ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

এ জন্য প্রয়োজন নগর সরকার ॥ সাঈদ খোকন

বাসযোগ্য ঢাকা গড়তে সমন্বিত কাজ করতে হবে ॥ তাজুল

প্রকাশিত: ১০:০৪, ২৮ জানুয়ারি ২০১৯

 বাসযোগ্য ঢাকা গড়তে সমন্বিত কাজ করতে হবে ॥ তাজুল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশের সকল শ্রেণীর নাগরিকদের আধুনিক সেবা প্রদানের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে সমন্বয় করে স্থানীয় সরকারকে নিয়ে সম্মিলিত কাজ করার ঘোষণা দিয়েছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী তাজুল ইসলাম। একই সঙ্গে ঢাকাকে স্বাচ্ছন্দ্য আরামদায়ক ও বসবাসযোগ্য উন্নত ঢাকা গড়তে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে সমন্বয়ের সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি। এছাড়া নগরের দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়নে ৫ বছরের জন্য পরিকল্পনা না করে এক শ’ থেকে দুই শ’ বছরের জন্য মাস্টারপ্ল্যান করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন। রবিবার ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র হানিফ মিলনায়তনে ‘আধুনিক নাগরিক সেবা ও করণীয়’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় এলজিআরডি এ আহ্বান জানান। অপরদিকে আধুনিক সেবা প্রদানের জন্য নগর সরকার গঠনের জন্য সরকারকে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। একইসঙ্গে মন্ত্রণালয়ে ৮ বছর আগের ডিএসসিসির জনবল বাড়ানোর প্রস্তাব পাসের অনুরোধ জানান মেয়র সাঈদ খোকন। মতবিনিময় সভায় স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য, সচিব এস এম গোলাম ফারুক, অতিরিক্ত সচিব মাহবুব হোসেন, ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাসকিন এ খান, স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন, রফিক আজম, ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান, সচিব শাহাবুদ্দিন খানসহ মন্ত্রণালয়ের উর্ধতন কর্মকর্তাসহ সব সাধারণ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর উপস্থিত ছিলেন। এলজিআরডি মন্ত্রী বলেন, ঢাকার দুই সিটির ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। তবে তা আরও বেগবান করতে হবে। আমরা নাগরিকদের স্বস্তিদায়ক ঢাকা উপহার দিতে চাই, যন্ত্রণা দিতে চাই না। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমার গ্রাম আমার শহরের কাজ চলছে। গ্রামের মতোই শহরে নির্মল বায়ু ও সুন্দর পরিবেশ বজায় রাখতে কাজ করতে হবে। যখন তখন রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি ও যত্রতত্র বাস থামানো বন্ধ করে বাসযোগ্য ঢাকা গড়তে কাজ করতে হবে। তাজুল ইসলাম বলেন, মূলত সুদূরপ্রসারী কোন মাস্টারপ্ল্যান না থাকা ঢাকার প্রধান সমস্যা। তবে সমস্যা বিবেচনায় রেখে সমাধান করতে হবে। মন্ত্রী বলেন, আমরা একসঙ্গে চলতে এবং কাজ করতে চাই। মশা নিধন, রাস্তা সংস্কার, খোঁড়াখুঁড়ি এগুলো দুই সিটি কর্পোরেশন এবং সেবা সংস্থাগুলোকে একসঙ্গে করতে হবে। ঘিঞ্জি ঢাকার অবশ্য তাৎক্ষণিক কোন সমাধান নেই। আমি যদি বলি তাৎক্ষণিক সমাধান আছে তাহলে তা হবে ড্রামাটিক্যাল। কাউন্সিলরদের তুলে ধরা সমস্যা সম্পর্কে মন্ত্রী বলেন, হকার সমস্যা সমাধানে