ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জিয়া অরফানেজ দুর্নীতি মামলার হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ

প্রকাশিত: ১০:৫৩, ২৯ জানুয়ারি ২০১৯

জিয়া অরফানেজ দুর্নীতি মামলার হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার পাঁচ বছরের সাজা বাড়িয়ে ১০ বছরের সাজা বৃদ্ধির হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়েছে। দুই বিচারপতির স্বাক্ষরের পর ওই রায় সুপ্রীমকোর্টের ওয়েবসাইটে দেয়া হয়েছে। সোমবার ১৭৭ পৃষ্ঠার এই রায় সুপ্রীমকোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়। এর আগে ২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ বিচারিক আদালতের দেয়া ৫ বছরের সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর করে আদেশ প্রদান করে। এই মামলায় খালেদা জিয়া মূল আসামি, যে কারণে তার সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর কারাদ- দেয়া হয়েছে বলে পূর্ণাঙ্গ রায়ে বলা হয়েছে। এছাড়া সাজা কম দেয়ায় নিম্ন আদালতের ব্যাখ্যার সঙ্গে একমত নয় হাইকোর্ট বিভাগ- তাও বলা হয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। তিনি বলেন, এখানে রাষ্ট্রীয় স্বার্থ জড়িত, পদ এখানে বড় নয়। এই রায়ের ফলে ভবিষ্যতে সবাই সতর্ক হবে। গত বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায়ে খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদ- দেন ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ আদালতের বিচারক ড. মোঃ আখতারুজ্জামান। ওইদিন থেকেই তিনি কারাগারে রয়েছেন। এছাড়া রায়ে ওইদিন খালেদা জিয়ার বড় ছেলে ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মাগুরার সাবেক সংসদ সদস্য কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, সাবেক মুখ্য সচিব ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমানকে ১০ বছর করে কারাদ- দেয়া হয়। রায়ের বিরুদ্ধে আপীল দায়ের করলে হাইকোর্ট বিভাগ আপীল শুনানি শেষে খালেদা জিয়ার সাজা ৫ বছর বাড়িয়ে দেয় আদালত। বাকিদের সাজা বহাল থাকে। এতিমদের জন্য বিদেশ থেকে আসা ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে খালাস চেয়ে হাইকোর্টে আপীল করেন খালেদা জিয়া, কাজী সালিমুল হক কামাল এবং ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ। ২০১৮ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মোঃ মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ এই তিন আসামির আপীল শুনানির জন্য আদেশ দেয়। একই সঙ্গে মামলার আসামি খালেদা জিয়ার সাজা বৃদ্ধি চেয়ে রিভিশন আবেদন করে দুদক। দুদকের আবেদনের পর জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার সাজা কেন বৃদ্ধি করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করে হাইকোর্ট। পরে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা এ মামলায় মোট ২৮ কার্যদিবসসহ উভয়পক্ষ মোট ৩২ দিন যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন। এরপর এ মামলায় খালেদা জিয়াকে চার মাসের জামিন দেয় হাইকোর্টের ওই একই বেঞ্চ। কিন্তু সেই জামিনাদেশের বিরুদ্ধে দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষ আপীল করলে আপীল বিভাগ গত ১৬ মে জিয়া অরফানেজ মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন বহাল রাখে এবং ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে আপীল নিষ্পত্তি করতে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চকে নির্দেশ দেয়। সেই নির্দেশের ধারাবাহিকতা হিসেবেই আপীল নিষ্পত্তির সময় বৃদ্ধি চেয়ে পুনরায় রিভিউ আবেদন দায়ের করেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। সে আবেদনের শুনানি নিয়ে খালেদা জিয়ার আপীল নিষ্পত্তি করতে হাইকোর্টকে ৩১ অক্টোবর সময় দেয় আপীল বিভাগ। কিন্তু এরপরও খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা আপীল নিষ্পত্তিতে আরও সময় চেয়ে আপীল বিভাগে আবেদন করলে তা খারিজ করে দেয় আপীল বিভাগ। একইসঙ্গে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা হাইকোর্টে আপীল শুনানিতে হাজির না হওয়ায় ২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর রায় দেয় বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মোঃ মোস্তাফিজুর রহমানের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ। মামলার এজাহার থেকে জানা গেছে, এতিমদের জন্য বিদেশ থেকে আসা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ২০১০ সালের ৫ আগস্ট খালেদা জিয়া ও তার ছেলে তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন দুদকের উপ-পরিচালক হারুন আর রশীদ। ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ খালেদা জিয়াসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে আদালত। মামলায় খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান ছাড়া অন্য আসামিরা হলেন- মাগুরার সাবেক সংসদ সদস্য কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান।
×