ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অনুকূল আবহাওয়ায় শুঁটকি পল্লীতে খুশির আমেজ

প্রকাশিত: ০৪:২১, ২৮ জানুয়ারি ২০১৯

অনুকূল আবহাওয়ায় শুঁটকি পল্লীতে খুশির আমেজ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ আবহাওয়া অনুকূল ও জলদস্যুদের উৎপাত না থাকায় শুঁটকি পল্লীতে খুশির আমেজ বইছে। জেলেরা নিজেদের ইচ্ছামতো মাছ আহরণ করে শুঁটকি তৈরি করছেন। এ কারণে গেল বছরের তুলনায় এবার সরকার বেশি রাজস্বও পাবে বলে আশা করছেন বন বিভাগ। প্রতিবছরের অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত সুন্দরবনের দুবলার চরসহ বঙ্গোপসাগরের ৬টি চরে প্রায় ১৫ হাজার জেলে মাছ আহরণ করে শুঁটকি প্রক্রিয়াজাতকরণের কাজে নিয়োজিত থাকে। তবে এবার মৌসুমের দুই মাস বাকি থাকতেই গতবছরের তুলনায় দ্বিগুণ রাজস্ব আদায় করেছে সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগ। সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, এবার আলোরকোল (দুবলার চর), মেহের আলীর চর, অফিস কেল্লা, মাঝের কেল্লা, নারকেল বাড়িয়া ও শেলার চরে মোট ১ হাজার ২৫টি জেলে ঘর, ৪৮টি ডিপো ঘর, নিত্যপ্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদির দোকান ৭৯টি ও ৭টি ভাসমান দোকানের অনুমতি দেয়া হয়েছে। এসব জেলেদের থেকে এবার ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬৯ লক্ষ ৮৩ হাজার ৪৪ টাকা রাজস্ব এবং ১০ লক্ষ ৪৭ হাজার ৪শ’ ৫৬ টাকা ভ্যাট আদায় হয়েছে। গেল বছর পুরো মৌসুমে রাজাস্ব আদায় হয়েছিল ৩৩ লক্ষ ৭৮ হাজার ৮৩৬ টাকা এবং ভ্যাট ছিল ৫ লক্ষ ৬ হাজার ৮২৫ টাকা। হিসেব অনুযায়ী এবার মৌসুমের অর্ধেক সময়েই দ্বিগুণের বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে। জেলেরা সমুদ্র থেকে লইট্যা, ছুড়ি, চ্যালা, ভেটকি, কোরাল, চিংড়ি, রুপচাঁদা, কঙ্কন, মেদসহ বিভিন্ন প্রকার মাছ সমুদ্র থেকে আহরণ করে মাচায় শুকিয়ে শুঁটকি তৈরি করে। কেউ কেউ চরে বসেই তাদের তৈরি শুঁটকি বিক্রি করে দেয়। কেউ আবার নিয়ে এসে লোকাল বাজারে বিক্রি করে। তবে বেশিরভাগ শুঁটকি স্থানীয় দ্বাদন প্রদানকারী ব্যবসায়ীরা ক্রয় করে নেন। সুন্দরবনের মাঝের কিল্লার চরে মাছ আহরণকারী রামপাল উপজেলার পেড়িখালী গ্রামের আক্কাস আলী বলেন, ‘এবার সমুদ্রে ডাকাতদের উৎপাত নাই। সমুদ্রও শান্ত ছিল বেশিরভাগ সময়। আমরা নিজেদের মতো মাছ আহরণ করতে পেরেছি। গেল বছরের তুলনায় এবার অনেক বেশি মাছ পেয়েছি।’ আলোর কোলের শুঁটকি ব্যবসায়ী নুর ইসলাম বলেন, ‘আমরা অনেকদিন যাবত শুঁটকির ব্যবসা করি। জেলের মাধ্যমে মাছ আহরণ করে, শুঁটকি তৈরি করে দেশীয় বাজারে এবং বিদেশে রফতানি করে থাকি। এ বছর জেলেদের জালে বেশি মাছ ধরা পড়েছে। যার ফলে জেলে ও এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত সকলের মনে খুশির আমেজ বিরাজ করছে।’ দুবলা ফিসারম্যান গ্রুপের নেতা কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘শুঁটকি মৌসুমে জেলেদের ওপর বনদস্যু ও জলদস্যুদের ব্যাপক উৎপাত হতো। বেশ কয়েক বছর ধরে দস্যুদের আত্মসমর্পণ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা বৃদ্ধি পাওয়ায় এবার জেলেরা শান্তিতে মাছ আহরণ করতে পারছে। এবার অনেক জেলে ও ব্যবসায়ীরা বিগত বছরের লোকসান কাটিয়ে উঠতে পারবে বলে আমরা আশা করছি।’ সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘মাছ আহরণের সময় প্রাকৃতিক কোন দুর্যোগ না হওয়ায় এবং দস্যুদের কোন উৎপাত না থাকায় জেলেরা অনেক বেশি মাছ আহরণ করতে পেরেছে। যার ফলে রাজস্ব আদায় বেড়েছে। আমরা আশা করি এবার মৌসুমে গতবছরের তুলনায় তিনগুণ রাজস্ব আদায় হবে।’
×