আপনারা সিটি কর্পোরেশন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী একসঙ্গে বসুন, আলোচনা করুন। প্রয়োজনে আমিও সাহায্য করব ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব। তিনি রাজধানীর সুয়্যারেজ ব্যবস্থার সার্বিক উন্নয়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে ওয়াসা এমডিকে নির্দেশ দেন। মন্ত্রী বলেন, খাদ্যে ভেজাল বন্ধে একে নিয়মিত ব্যবস্থাপনার মধ্যে আনতে হবে, যেখানে কাউন্সিলররাও সম্পৃক্ত থাকতে পারেন। এ সময় বর্জ্য থেকে বিদ্যুত উৎপাদনে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ে কাজ চলছে ও কিভাবে বর্জ্যকে শূন্যের কোটায় আনা যায় সে প্রক্রিয়া চলছে। আমরা ঢাকার বুড়িগঙ্গা, মেঘনা ও চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর নাব্য ফিরিয়ে আনতে কাজ করছি। অনুষ্ঠানে দায়িত্ব গ্রহণের সাড়ে তিন বছরের কি কি উন্নয়ন হয়েছে তা প্রজেক্টরের মাধ্যমে মন্ত্রীর কাছে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়। মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, নাগরিকের আধুনিক সুবিধা নিশ্চিতে নগর সরকারের বিকল্প নেই। এই সংস্থার মাধ্যমে নাগরিক সেবা নিশ্চিতে সমন্বিত কাজ করতে হবে। আর এজন্য প্রয়োজন নগর সরকারের। মন্ত্রীর কাছে এ দাবিটি আমি পুনরায় জানাচ্ছি। তিনি বলেন, ঢাকা সিটি কর্পোরেশন (ডিসিসি) বিভাজনের পর দক্ষিণ মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ’১১ সালে ঢাকাকে বিভাজন করা হয়। হয়তো ভূমি জরিপ বা এলাকাগত বিষয়ের কারণে এই ক্ষতি হয়েছে। বিভাজনের পর রাজস্ব আয়ের ৪০ ভাগ পায় ডিএসসিসি ও ৬০ ভাগ পায় ডিএনসিসি। অপরদিকে রাজস্ব ব্যয়ের ৬০ ভাগ খরচ হয় ডিএসসিসির আর ৪০ ভাগ হয় ডিএনসিসির। এটা বড় বৈষম্য। মেয়র বলেন, আমরা নানাবিধ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে চলছি। আমরা ইতিবাচক পরিবর্তন করতে সক্ষম হয়েছি। চার বছর আগের ঢাকা ও আজকের ঢাকায় অনেক পরিবর্তন হয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা কাটিয়ে আমরা জনগণকে সচেতন করে এই দুইয়ের সমন্বয়ে বাসযোগ্য ঢাকা গড়ে তোলার চেষ্টা করছি। সাঈদ খোকন কষ্টের সঙ্গে মন্ত্রীকে বলেন, আট বছর আগে জনবল কাঠামো অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছি। কিন্তু আজও তা অনুমোদন হয়নি, এটা দুঃখজনক। বর্তমানে আমাদের মাত্র ৪০ শতাংশ জনবল রয়েছে যা দিয়ে কোনভাবেই শতভাগ নাগরিক সেবা দেয়া সম্ভব নয়। যেকোন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে একটি প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রীয় সরকারের দিকে তাকিয়ে থাকবে এটা হতে পারে না। তাই মন্ত্রীকে বলতে চাই, আমাদের প্রয়োজনীয় জনবল দিন। ডিএসসিসির রাজস্ব আয় বাড়ানোর বিষয়ে তিনি বলেন, ৩০ বছর ধরে ট্যাক্স এ্যাসেসমেন্ট বন্ধ। নির্বাচনের আগে আমরা ট্যাক্স এ্যাসেসমেন্ট করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনের কারণে তা বন্ধ করতে হয়েছিল। আমাদের এ সেবা সংস্থাটিকে স্বাবলম্বী করতে ওই প্রজ্ঞাপনটি উঠিয়ে নেয়ার দাবি জানাচ্ছি। অনুষ্ঠানে সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও কাউন্সিলরদের বিভিন্ন দাবি দাওয়া মন্ত্রীর সামনে তুরে ধরা হয়।
×