ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

কার্ডিফের ওয়েলস এ্যাসেম্বলিতে আলোচনা সভা

বিদেশী ও প্রবাসীদের কাছে উন্নয়ন বার্তা সঠিকভাবে পৌঁছায়নি

প্রকাশিত: ১০:০৪, ২৮ জানুয়ারি ২০১৯

বিদেশী ও প্রবাসীদের  কাছে উন্নয়ন বার্তা সঠিকভাবে পৌঁছায়নি

সাজিয়া স্নিগ্ধা, লন্ডন থেকে ॥ গত ১০ বছরে বাংলাদেশে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। এমন কোন এলাকা নেই, যেখানে উন্নয়নের ছোঁয়া পৌঁছায়নি। মানুষের জীবনযাত্রার আমূল পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু বিদেশী ও প্রবাসীদের কাছে সে উন্নয়ন বার্তা সঠিকভাবে পৌঁছায়নি। কার্ডিফের ওয়েলস এ্যাসেম্বলিতে ‘বাংলাদেশ এ গোল্ডেন জার্নি টু ডেভেলপমেন্ট’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। যুক্তরাজ্যভিত্তিক গবেষণামূলক প্রতিষ্ঠান ‘স্টাডি সার্কেল’ এ আলোচনা সভার আয়োজন করে। বাংলাদেশের উন্নয়ন এবং বর্তমান চিত্র নিয়ে ১০ ওয়েলস এ্যাসেম্বলি মেম্বারসহ ব্রিটিশ-বাংলাদেশী শিক্ষাবিদ, রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক, উন্নয়নকর্মী এবং কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এতে বক্তব্য রাখেন। ওয়েলস এ্যাসেম্বলির হেলথ এ্যান্ড সোস্যাল সার্ভিসের ডেপুটি মিনিস্টার জুলি মরগান এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন। সভাপতিত্ব করেন স্টাডি সার্কেলের চেয়ারপার্সন সৈয়দ মোজাম্মেল আলী। আলোচনায় স্পীকার হিসেবে বক্তব্য রাখেন ওয়েলস এ্যাসেম্বলির ডেপুটি মিনিস্টার এবং চীফ হুইপ জেন হাট, ডেপুটি মিনিস্টার জেনি রাথবন, মোহাম্মদ আসগার, গবেষক সাজিয়া স্নিগ্ধা, লন্ডনে বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনিম, আনসার আহমেদ উল্লাহ, বিচারপতি সামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকসহ এ্যাসেম্বলি মেম্বারগণ। সভাপতির বক্তব্যে সৈয়দ মোজাম্মেল আলী বলেন, গত ১০ বছরে বাংলাদেশে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। এমন কোন এলাকা নেই, যেখানে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। মানুষের জীবনযাত্রার আমূল পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু বিদেশী এবং প্রবাসীদের কাছে সে উন্নয়ন বার্তা সঠিকভাবে পৌঁছায়নি। আর সে কাজটিই স্টাডি সার্কেল শুরু করেছে। বাংলাদেশের উন্নয়ন বার্তা প্রবাসী ও বন্ধু রাষ্ট্রের কাছে তুলে ধরছে স্টাডি সার্কেল। ইতোমধ্যে ইউরোপিয়ান পার্লামেন্ট, ব্রিটিশ পার্লামেন্টের এমপিসহ ওয়েলস এ্যাসেম্বলির সদস্যদের কাছে বাংলাদেশের প্রতিটি খাতের উন্নয়ন চিত্র নিয়ে স্টাডি সার্কেলের প্রকাশনা পৌঁছে দেয়া হয়েছে। ওয়েলস এ্যাসেম্বলির ডেপুটি মিনিস্টার এবং চীফ হুইপ জেন হাট বাংলাদেশের তিনটি বিষয়ে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ আরও বিস্তারিত জানতে চান। তিনি ক্লাইমেট চেঞ্জ, কমিউনিটি হেলথ কেয়ার ও স্যানিটেশন এবং জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে সরকারী ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা করেন। এ্যাসেম্বলি মেম্বার ফর কার্ডিফ সেন্ট্রাল, ডেপুটি মিনিস্টার জেনি রাথবন রাজধানী ঢাকাকে অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা উল্লেখ করে শহরটির পরিবেশ দূষণ রোধে সরকারের নেয়া পদক্ষেপ এবং সচেতনতা বৃদ্ধিতে আরও কার্যকরী হওয়ার পরামর্শ দেন। এ্যাসেম্বলি মেম্বার ফর সাউথ ওয়েলস ইস্ট মোহাম্মদ আসগার বলেন, অনেকেই জানেন না যে, বাংলাদেশ শুধু খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়নি, ব্রিটেনেও বিপুল পরিমাণ খাদ্য রফতানি করছে। বাংলাদেশের উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি কামনা এবং আগামীতে দ্বিপক্ষীয় চুক্তির মাধ্যমে ভাল কিছু করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। লন্ডনে বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনিম বলেন, নারীর ক্ষমতায়নসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যান্য দেশের জন্য উন্নয়নের নজির স্থাপন করেছে। বাংলাদেশের উন্নয়নকে ‘গোল্ডেন ডেভেলপমেন্ট’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলো বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে। বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের ‘গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ’ শীর্ষক সর্বশেষ রিপোর্টে একই অভিমত তুলে ধরা হয়েছে। এই রিপোর্টে নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষ এবং বৈশ্বিক সূচকে পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে বর্তমান সরকারের সার্বিক উন্নয়ন কার্যক্রম তুলে ধরে বলেন, বিশ্বের থিঙ্কট্যাঙ্কদের কাছে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের বিস্ময়। বাংলাদেশে বিনিয়োগের প্রচুর সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বিনিয়োগের আহ্বান জানান। কাউন্সিলর কেভিন বলেন, উন্নয়ন বিশেষ করে দ্রুত ও অব্যাহত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং অবকাঠামো উন্নয়নে বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই অনেক দেশের রোল মডেল হয়ে উঠেছে। শিক্ষাবিদ স্তেফেনি মিয়া বলেন, শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং নারী পুরুষের সমতায় বাংলাদেশ নিঃসন্দেহে ঈর্ষণীয় পর্যায়ে রয়েছে। বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বাংলাদেশে ৩০ ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা এবং জনসাধারণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের চিত্র উপস্থাপন করেন। সাংবাদিক আনসার আহমেদ উল্লাহ স্টাডি সার্কেলের কার্যক্রম তুলে ধরার পাশাপাশি প্রবাসে থাকা উচ্চশিক্ষিত সকল বাংলাদেশীকে দেশের উন্নয়নে কার্যকরী ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান। এছাড়াও স্পীকাররা ‘স্টাডি সার্কেলে’র প্রকাশনা ‘বাংলাদেশ এ গোল্ডেন জার্নি টু ডেভেলপমেন্ট’-এর ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, বাংলাদেশের দ্রুত উন্নয়ন বিশ্বে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। প্রশ্নোত্তর পর্বে ক্লাইমেট চেঞ্জ, রোহিঙ্গা ইস্যুর দ্রুত সমাধানে বাংলাদেশ সরকার এবং অন্যান্য রাষ্ট্রের পরিকল্পনা, ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন, স্টাডি সার্কেলের ভবিষ্যত পরিকল্পনা, এত বিশাল সংখ্যাগরিষ্ঠতার পর বর্তমান সরকারের সামনে চ্যালেঞ্জ ও দায়বদ্ধতা, জঙ্গীবাদ দমনে বাংলাদেশের গৃহীত পদক্ষেপসহ বিভিন্ন বিষয় উঠে আসে।
×