ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ট্যাক্স রেট কমিয়ে করের আওতা বাড়ানো হবে

প্রকাশিত: ০৭:৪০, ২৭ জানুয়ারি ২০১৯

ট্যাক্স রেট কমিয়ে করের আওতা বাড়ানো হবে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আগামী বাজেটে ট্যাক্স রেট (কর হার) কমিয়ে বেশি রাজস্ব আহরণ করা হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। শনিবার বিকেলে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) আন্তর্জাতিক কাস্টমস দিবস-২০১৯ উপলক্ষে এক সেমিনারে মন্ত্রী এ কথা বলেন। তিনি আরো বলেন, ট্যাক্স রেট (কর হার) কমিয়ে করের আওতা বাড়ানো হবে। এখন তিন লাখ কোটি টাকার কর আদায় করা হচ্ছে। আশা করছি ট্যাক্স রেট কমিয়ে চার লাখ কোটি টাকা রাজস্ব আয় সম্ভব। আমরা প্রমাণ করতে চাই, ট্যাক্স রেট কমিয়ে রাজস্ব বাড়ানো সম্ভব। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, সকল জিনিসের করের হার (ট্যাক্স রেট) এক রকম হবে না। এক এক পণ্যের ট্যাক্স এক এক রকম হবে। ট্যাক্স রেট কমিয়ে ব্যবসায়ের আওতা বাড়িয়ে রাজস্ব আহরণ বাড়ানো হবে। ট্যাক্স বাড়িয়ে নয়, ট্যাক্স কমিয়ে রাজস্ব আহরণের পরিধি বাড়াতে হবে। এছাড়া শতভাগ স্ক্যানিংয়ের মাধ্যমে সকল পণ্য দেশে আসবে। এজন্য সততা, দক্ষতা, স্বচ্ছতা ও দেশপ্রেমের মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। দেশের সব মানুষকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২০৪১ সালের আগে উন্নত দেশ গড়ে তোলার জন্য কাজ করতে হবে। আমি কাউকে জেলে পাঠানোর জন্য আসিনি। মানুষকে ভালবাসা দেব এবং আমার কাজ আমি চালিয়ে যাব। অর্থমন্ত্রী বলেন, আগামী জুলাই মাস থেকে নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর হবে। তবে ভ্যাট হার এক হবে না। পণ্যভিত্তিক আলাদা ভ্যাট হার হবে। এ নিয়ে ব্যবসায়ীসহ সব অংশীজনকে নিয়ে আলাপ আলোচনা করা হবে। মন্ত্রী বলেন, এদেশের ব্যবসায়ী ও সরকারী কমর্চারীরা সবাই অসৎ নয়। সবাই অসৎ হলে এত প্রবৃদ্ধি হতো না। গত ১০ বছরে রফতানি হয়েছে দ্বিগুণ আর রাজস্ব আহরণ বেড়ে ৩ লাখে উন্নীত হয়েছে। এই অর্জনগুলোর পেছনে কাস্টমসের অবদান রয়েছে। ঘন ঘন নীতি পরিবর্তন হবে না জানিয়ে মুস্তফা কামাল বলেন, জাপান থেকে পণ্য জাহাজ ওঠানো হলো, দেশে আসতে আসতে শুল্ক হার পরিবর্তন হয়ে যায়- এই ঘটনা আর হবে না। এ দেশের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। এখানে কেউ ব্যবসা করলে ব্যর্থ হয় না। লাভ করতে হলে এদেশে কাউকে পরিকল্পনা করতে হয় না। লোকসান করতে পরিকল্পনা করতে হয়। দেশের মানুষ বড় সম্পদ। ৫ বছরে দেড় কোটি মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, আমাদের চারপাশে যে কর্মযজ্ঞ চলছে তাতে কাস্টমসের অবদান আছে। এনবিআরকে উদ্দেশ্য করে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, একজন খারাপ ব্যবসায়ীর জন্য ৯৯ জন ভাল ব্যবসায়ীকে হয়রানি করা যাবে না। যত সহজভাবে কম ট্যাক্স নিয়ে ব্যবসায়ের ক্ষেত্র বাড়ানো যায় সেই কাজ করতে হবে। এছাড়ও অসৎ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে শক্ত হাতে ব্যবস্থা নেয়ার কথাও বলে বাণিজ্য মন্ত্রী। টিপু মুনশি বলেন, রাজস্ব আহরণের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে। নতুন নতুন ব্যবসায়ের পরিবেশ তৈরি করতে হবে। আধুনিক চিন্তা নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। বিশেষ অতিথি হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান বলেন, এনবিআরের অনেক পরিবর্তন হয়েছে। আগে কাস্টমসে রেট ও পণ্যের বিবরণ নিয়ে সমস্যা হতো, সেটা এখন ঠিক হয়েছে। কাস্টমসের বিরুদ্ধে আমাদের অপবাদ দেয়া বন্ধ করতে হবে। কারণ সবাই খারাপ নয়। অথর্নীতির মূল চালিকাশক্তি ব্যবসা। এজন্য আগামী দিনে ব্যবসায়ের কমর্কাÐ সুন্দর করতে হলে এনবিআরকে আরও শক্তিশালী হতে হবে। