ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ওস্তাদ ক্যাপ্টেন আজিজুল ইসলামের বাঁশি সন্ধ্যা

প্রকাশিত: ০৬:৫৭, ২৭ জানুয়ারি ২০১৯

ওস্তাদ ক্যাপ্টেন আজিজুল ইসলামের বাঁশি সন্ধ্যা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সঙ্গীতে প্রথাগত শিক্ষা নয়। সত্য ও সুন্দরের খোঁজে ক্যাপ্টেন আজিজুল ইসলাম ক্রমে ক্রমে হয়ে ওঠেন এক আত্মপ্রত্যয়ী সুরস্রষ্টা। তার শিল্পীজীবন উৎসর্গীকৃত হয়েছে শিল্পের উৎকর্ষ লাভের আকাক্সক্ষায়। তার বাঁশির সুর মন্ত্রমুগ্ধের মতো টানে মানুষকে। আর তাই তিনি আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করেছেন। রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার প্রধান মিলনায়তনে আগামী ২৯ জানুয়ারি সন্ধ্যা ৬টায় আয়োজন করা হয়েছে একুশে পদকপ্রাপ্ত ওস্তাদ আজিজুল ইসলামের একক বাঁশি বাদন। নিভৃতচারী এই শিল্পী ১৯৪৫ সালে রাজবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈত্রিক বাড়ি সুরসম্রাট ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর স্মৃতিধন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। শৈশব থেকে তিনি চট্টগ্রামে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। আইএসসি পাস করে মেরিন একাডেমির প্রথম ব্যাচে যোগদানের মাধ্যমে সামুদ্রিক জীবনে প্রবেশ তার। ছোটবেলায় বেতারে নিয়মিত গান শুনতেন আজিজুল ইসলাম। ভাটিয়ালি গানের প্রতি ছিল বিশেষ ঝোঁক। ভাটিয়ালি গানের বাঁশির সুর তাকে বেশি টানত। একনিষ্ঠ পরিশ্রমই তাকে পৌঁছে দিয়েছে স্বপ্নের বন্দরে। মাত্র ১৬ বছর বয়সে চট্টগ্রামের আর্য সঙ্গীত সমিতির প্রয়াত প্রিয়দা রঞ্জন সেনগুপ্তের কাছে হাতে খড়ি হয় আজিজুল ইসলামের। এক সময়ে সমুদ্রগামী জাহাজের নাবিক ছিলেন। সাগরের বুকে নিঃসঙ্গ প্রহরগুলো কাটাতেন বাঁশি বাজানোর রেওয়াজ করে।সে সময় স্বর্গীয় পান্নালাল ঘোষের বাজানো রেকর্ড এবং অন্যান্য বিখ্যাত শাস্ত্রীয় সঙ্গীত শিল্পীদের রেকর্ডগুলো ছিল তার নিত্যসঙ্গী। পরবর্তিতে ওস্তাদ বেলায়েত আলী খানের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। স্বাধীনতা পরবর্তীকালে বিশ্ব বিখ্যাত সরদবাদক ওস্তাদ বাহাদুর খানের শিষ্যত্ব নেন। পরে স্বর্গীয় প-িত পান্নালাল ঘোষের ঘনিষ্ঠ শিষ্য প-িত দেবেন্দ্র মুদ্রেশ্বর ও প-িত ভি.জি. কার্নাডের কাছে তালিম নেন। ওস্তাদ আজিজুল ইসলাম বলেন, প্রকৃতিগত ভাবেই বাঁশি বাজানোর প্রতি আকৃষ্ট হই। বাঁশির সুর সবসময় আমার মনকে দোলা দেয়। বলা যায়, বাঁশি এখন আমার কাছে নেশার মতো। সময় পেলেই বসে পড়ি বাঁশি হাতে। বাঁশি নিয়ে মজার স্মৃতি প্রসঙ্গে অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত এ শিল্পী বলেন, বাঁশি নিয়ে এ সময় আমার দুটি মজার স্মৃতি মনে পড়ছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্বরলিপি তৈরিকারী ড. শৈলজা রঞ্জন মজুমদার একটি সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আমার বাঁশি বাজানো শুনতে চেয়েছিলেন। বাজানো শেষে তিনি আমার প্রশংসা করেছিলেন যা আমাকে বেশ আলোড়িত করেছিল। সঙ্গীতজ্ঞ প্রয়াত ওয়াহিদুল হক একটি অনুষ্ঠানে আমার বাঁশি শুনে অনেক প্রশংসা করেছিলেন। এটা স্মরণীয় হয়ে থাকবে। যতদিন বেঁচে থাকবেন ততদিন বাঁশি হাতে শ্রোতাকে মাতিয়ে রাখতে বদ্ধ পরিকর ওস্তাদ ক্যাপ্টেন আজিজুল ইসলাম। তার ইচ্ছা দেশ-বিদেশে আরও অনুষ্ঠান করার। প্রতিনিধিত্ব করার দেশীয় সংস্কৃতির। সঙ্গীতে বিশেষ অবদানের জন্য তিনি ২০১৭ সালে একুশে পদক পান।
×