ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বসন্তের আগেই এবার ঝরাপাতার দিন শুরু, সাজছে প্রকৃতি

প্রকাশিত: ০৪:৩৪, ২৮ জানুয়ারি ২০১৯

বসন্তের আগেই এবার ঝরাপাতার দিন শুরু, সাজছে প্রকৃতি

সমুদ্র হক ॥ শীত বলছে যাবই তো, থাকতে তো আসিনি। মাঘ বলছে পালাই, আরেকটুখানি। ফাগুন বলছে এবার না হয় আগেই আসি! ফাগুনের সুরে সুর মিলিয়েছে ফুলেরা। চোখ মেলেছে আগেই। গাছেরাও বাদ যাবে কেন! নতুনরূপে সাজার পালা শুরু করেছে। ঋতুবৈচিত্র্যে ফাগুনের আগেই ফাগুনের দিন শুরু হয়ে গেছে। এ সময়টায় পথ চলতে প্রকৃতির এমনই ছোঁয়া অনুভূত হয়। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে দ্রুত পাল্টে যাচ্ছে শীতের দিনগুলি। দুয়ারে টোকা দিয়েছে ফল্গু ধারা। এই সময়টায় গাছের পাতা হলদেটে হয়ে গেছে। শুরু হয়েছে পাতা ঝরার দিন। তরু তলে হাঁটলে ঝরা পাতার মর্মর শব্দ। জানান দেয় বৃক্ষের নতুন সজিব পত্রমঞ্জরী সাজিয়ে দেবে প্রকৃতিকে। এগিয়ে নেবে বসন্তের মাতাল সমীরণের নতুন দিনের কাছে। প্রকৃতির কতই না মায়া! বাগানের ফুলগুলো ফাগুন হাওয়ায় নেচে উঠেছে। শহর নগরে যাদের ফুলের টব আছে সেখানে পাপড়ি মেলছে। ফাগুনের হাওয়ায় নেচেও উঠেছে। তরুণ-তরুণীরা অপেক্ষায় আছে ফাল্গুনের মুহূর্তের। ফাল্গুনে বেশি বিক্রি হয় হলদে গাঁদা ও গোলাপ ফুল। বসন্তে তরুণীদের খোঁপায় গাঁদা আর মাথায় টায়রা না থাকলে বসন্ত বেমানান। গাছের হলদে ঝরে পড়া পাতাগুলো বিদায় দিয়েছে শীত। সবুজ পাতা গজিয়ে ডেকে আনছে ফাল্গুনকে। কোন কোন বৃক্ষ সবুজের নবপত্রে সেজেছে, যেন এক মায়াকানন। বইছে ফুরফুরে হাওয়া। একটু করে ধুলি উড়ছে। কখনও এই ধুলি উড়ছে সামান্য পাঁক দিয়ে। নবপত্রের ছন্দে সুর তুলে হৃদয় মনকে আরও সবুজ করে দিচ্ছে। মাঘেই এবার ফাগুনের দিন এভাবে শুরু হয়েছে। পথ চলতে প্রকৃতির এমনই ছোঁয়া অনুভূত হয়। নতুনরূপে সাজছে বৃক্ষরাজি। মৃদু বাতাসের তালে নবপত্রের ক্লাসিক্যাল নাচ চোখে পড়ে। মনে হবে নিঃসর্গের চরাচর। এবারে শীত ছিল। তবে অতীতের সেই হিমশীতল ঠান্ডা নয়। জলবায়ু বিজ্ঞানী ও পরিবেশবিদরা কত কথাই তো বলছেন। কেউ বলছেন, পৃথিবী উষ্ণ হচ্ছে। উত্তপ্ত হবে সামনের দিনগুলি। ধরিত্রী মানব জীবনকে অসহনীয় করে তুলবে। বৃক্ষ তার আপন নিয়মেই প্রতি বছর পুরনো পাতা ঝরিয়ে নিজেকে নতুন পাতায় সাজিয়ে নেয়। ছায়া দিয়া আনে প্রশান্তি। মাঠের কৃষক বুঝতে পারে ফাল্গুনের আমেজ কত। বগুড়ার সোনাতলার রানীরপাড়া গ্রামের কৃষক বাসেত আলী বললেন ‘ভিওত চারা আর্জিবার সময় এ্যানা করে বাতাস ওটে। দিনত ওদও মনে হয় তাপ্যে আসিচ্ছে। (জমিতে চারা রোপণের সময় একটু করে বাতাস ওঠে। রোদে মনে হয় তাপ বাড়ছে)। এখন বিকেল অনেকটা সময় ধরে থাকে। ক’দিন আগেও কখন বিকেল হলো তা টের পাওয়া যায়নি। এখন বিকেলের পরের হলদেটে গোধূলীর আভা বসন্তের মতোই মনকে নাড়া দেয়। বারতা দেয়। কবিরা কবিতা লেখে। গীতিকাররা সেই কবিতায় সুর তোলে। সাহিত্যিকরা মনের মাধুরীতে লেখার প্লট খুঁজে পান। এত কিছুর মধ্যেও এবার শীত ছিল। তবে রাখঢাক। এই শীত তো সেই শীত নয়। অতীতের সেই শীতের মতো এখন আর শীত পড়ে না। শুধু জানিয়ে দেয় শীতকাল আছে, থাকবেও।
×