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি মোঃ শফিউল ইসলাম (মহিউদ্দিন) বলেন, প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়নকে এগিয়ে নিতে এনবিআর কাজ করে যাচ্ছে। তবে এনবিআরের জনবলের ঘাটতি আছে এবং টেকনোলজি আন্তর্জাতিক পর্যায়ের নয়। এদিকে সরকারকে গুরুত্ব দিতে হবে। বাণিজ্যখাতে ৯৮ ভাগ কাজ কাস্টমস করে। কাস্টমসের ভাল সুনাম রয়েছে আবার দুর্নামও রয়েছে। তবে কাস্টমস দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে। সভাপতির বক্তব্যে এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়া বলেন, সিএ্যান্ডএফ ও কাস্টমস কর্মকর্তাদের জন্য ব্যবসায়ের কোন ক্ষতি হলে সেটা কঠোর হাতে দমন করা হবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমরা জিরো টলারেন্স। চট্টগ্রামে কাস্টমস কর্মকর্তার আটকের বিষয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। নৈরাজ্য এদেশে চলবে না। অপরাধ করলে শাস্তি পেতেই হবে। ব্যবসায়ে ফাঁকি কোনভাবেই মেনে নেয়া হবে না। রাজস্ব আহরণে কাস্টমসের ভূমিকা বাড়ছে। ২৮-৩০ শতাংশ রাজস্ব কাস্টমস থেকে আসে। রাজস্ব আহরণের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। এনবিআর চেয়ারম্যান আরো বলেন, মানি লন্ডারিং বা ব্যবসায়ে ফাঁকি দিয়ে ব্যবসা করা যাবে না। মানি লন্ডারিংয়ের মামলায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। আমাদের যথাযথ ট্যাক্স ও ভ্যাট দিতে হবে। এগুলো দেশের উন্নয়নের জন্য দিতে হবে। উন্নত দেশে পৌঁছাতে আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। অনুষ্ঠানে এনবিআর সদস্য (কাস্টমস নীতি) স্বাগতম বক্তব্য রাখেন এবং মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কাস্টমস কমিশনার আনোয়ার হোসেন। সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন, ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স করপোরেশনের (আইএফসি) বাংলাদেশ, ভুটান এবং নেপালের কান্ট্রি ম্যানেজার ওয়েন্ডি জো ওয়ার্নার, এনবিআরের সকল সদস্য ও কমিশনারগণসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা। এর আগে শনিবার সকালে আন্তর্জাতিক কাস্টমস দিবস উপলক্ষে এনবিআর’র সামনে থেকে র‌্যালি শুরু হয়। র‌্যালিটি দুদক কার্যালয়, মৎস্য ভবন হয়ে হাইকোর্টের সামনে দিয়ে জাতীয় প্রেসক্লাব, পল্টন-বিজয়নগর মোড় হয়ে এনবিআর ভবনের সামনে এসে শেষ হয়। র‌্যালিতে এনবিআর চেয়ারম্যান, মেম্বার, কাস্টমস কমিশনারের পাশাপাশি চলচ্চিত্র তারকারা অংশ নেন। ‘স্মার্ট বর্ডারস ফর সিমলেস ট্রেড, ট্রাভেল এ্যান্ড ট্রান্সপোর্ট’ স্লোগানকে সামনে রেখে আন্তর্জাতিক কাস্টমস দিবস উদযাপন করা হয়। বাংলাদেশসহ ওয়ার্ল্ড কাস্টমস অর্গানাইজেশনের (ডাব্লিউসিও) সদস্যভুক্ত ১৮৩টি দেশে একযোগে দিবসটি পালন করা হয়। ২০০৯ সালে ওয়ার্ল্ড কাস্টমস অর্গানাইজেশন ২৬ জানুয়ারিকে কাস্টমস দিবস হিসেবে ঘোষণা করার পর থেকেই বাংলাদেশও দিবসটি পালন করছে।
×