ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

উপজেলা নির্বাচন

সিলেটে হতাশায় ভুগছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা

প্রকাশিত: ১০:১৮, ২৮ জানুয়ারি ২০১৯

 সিলেটে হতাশায় ভুগছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা

সালাম মশরুর, সিলেট অফিস ॥ ধানের শীষ ছেড়ে নৌকার বৈঠা ধরছেন নেতাকর্মীরা। জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি আর সহজে শিরদাঁড়া সোজা করতে পারবে না। এমন ধারণা এখন তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মধ্যে দানা বাঁধতে শুরু করেছে। চরম হতাশায় ভুগছেন মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে স্বপ্ন দেখেছিলেন তারা। ধারণা ছিল, দলের উল্লেখযোগ্য বিজয় হলে নিজেরা আবার চাঙ্গা হয়ে উঠবেন। কিন্তু নির্বাচনকালীন দলের নেতৃত্ব সঙ্কট। জনগণের আস্থার সঙ্কট, নির্বাচনে দলের ভরাডুবি হয়েছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ জয়ের পর বিএনপির রাজনীতিতে বিরাট ধস নেমেছে। কর্মীরা এখন দল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে শুরু করেছেন। জ্বালাও পোড়াও করে দলের জন্য জীবনবাজি রেখে এখন ফলাফল শূন্য অবস্থা। নাশকতামূলক কর্মকা-ের কারণে একাধিক মামলার আসামি হয়ে এখন ঘরছাড়া দিন যাপন করছেন অনেকে। তাদের পাশে দাঁড়ানোর মতো লোকও পাওয়া যাচ্ছে না। সংসদ নির্বাচনের পর বর্তমানে গ্রামেগঞ্জে উপজেলা নির্বাচনের বাতাস বইতে শুরু করেছে। নিজের প্রার্থী মাঠে থাকলে নেতাকর্মীরা শেষ মুহূর্তে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার লড়াই করতে পারত। বিএনপি উপজেলা নির্বাচনে যাচ্ছে না, দলের এমন সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছেন নেতাকর্মীরা। বর্তমানে বিভিন্ন উপজেলায় বিভিন্ন সমর্থিত চেয়ারম্যানরা রয়েছেন। অনেক স্থানে নতুন প্রার্থীরা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্বাচনে না যাওয়ার এমন সিদ্ধান্তে তারা অসন্তুষ্ট হয়েছেন। কারণ তারা এমপি মন্ত্রী হওয়ার প্রতিযোগিতায় যেতে পারছেন না। তাদের কাছে উপজেলা চেয়ারম্যান পদই ভরসা। এই পর্যায়ে যদি দলের সিদ্ধান্ত তাদের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায় তাহলে তারা সেটা কতটুকু মেনে নেবেন। সিলেটের বিভিন্ন উপজেলায় আওয়ামী লীগের পাশাপাশি বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন। প্রতিদিন তারা উঠান বৈঠক, কর্মিসভা করছেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে স্রোতের বিপরীতে যাওয়ার মতো চিন্তা নেই মাঠের কর্মীদের মধ্যে। বর্তমান সরকারের উন্নয়ন কর্মকা-ের স্রোতের কাছে বিরোধী দলের গতানুগতিক স্টাইলের আন্দোলন এখন আর আলোর মুখ দেখবে না। মানুষের সম্মুখে বিরোধী দলের এখন দাঁড়ানোরই কোন পথ খোলা নেই। মানুষ এখন সরকারের উন্নয়নের দিকে দুচোখ মেলে তাকিয়ে আছে। আগামীতে বিএনপি মাথা সোজা করে কবে দাঁড়াবে, এ নিয়ে ভেবে আর সময় নষ্ট করতে চাচ্ছেন না অনেকেই। তাইতো দলবদলের হিড়িক পড়েছে সিলেটে। ইতোমধ্যে বিএনপি সমর্থিত কয়েকজন বর্তমান ও সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান যোগ দিয়েছেন আওয়ামী লীগে। তারা হাতে থাকা ‘ধানের শীষ’ রেখে এখন মাঝি হয়ে ‘নৌকার’ বৈঠা ধরছেন। তবে এমন দলবদলে বিএনপির কোন ক্ষতি হবে না বলে দাবি করছেন দলের শীর্ষ নেতারা। জেলা বিএনপির উপদেষ্টা ও দক্ষিণ সুরমা উপজেলার কুচাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কালাম শুক্রবার রাতে স্থানীয় সংসদ সদস্যের হাতে ফুলের নৌকা উপহার দিয়ে আওয়ামী লীগে যোগ দেন। কালাম চেয়ারম্যানের দল বদলের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে গত সপ্তাহে। এরই মাঝে ‘দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের’ অভিযোগ এনে গত সোমবার বিএনপির সব পদ থেকে তাকে অব্যাহতি দেয় জেলা বিএনপি। দক্ষিণ সুরমার কুচাইর মহিব কমিউনিটি সেন্টারে কুচাই ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোগে সিলেট-৩ আসনের সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী কয়েসকে দেয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তার হাতে ফুলের তৈরি নৌকা উপহার দিয়ে আওয়ামী লীগে যোগ দেন তিনি। এ অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দও উপস্থিত ছিলেন। এ বিষয়ে সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী বলেন, ‘দেশব্যাপী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নের অংশীদার হতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা আওয়ামী লীগে যোগদান করছেন। এর ধারাবাহিকতায় কুচাই ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আবুল কালাম আওয়ামী লীগে যোগদান করলেন। এতে অত্র ইউনিয়নের উন্নয়নমূলক কাজ গতিশীল হবে। এর আগে গত ১৮ জানুয়ারি শুক্রবার এমপি মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী কয়েসের হাতে নৌকার ফুল দিয়ে আওয়ামী লীগে যোগ দেন দক্ষিণ সুরমার বরইকান্দি ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান