ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

রিটের রায় ৭ ফেব্রুয়ারি

শিক্ষা ব্যবস্থায় কোচিং বৈরী পরিস্থিতি তৈরি করেছে ॥ এ্যামিকাস কিউরি

প্রকাশিত: ০৪:৩৭, ২৮ জানুয়ারি ২০১৯

 শিক্ষা ব্যবস্থায় কোচিং বৈরী পরিস্থিতি  তৈরি করেছে ॥ এ্যামিকাস কিউরি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ কোচিং বাণিজ্য বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে করা কয়েকটি রিটের ওপর আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেছে আদালত। রবিবার বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজীব আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেয়। আদালতে রিটকারীদের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলাম। আর দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে ছিলেন এ্যাডভোকেট মোঃ খুরশীদ আলম খান। এছাড়াও আদালতে এ্যামিকাস কিউরি হিসেবে বক্তব্য উপস্থাপন করেন ব্যারিস্টার ফিদা এম কামাল। রবিবার রুলের শুনানিতে সাবেক এ্যাটর্নি জেনারেল এ্যামিকাস কিউরি হিসেবে এ মতামত উপস্থাপন করে বলেন, শিক্ষা ব্যবস্থায় ‘কোচিং’ পদ্ধতি বৈরী পরিস্থিতি তৈরি করেছে। নীতিমালা অনুযায়ী শিক্ষক দশজন শিক্ষার্থীকে প্রাইভেট পড়াতে পারে। কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিকভাবে তারা এটা (কোচিং) করতে পারে না। এটা প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। আদালতে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে ছিলেন খুরশীদ আলম খান। এক রিটকারীর পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম। এ্যামিকাস কিউরি ছিলেন ফিদা এম কামাল। এর আগে কোচিং বাণিজ্যের অভিযোগে মতিঝিল সরকারী বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেয়া হবে না সেজন্য গত বছর কারণ দর্শানোর নোটিস দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। দুদকের প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে ওই নোটিস দেয়া হয়। পরে ওইসব নোটিস ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্য বন্ধের নীতিমালা-২০১২ নিয়ে শিক্ষকরা হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। আদালত গত বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি ওই চিঠির কার্যকারিতা ৪ মাসের জন্য স্থগিত করার পাশাপাশি রুল জারি করে। ওই আদেশের বিরুদ্ধে দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষ আপীল বিভাগে আপীল করার অনুমতি চেয়ে ‘লিভ টু আপীল’ করে। গত বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি ওই আবেদনের ওপর শুনানি শেষে আপীল বিভাগ একই বছরের ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে বিচারপতি শেখ হাসান আরিফের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চকে এ রুলের নিষ্পত্তি করতে নির্দেশ দিয়েছিল। পরে আদালত এ রুল নিষ্পত্তির জন্য সাবেক দুই এ্যাটর্নি জেনারেল হাসান আরিফ ও ফিদা এম কামালকে এ্যামিকাস কিউরি হিসেবে নিয়োগ দেয়। ফিদা এম কামাল রবিবার শুনানিতে বলেন, নীতিমালাটি (কোচিং বাণিজ্য বন্ধের নীতিমালা-২০১২) স্বাধীন নয়। সরকারী কর্মচারী নীতিমালা ১৯৮৫ অনুযায়ী যে কোন সরকারী কর্মচারীর বিরুদ্ধে সরকার ব্যবস্থা নিতে পারে। বেসরকারী শিক্ষকরা যদি আইন ভঙ্গ করেন তাহলে কী হবে? শ্রেণীকক্ষের বাইরে কোচিং চলছে। ফলে ক্লাসকে উপেক্ষা করা হচ্ছে। এটা শুধু পাস করার পদ্ধতি বাতলে দিচ্ছে। এমপিও, নন এমপিও এবং সরকারী প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা কোচিং বাণিজ্য করতে পারেন না। তখন আদালতের জ্যেষ্ঠ বিচারক বলেন, সরকার চাইলে তাদের বিষয়ে (এমপিও, নন এমপিও এবং সরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক) অন্যভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এ নীতিমালার দরকার ছিল না। আদালত এ সময় ফিদা এম কামালকে বলেন, তাহলে আপনি পরামর্শ দিচ্ছেন, এই নীতিমালার অধীনে যেসব শিক্ষকরা রয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে সরকার ব্যবস্থা নিতে পারে? ফিদা এম কামাল বলেন, এটা একটা হোস্টাইল সিচ্যুয়েশন। নীতিমালা অনুযায়ী শিক্ষক দশজন শিক্ষার্থীকে প্রাইভেট পড়াতে পারেন। কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিকভাবে তারা এটা করতে পারে না। এটা প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর লেখা উদ্ধৃত করে ফিদা এম কামাল বলেন, শিক্ষা নাগরিকের অধিকার। কোন রেগুলেটরি ফ্রেমওয়ার্ক ছাড়া কোচিং বাণিজ্য চলতে পারে না। আমরা ক্লাসরুমের পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারছি না বলেই ব্যাঙের ছাতার মতো কোচিং সেন্টার গজিয়ে উঠছে। আদালত তখন বলে, একজন শিক্ষার্থী যখন এসএসসিতে পড়ছে তখনই অভিভাবকরা তার মাথায় ঢুকিয়ে দিচ্ছে যে, তাকে ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হতে হবে। ক্লাসরুমে মেডিক্যাল-বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য যে পড়াশোনা সেটা দেয়া হয় না। ফলে শিক্ষার্থীরা কোচিংয়ে যাচ্ছে। সরকার ভর্তি পরীক্ষা বন্ধ করছে না কেন? ফিদা এম কামাল আরও বলেন, ‘কোচিংয়ে গিয়ে শিক্ষার্থী পরীক্ষায় পাস করছে, কিন্তু শিক্ষিত হচ্ছে না। শিক্ষক সম্মানী পায় ক্লাসে শিক্ষা দেয়ার জন্য, কোচিং তার পেশা নয়। প্রাইভেট টিউশনকে নীতিমালায় অনুমোদন দেয়া আছে, কোচিংকে নয়। কোচিং তার অন্তর্নিহিত অধিকার নয়। সে শিক্ষা দেবে কিন্তু কোচ হতে পারবে না।’ পরে দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান সাংবাদিকদের বলেন, কোচিং বাণিজ্য নিয়ে আজকে (রবিবার) রায় দেয়ার দিন ধার্য ছিল। এ মামলায় দুজন এ্যামিকাস কিউরি ছিলেন, একজন সাবেক এ্যাটর্নি জেনারেল হাসান আরিফ, উনি উনার বক্তব্য আগেই শেষ করেছেন। আরেকজন সাবেক এ্যাটর্নি জেনারেল ফিদা এম কামাল তার বক্তব্য দিয়েছেন। উনি খুব বিশদভাবে ব্যাখ্যা দিয়েছেন, কোচিং বাণিজ্য হলে কী কী হতে পারে, না হতে পারে। আদৌ এটা এ্যালাউ করা ঠিক কি-না- উনি আদালতের কাছে সময় চেয়েছেন, লিখিত আর্গুমেন্ট দেবেন। আদালত উনার কথা অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে শুনেছে এবং আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি রায় দেয়ার জন্য দিন ধার্য করেছে। আগামী রবিবারেরর মধ্যে ফিদা এম কামালকে উনার লিখিত বক্তব্য জমা দিতে বলা হয়েছে। তিনি বলেন, আদালত ব্যাখ্যা চেয়ে বলেছে, কোন একজন শিক্ষার্থী যদি ডাক্তার হতে চায় বা তার পরিবার চাচ্ছে সে ডাক্তার হোক, সে যদি কোচিং না করে তাহলে সে কীভাবে এটা করতে পারে? এটাকে বাণিজ্য হিসেবে কেন আমরা ট্রিট করছি। আদালত আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছে, নীতিমালার আওতায় মূল আইন না থাকা সত্ত্বেও নীতিমালা দিয়ে তো কাউকে আপনি শাস্তি দিতে পারবেন না। আইন থাকতে হবে। আইন নাই কিন্তু নীতিমালা আছে। এটা আইন কতটা পারমিট করে। এর ব্যাখ্যা চেয়েছে আদালত। এ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান বলেন, অর্থাৎ আদালতের মোদ্দা কথা, আমি যেটা বুঝতে পেরেছি, সেটা হলো, একটা সুনির্দিষ্ট আইন থাকতে হবে। আইন না রেখে শুধু নীতিমালাকে নিয়ে এ ধরনের পিউনেটিভ এ্যাকশন কতটুকু নেয়া যাবে এর সাংবিধানিক একটা ব্যাখ্যা চেয়েছে আদালত।
×