ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সৈয়দপুরে বৃদ্ধ স্বামী-স্ত্রীকে গলা কেটে হত্যা

প্রকাশিত: ০৯:৫৫, ২৮ জানুয়ারি ২০১৯

 সৈয়দপুরে বৃদ্ধ  স্বামী-স্ত্রীকে  গলা কেটে হত্যা

সংবাদদাতা, সৈয়দপুর, নীলফামারী, ২৭ জানুয়ারি ॥ সৈয়দপুরে বৃদ্ধ স্বামী-স্ত্রীকে গলা কেটে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। রবিবার দুপুরে উপজেলার খাতামধুপুর ইউনিয়নের বালাপাড়ার একটি খামার থেকে ধারালো অস্ত্রে কোপানো ও গলাকাটা অবস্থায় ওই দম্পত্তির লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। সঙ্কটাপন্ন অবস্থায় আরও একজনকে উদ্ধার করে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। নিহতরা হলেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী মোঃ নজরুল ইসলাম (৬৫) ও তার স্ত্রী সালমা বেগম (৫৫)। এ ঘটনায় জমির মালিকসহ সন্দেহভাজন ছয়জনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। এলাকাবাসী ও নিহতের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, সৈয়দপুর শহরের অদূরে চাকলাহাট দক্ষিণপাড়ার মৃত রিয়াজ উদ্দিনের ছেলে মোঃ নজরুল ইসলাম। তার প্রথম স্ত্রী ৩ ছেলে নিয়ে ওই এলাকায় বসবাস করেন। দ্বিতীয় স্ত্রী সালমা বেগম তার দুই ছেলে এবং ১ মেয়েকে নিয়ে কয়েক যুগ ধরে বসবাস করছেন শহরের পুরাতন বাবুপাড়ার সবুজ সংঘ মাঠসংলগ্ন এলাকায়। দুই পরিবারের স্ত্রী-সন্তানরা ভিন্ন ভিন্নভাবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় সকলের সুখেই দিন কাটছিল। তার দ্বিতীয় স্ত্রীর সোহেল (২৫) ও স্বপন (২৮)সহ ৫ অংশীদার মিলে পাঁচ বছর আগে উপজেলার খাতামধুপুর ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের তেঁতুলতলা বালাপাড়ার হাজি আসলামের প্রায় ২ একর জমি ১০ বছর মেয়াদে লিজ নিয়ে ভেড়ার খামার গড়ে তোলেন। তবে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই খামারের জায়গাটি ছেড়ে দেয়ার জন্য হাজি আসলাম ক্রমাগত চাপ দিতে থাকেন। নজরুল ইসলাম চুক্তির শর্তানুযায়ী খামার ছেড়ে দিতে অস্বীকৃতি জানালে এ নিয়েই উভয়পক্ষের মধ্যে বিরোধ চলে আসছিল। পুলিশ জানায়, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে খামারে তিনজনের ক্ষত-বিক্ষত, নিথর ও রক্তাক্ত দেহ পড়ে থাকতে দেখি। এ সময় নৈশ প্রহরীসহ স্থানীয়রা আঃ রাজ্জাককে জীবিত উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য প্রথমে তারাগঞ্জ, এর পর রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। এ ঘটনার ৪ দিন আগে স্বামী-স্ত্রী মিলে এখানে রাত যাপন করছিলেন বলে স্থানীয় ও পারিবারিক সূত্র জানিয়েছে। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে দুর্বৃত্তরা পরিকল্পিতভাবে প্রথমে নৈশ প্রহরী আব্দুর রাজ্জাককে জখম করে। পরে নজরুল ও সালমাকে কুপিয়ে ও গলাকেটে হত্যা করে। জানা যায়, নজরুল ইসলামের মাথা কোপানো, পায়ের রগ, গলা, নাক ধারালো অস্ত্র দিয়ে কাটা এবং সালমা বেগমের গলা কাটা। পাশাপাশি আঃ রাজ্জাকের মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় মারাত্মক জখম করা হয়েছে। তবে খামারের নৈশ প্রহরী আঃ রাজ্জাক সঙ্কটাপন্ন অবস্থায় রংপুর মেডিক্যাল হাসপাতালের সার্জারি ওয়ার্ডে বাঁচার আকুতি জানাচ্ছে। আমি সব জানি। কারা এ হত্যাকা- ঘটিয়েছে। খবর পেয়ে রংপুর বিভাগীয় কমিশনার জয়নুল বারী ও নীলফামারী জেলা প্রশাসক নাজিয়া শিরিন, জেলা পুলিশ সুপার মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন, নীলফামারী অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অশোক কুমার পাল, উপজেলা নির্বাহী অফিসার এস এম গোলাম কিবরিয়া ও ওসি শাহজাহান পাশা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। সৈয়দপুর থানার অফিসার ইনচার্জ শাহজাহান পাশা জানান, এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য খামারের জমির মালিক হাজি আসলাম উদ্দিন, তার দুই পুত্র আকতারুজ্জামান লাবু ও মেহেদি হাসান সজল এবং খামারের বুয়া রহিমা বেগম, এলাকাবাসী আব্দুর রশিদ, আব্দুল আজিজকে আটক করা হয়েছে। তিনি বলেন, একটি হত্যা মামলা রুজুর প্রস্ততি চলছে এবং লাশ ময়নাতদন্তের জন্য নীলফামারী জেলা সদর মর্গে পাঠানো হয়েছে। বিভাগীয় কমিশনার জয়নুল বারী বলেন, এটি পরিকল্পিত ও নৃশংস হত্যাকা-ের ঘটনা। আশা করছি, দ্রুত অপরাধীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় নেয়া হবে। নীলফামারী জেলা পুলিশ সুপার মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন বলেন, ঘটনার সঙ্গে যারাই জড়িত তাদের দ্রুত গ্রেফতার করা হবে।
×