিবারে। কেউ আসেন একা। শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে নানা বয়সী মানুষের পদচারণায় মেলার প্রথম দিনটিই জমে ওঠে। মেলায় সবচেয়ে বেশি ভিড় তরুণ-তরুণীদের। পুষ্পমেলায় অংশ নেয়া বৃক্ষবাজার এ্যান্ড নার্সারি নামের একটি স্টলের পুরো অংশজুড়ে ছিল বিদেশী নানা ফুলের সমাহার। ফুল আর ফুলের গাছে সাজানো স্টলের সামনে দর্শনার্থীদের ভিড়ও ছিল বেশি। স্টল মালিক শফিউজ্জামান বলেন, তার স্টলে শুধু গোলাপই আছে ১৫ প্রজাতির। সর্বনি¤œ ৩০ টাকা থেকে তিন হাজার টাকা দামের ফুলের গাছ রয়েছে তার স্টলে। ‘মা নার্সারি’ স্টলে গিয়ে দেখা যায়, এই স্টলেও হরেক রকমের বিদেশী ফুল ও ফুলগাছ রয়েছে। তবে চোখ ধাঁধানো দেশী ফুলের নানা জাতের গাছ রয়েছে এই স্টলে। স্টল মালিক শামিম জানান, তার স্টলে স্টার, গ্যাজানিয়া, গাদা, গোলাপ, ডালিয়া, জারবেরা, ক্রিজিয়াম, সালেসিয়া, ইফোরবিয়াসহ নানা প্রজাতির দেশী-বিদেশী ফুল রয়েছে। পুষ্পমেলায় গিয়ে কাজিহাটা এলাকার গৃহবধূ সুবর্ণা পারভীন বলেন, বাহারি ধরনের এতো ফুল সচরাচর দেখা যায় না। অনেক ফুলপ্রেমী আছেন যারা বাইরে নার্সারিতে গিয়ে ভাল ফুল পান না। এই মেলায় এসে যেমন চারা পাবেন তেমনি ফুলের চাষ এবং পরিচর্যা সম্পর্কে অনেক কিছু জানা যাবে। তাই প্রতিবছরই মেলায় আসি এবং টবসহ ফুলের গাছ কিনে নিয়ে যাই। বৈকালি সংঘের সভাপতি রইস উদ্দিন বাবু বলেন, আধুনিক যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশীয় ফুলের সঙ্গে বিদেশী জাতের নানা ফুল এখন দেশের উচ্চবিত্ত মানুষের বাগান ও ঘরবাড়ির সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে শোভা পায়। এগুলো ফুলপ্রেমী মানুষের মনে বাড়তি আনন্দ দিয়ে থাকে। নামী-দামী অনেক ফুল সাধারণ মানুষের চোখে খুব একটা পড়ে না। তারা এ ফুলগুলোর সৌন্দর্য উপভোগ করতেও পারেন না। সেদিক বিবেচনা করেই প্রতিবছর আমাদের এ আয়োজন। এবার মেলা চলবে আগামী ১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। রয়েছে ৩০টি স্টল। প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মেলা চলবে। সবার কাছে মেলাকে প্রাণবন্ত করতে মেলার সঙ্গে এবারও নানা বয়সী শিশুদের আবৃত্তি, চিত্রাঙ্কন, নৃত্য, দেশের গান ও ছড়াগান প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে। মেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে বিজয়ী শিশুদের মাঝে বিতরণ করা হবে পুরস্কার।
×