ও দক্ষিণ সুরমা উপজেলা বিএনপির সাবেক সেক্রেটারি হাবিব হোসেন। যদিও বিএনপির দাবি তিনি সিলেট বিএনপির কেউ নন। ক’বছর ধরে তিনি নিষ্ক্রিয় ছিলেন। এছাড়া একইদিন রাতে এমপির বাসায় তার সঙ্গে দেখা করে বালাগঞ্জ উপজেলার দেওয়ানবাজার ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুুর রশীদ কুতুব, সাবেক চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা আ ফ ম শামীম, সাবেক চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী এনায়েতুর রহমান রাজু আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। এর আগে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাত করে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন সিলেট-১ আসনে বিএনপির মনোনয়ন বঞ্চিত বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ইনাম আহমদ চৌধুরী। গত এক মাসে সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলায় বিএনপির শতাধিক নেতাকর্মী আওয়ামী লীগে যোগদান করেছেন। সীতাকুন্ডে নৌকা পেতে মরিয়া নিজস্ব সংবাদদাতা সীতাকুন্ড থেকে জানান, অনেকটা দিনক্ষণ ঠিক হওয়ায় সীতাকুন্ড উপজেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে এলাকায় সর্বত্র বইছে নির্বাচনের হাওয়া। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রেশ কাটতে না কাটতেই সারাদেশে উপজেলা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। এরই অংশ হিসেবে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণাও মার্চে ধাপে ধাপে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তবে এবারই প্রথম স্ব স্ব দলীয় প্রতীকে উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এই নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে না বলে দলের পক্ষ হতে বিভিন্ন সভা-মঞ্চে বলে বেড়ালেও এখনও তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না, তাই বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরাও তাকিয়ে আছেন কেন্দ্রীয় নির্দেশনার দিকে। এদিকে চায়ের আড্ডায় কিংবা বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে সম্ভাব্য প্রার্থীরা বিশেষ করে (আওয়ামী লীগের) চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার কথা জানান দিচ্ছে। এছাড়া দলীয় প্রতীকে নির্বাচনের সিদ্ধান্তে আওয়ামী লীগ সম্ভাব্য প্রার্থীরা শীর্ষপর্যায়ের নেতাদের সন্তুষ্টি লাভের জন্যও দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। ইতোমধ্যে সম্ভাব্য প্রার্থীরা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য এলাকায় তাদের প্রার্থী হওয়ার কথা জানিয়ে দিচ্ছে। দিনে গরম ও রাতে শীত উপেক্ষা করে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন তারা। অপরদিকে পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে কারো নাম শোনা না গেলেও নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায় চেয়ারম্যান পদে যারা দলীয় মনোনয়ন পাবে না তাদের মধ্যে কোন একজনকে ভাইস চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন দেয়া হতে পারে। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন সীতাকুন্ড উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদিকা শাহিনুর আক্তার বিউটি যিনি গত দুবারেও প্রার্থী হয়ে বিএনপির প্রার্থীর কাছে হেরেছিলেন। এছাড়া মহিলা আওয়ামী লীগের সহসভানেত্রী দেলোয়ারা বেগম ও সীতাকুন্ড যুব মহিলা লীগের সভানেত্রী জয়নব বিবি জুলির নামও সম্ভাব্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়। এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ সমর্থিত সম্ভাব্য উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীরা জানান, প্রার্থী নির্বাচনে দলীয় নির্দেশনা মেনে নেবেন, দল থেকে যাকে প্রার্থী ঘোষণা করা হবে দলের স্বার্থে তার হয়ে মাঠে কাজ করবেন। সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে আছেন বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম উত্তর জেলা যুবলীগের সভাপতি আলহাজ এসএম আল মামুন, উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোঃ ইসহাক, সাবেক উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক মহিউদ্দিন বাবলু, সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও সৈয়দপুর ইউপি তিনবারের সাবেক চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আহমেদ মঞ্জু, উপজেলা পরিষদের বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আ’লীগের উপদফতর সম্পাদক আলাউদ্দিন সাবেরী, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আ’লীগের সদস্য মোহাম্মদ ইদ্রিস, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আ’লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক পিপি এ্যাডভোকেট ভবতোষ নাথ ও বারৈয়াঢালা ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আ’লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলহাজ রেহান উদ্দিন রেহান।
×