ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ডিএমপির ভুয়া মামলা খুঁজে বের করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে

প্রকাশিত: ০৪:৩৪, ২৮ জানুয়ারি ২০১৯

  ডিএমপির ভুয়া মামলা খুঁজে বের করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ গত ছয় মাসে ডিএমপিতে কোন ভুয়া মামলা হয়েছে কিনা তা খুঁজে বের করতে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কেউ ভুয়া মামলায় আসামি হয়ে থাকলে তাদের রিলিজ করে দেয়া হবে। ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া রবিবার ক্রাইম রিপোর্টার্স এ্যাসোসিয়েশনের (ক্র্যাব) নবনির্বাচিত কমিটির সঙ্গে মতবিনিময়কালে এ মন্তব্য করেন। এ সময় তিনি বলেন, আগে পুলিশ চাঁদাবাজি করত। সাধারণ মানুষকে নির্যাতন করত। ৫৪ ধারায় গ্রেফতার করে পেন্ডিং মামলায় চালান দিত। প্রকাশ্যে ঘুষ নিত। পুলিশের অপকর্মের সঙ্গে কোন কোন সাংবাদিকেরও যোগসাজশ ছিল। এখন এসব বন্ধ হয়েছে। হলুদ সাংবাদিকতা জাদুঘরে চলে গেছে। এখন পুলিশ ঘুষ খেলেও তা খায় চুরি করে, অত্যন্ত গোপনে। কারণ উর্ধতন কর্তৃপক্ষ জানতে পারলেই সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হয়। অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে বর্তমানে পুলিশের সঙ্গে সাংবাদিকদের সম্পর্ক চমৎকার। তার প্রমাণ এখন আর তুচ্ছ ঘটনা সাংবাদিকদের সঙ্গে মনোমালিন্য ও মারামারি হয় না। এভাবেই সাংবাদিক পুলিশের সম্পর্কের মূল্যায়ন করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া। তিনি বলেছেন, সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ ও মাদকের চোরাচালান নির্মূলই এখন প্রধান চ্যালেঞ্জ, এসব সুশাসন প্রতিষ্ঠার প্রতিবন্ধকতা। ডিএমপি কমিশনার বলেন, এখন উন্নয়নের মহাসড়কে বাংলাদেশ। সুশাসন নিশ্চিত করে উন্নয়ন কর্মকা- এগিয়ে নিতে হবে। সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ ও মাদকের চোরাচালান নির্মূল করাই এখন প্রধান চ্যালেঞ্জ, এসব সুশাসন প্রতিষ্ঠার প্রতিবন্ধকতা। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অতীতে সাংবাদিকদের সঙ্গে তুচ্ছ ঘটনায় পুলিশের মনোমালিন্য ঘটনা ঘটলেও এখন এগুলো শুধুই অতীত। এখনকার সম্পর্ক অনেক চমৎকার। বর্তমানে সাংবাদিকতা পেশায় আমূল পরিবর্তন এসেছে। নবীন, কর্মঠ ও শিক্ষিত তরুণরা সাংবাদিকতা পেশাকে বেছে নিয়েছেন। সব অবস্থায় সাংবাদিকদের দেশ ও জাতির স্বার্থে কাজ করতে হবে। দেশে অনেক আন্তর্জাতিক মানের ভাল সাংবাদিক রয়েছেন। কিন্তু যে কোন কারণেই হোক কোন কোন ক্ষেত্রে তারা সত্য লিখতে পারেন না। এ থেকে বেরিয়ে আসার পথ খুঁজতে হবে। পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশে বলেন, হাতে ক্ষমতা আছে বলেই যাকে তাকে ধরে চালান দেয়া যাবে না। এ ক্ষমতা চিরস্থায়ী নয়। এ সময় অতীতের অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে বলেন, ২০১৫ সালে আমি যখন কমিশনার হওয়ার পর দেখি প্রায়ই সাংবাদিকদের সঙ্গে পুলিশের ভুল বোঝাবুঝি হয়। আমার অফিসের সামনে, ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারের সামনে সাংবাদিকদের মানববন্ধন করতে হয়েছে। কিন্তু এখন এসব অতীত। উভয়পক্ষের মনোভাব পরিবর্তন হওয়ার কারণেই এখন আর অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটছে