ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

রেজিস্ট্রেশন কোডে রেলের টিকেট বিক্রি, ক্ষোভ কালোবাজারিদের

প্রকাশিত: ১০:৫৪, ২৯ জানুয়ারি ২০১৯

রেজিস্ট্রেশন কোডে রেলের টিকেট বিক্রি, ক্ষোভ কালোবাজারিদের

মাকসুদ আহমদ, চট্টগ্রাম অফিস ॥ জাতীয় পরিচয়পত্র বা মোবাইলের নাম্বার অনুযায়ী রেজিস্ট্রেশনে প্রাপ্ত কোডে রেলের টিকেট ইস্যুতে ক্ষোভ কালোবাজারিদের। ফলে সিন্ডিকেটের কারসাজি শুরু হয়েছে রেজিস্ট্রেশন কোডের বিপরীতে টিকেট ইস্যুকরণের সিদ্ধান্ত বাতিলে। টিকেট কালোবাজারি দমাতে রেলের পক্ষ থেকে নেয়া নতুন এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন রেল কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সচেতন যাত্রীরা। সে অনুযায়ী গত ১৫ জানুয়ারি থেকে সোনার বাংলা ট্রেনের যাত্রীর নাম, মোবাইল নাম্বার ও জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্ম নিবন্ধন সঙ্গে রাখতে হবে টিকেট কিনতে আসাদের। জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্ম নিবন্ধন নাম্বার ব্যাতীত রেজিস্ট্রেশন কোড না থাকলে সোনার বাংলা আন্তঃনগর ট্রেনের টিকেট বিক্রি বন্ধ করা হয়েছে। এদিকে, প্রভাব খাটানো বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার অপসাংবাদিকের নামে ইস্যু করা পরে কালোবাজারিদের হাতে পাওয়া যাচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। অপরদিকে, টিকেট কালোবাজারিরাও রেলের এই সিদ্ধান্ত বাতিলের জন্য ওই সকল অসাধু ব্যক্তিদের দ্বারস্থ হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে মূল টিকেট প্রত্যাশীরা রেলের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, টিকেট কিনতে আসাদের অবশ্যই জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্ম নিবন্ধন রয়েছে তারাই রেজিস্ট্রেশন কোডের আওতায় আসবেন। টিকেট কালোবাজারিদের কারণে যাত্রীদের আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি মানসিকভাবেও বিপর্যস্ত হতে হতো। অভিযোগ রয়েছে, চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে যাওয়া আন্তঃনগর ট্রেনের টিকেটের চেয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকাদের সংখ্যা অনেক বেশি থাকে। ফলে নিমিষেই টিকেট বিক্রি হয়ে যায়। সিসিটিভি ফুটেজ থেকে দেখা যায়, একই ব্যক্তি বার বার টিকেট নেয়। ফলে যাত্রীবেশী এসব কালোবাজারিকে দমানো যাচ্ছিল না। সিসিটিভির ফুটেজ অনুযায়ী রেলের নিরাপত্তারক্ষীসহ বুকিং ক্লার্করাও বিভিন্ন সময়ে টিকেট কালোবাজারির সঙ্গে জড়িত থাকার অপরাধে বিভাগীয় শাস্তি ভোগ করেছেন। বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে টিকেট কালোবাজারির গ্রেফতারের ঘটনায় কিছুদিন বন্ধ থাকলেও আবারও শুরু হয়। বিশেষ করে চট্টগ্রাম রেলস্টেশন কেন্দ্রিক বিভিন্ন মার্কেটে কর্মরত শ্রমিকদের সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি। এমন তথ্য বেরিয়ে এসেছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের হাতে টিকেট কালোবাজারি হিসেবে গ্রেফতার হওয়াদের কাছ থেকে। সিএমপি’র গোয়েন্দা বিভাগের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, টিকেট কালোবাজারি হিসেবে গ্রেফতার হওয়া বিভিন্ন আসামি জানিয়েছে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার কয়েক অপসাংবাদিক প্রতিদিনই তাদের মাধ্যমে টিকেট বিক্রি করেন কালোবাজারে। কিন্তু হাতে নাতে যারা ধরা পড়ে তাদেরকেই আসামি করে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। ফলে সাংবাদিকতার আড়ালে থেকে যারা প্রভাব খাটিয়ে টিকেট কালোবাজারে বিক্রি করতে হতদরিদ্র শ্রেণীকে ব্যবহার করেছে তারা মূলত বহাল তবিয়তে রয়ে গেছে। রেলের পূর্বাঞ্চলীয় বাণিজ্যিক বিভাগের পক্ষ থেকে জানা গেছে, গত ১ জানুয়ারি থেকে অনলাইনে জাতীয় পরিচয়পত্রের নাম্বারের ভিত্তিতে সোনার বাংলা টিকিটি বিক্রি শুরু হয়েছে। ক্রমান্বয়ে যে কোন আন্তঃনগর ট্রেনের টিকেট ইস্যুতে এই নিয়ম কার্যকর হবে। চট্টগ্রাম রেলস্টেশনের কাউন্টার থেকে টিকেট বিক্রিতে গত ১৫ জানুয়ারি থেকে ২৪ জানুয়ারি সোনার বাংলা ট্রেনে যাত্রার মধ্যদিয়ে শুরু হয়েছে। এ বিষয়ে রেলের পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা সরদার শাহদাত আলী জানিয়েছেন, যাত্রীর নাম, মোবাইল নাম্বারও জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্ম নিবন্ধনের নাম্বারের বিপরীতে রেজিস্ট্রেশন কোড পাওয়া যায়। সেই কোডের ভিত্তিতে ট্রেনের টিকেট বিক্রি হয় কাউন্টার থেকে। এক্ষেত্রে সুফলও পাওয়া যাচ্ছে। কারণ একটি ট্রেনে একটি আইডির বিপরীতে একবার টিকেট ইস্যু করার পাশাপাশি সর্বোচ্চ চারটি টিকেট বিক্রি করা হচ্ছে। যেহেতু সফটওয়্যার ব্যবহার করার কারণে একটি নাম্বার একাধিকবার অন্তর্ভুক্তি দেয়া যাচ্ছে না। সেহেতু টিকেট কালোবাজারে বিক্রির সুযোগ অনেকাংশে খর্ব হয়েছে। আস্তে আস্তে সব আন্তঃনগর ট্রেন এই সিস্টেমের আওতায় চলে আসবে।
×