না। আসলে পুলিশের মনোভাব পরিবর্তন করতে আমি নিয়মিত কাউন্সিলিং করি। পুলিশ সদস্যদের বল প্রয়োগের চেষ্টা এবং খবরদারির মনোভাব ত্যাগ করতে হবে। ট্রাফিক সদস্যদের উদ্দেশে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ঘটনাস্থলে প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে না পারলে তাদের সঙ্গে বিরোধে জড়াবেন না। তাদের সঙ্গে বিরোধে জড়ালে উল্টো আসামি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই ঘটনাটি ভিডিও করে নিয়ে আসবেন। পরে যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন। আপনাদের সঙ্গে বডিওর্ন ক্যামেরা আছে। তাই ভিডিও করতে সমস্যা নেই। পুলিশ ভুল করলে মানুষ তা বলবেই। এ জন্য ক্ষুব্ধ না হয়ে নিজেদের সংশোধন হতে হবে। পুলিশ জেগে থাকে বলেই মানুষ ঘুমাতে পারে বলে তিনি উল্লেখ করেন। বাংলাদেশকে অমিত সম্ভাবনার দেশ উল্লেখ করে কমিশনার বলেন, এই দেশের পাসপোর্ট হবে সবচেয়ে দামী। একাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে অনেক শঙ্কা ছিল। কিন্তু জনগণ সন্ত্রাস নৈরাজ্য চায়নি বলেই তেমন কোন অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটেনি। আগামী দিনে দেশকে বোমা-সন্ত্রাস মুক্ত রাখতে ক্যাবের সহযোগিতা কামনা করে বলেন, আমরা এ দেশকে আরেকটি আফগানিস্তান বানাতে চাই না। আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, সাংবাদিকতা পেশায় আমূল পরিবর্তন এসেছে। হলুদ সাংবাদিকতা এখন জাদুঘরে। নবীন, কর্মঠ ও শিক্ষিত তরুণরা সাংবাদিকতা পেশাকে বেছে নিয়েছেন, যা আমাদের সাংবাদিকতা পেশার জন্য ভাল দিক। যে কোন পরিস্থিতিতে দেশ ও জাতির স্বার্থে কাজ করার জন্য সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে পুলিশ কমিশনার বলেন, সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ ও মাদক চোরাচালান নির্মূল করাই এখন প্রধান চ্যালেঞ্জ। তাছাড়া ক্রাইম রিপোর্টার ও পুলিশের কাজের ধরন প্রায় একই রকম। উভয়ের উদ্দেশ্য জনগণের জন্য কাজ করা। অতীতের মতো সাংবাদিক ও পুলিশের সম্পর্ক সোহার্দ্যপূর্ণ থাকবে। ক্র্যাব সভাপতি আবুল খায়ের বলেন, দীর্ঘ ২৭ বছরে চাকরি জীবনে পুলিশের সঙ্গে আমি কাজ করে যাচ্ছি। এই মুহূর্তে পুলিশের সঙ্গে সাংবাদিকদের সবচেয়ে ভাল সম্পর্ক বিরাজ করছে। আধুনিক যুগে নেগেটিভ নিউজকে মানুষ ভাল চোখে দেখে না। এ বিষয়টি মাথায় রেখেই সাংবাদিকরা কাজ করছেন। তবে কোন ব্যক্তির অপকর্মের কারণে যদি একটি বাহিনী বা দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হওয়ার আশঙ্কা থাকে তবে তা অবশ্যই প্রকাশ করা উচিত। ঢাকা মহানগর পুলিশ সদর দফতরে অনুষ্ঠিত এ মতবিনিময় অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ক্র্যাব সভাপতি আবুল খায়ের, সাধারণ সম্পাদক দীপু সারোয়ার, সহসভাপতি মিজান মালিক, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার শাহাবুদ্দিন কোরেশী, অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মীর রেজাউল আলম, অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম) কৃষ্ণপদ রায়, জয়েন্ট কমিশনার (ক্রাইম) শেখ নাজমুল আলম, ডিএমপির ডিসি (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান ও ক্র্যাব কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যরা।
×