ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

খুলনাকে বিদায় করে আশা বাঁচিয়ে রাখল সিলেট

প্রকাশিত: ০৬:৪৯, ২৭ জানুয়ারি ২০১৯

খুলনাকে বিদায় করে আশা বাঁচিয়ে রাখল সিলেট

মিথুন আশরাফ ॥ কফিনে চূড়ান্ত পেরেক বলতে যা বোঝায় খুলনা টাইটান্সের গায়ে সেই বিদায়ের পেরেক লেগে গেছে। সিলেট সিক্সার্সের কাছে শনিবার ৫৮ রানে হেরে বিপিএলের ষষ্ঠ আসর থেকে প্রথম দল হিসেবে বিদায় নিল খুলনা। খুলনাকে বিদায় করে ‘প্লে-অফ’ খেলার আশাও জিইয়ে থাকল সিলেটের। টানা তিন ম্যাচ হারের পর শুক্রবার জয় তুলে নিয়েছিল সিলেট। সেই জয় মিলিয়ে খুলনাকে হারিয়ে টানা দুই ম্যাচ জিতে গেল সিলেট। সেই সঙ্গে মিরপুরে খুলনার কাছে হারের প্রতিশোধও নিল সিলেট। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে খুলনাকে পাত্তাই দিল না সিলেট। অলক কাপালী সিলেটের দায়িত্ব নিতেই বদলে যাওয়া দলে যেন পরিণত হয়েছে দলটি। চট্টগ্রামে যে কোন দলই স্কোরবোর্ড মজবুত করছে। আগে ব্যাটিং করার সুযোগ পেলেই কাজে লাগাচ্ছে। সিলেট তাই টস জিতে আগে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্তই নিল। সঠিক সিদ্ধান্তই যে নেয়া হয়েছে তা সিলেটের স্কোরবোর্ড দেখলেই বোঝা যায়। দলটি ৪ উইকেট হারিয়ে ২০ ওভারে ১৯৫ রান করে। সর্বশেষ ম্যাচে যেমন দলের ব্যাটসম্যানরা ঐক্যবদ্ধ নৈপুণ্য দেখিয়েছেন, এবারও তাই হয়েছে। শুরুতে লিটন কুমার দাস (৩৪) ও আফিফ হোসেন ধ্রুব (৪৯) জৌলুস ছড়ান। এরপর সাব্বির রহমান রুম্মন (৪৪*) ব্যাটিং দাপট দেখান। সাব্বিরের সঙ্গে শেষে গিয়ে মোহাম্মদ নেওয়াজও (৩৯*) দুর্দান্ত ব্যাটিং করলে এত বড় স্কোর দাঁড় হয়। খুলনার তাইজুল ইসলাম (৩/৩০) শুধু বল হাতে সিলেট ব্যাটসম্যানদের ভোগান। সিলেট যখন এত বড় স্কোর গড়ে, তখনই যেন খুলনার হার ভাবনায় এসে যায়। তাই বলে এমন ব্যাটিং উইকেটেও এমন বেহাল দশা হবে। ১৮.১ ওভারে ১৩৭ রান করতেই অলআউট হয়ে যায় খুলনা। নাবিল সামাদ (৩/২০) ও তাসকিন আহমেদতো (২/৬) অসাধারণ বোলিং করেন। এ দুইজনের দুর্দান্ত বোলিংয়ের সঙ্গে ১ উইকেট করে নেয়া সোহেল তানভির, এবাদত হোসেন, মোহাম্মদ নাওয়াজ ও অলক কাপালীর ঐক্যবদ্ধ নৈপুণ্যে খুলনার বিদায় ঘণ্টা বেজে যায়। ওপেনার ব্রেন্ডন টেইলর (৩৪), আরিফুল হক (২৪) ও জুনায়েদ সিদ্দিকী (২০) নিজেকে একটু মেলে ধরতে সক্ষম হন। এই ম্যাচটি শেষে পয়েন্ট তালিকায় সবার নিচে আছে খুলনা। দলটি ১০ ম্যাচে ২ জয় নিয়ে ৪ পয়েন্ট পেয়েছে। হাতে আছে আর দুই ম্যাচ। এই দুই ম্যাচ জিতলেও ৮ পয়েন্ট হবে। এর বেশি হওয়ার আর কোন সুযোগ নেই। খুলনা ছাড়া আর সব দলেরই ৮ পয়েন্ট এরই মধ্যে আছে। চার দলের এরই মধ্যে আছে ১০ পয়েন্ট বা তার বেশি। চারটি দল ‘প্লে-অফে’ খেলবে। তার মানে ১০ পয়েন্টই যেহেতু চার দলের এরই মধ্যে হয়ে গেছে, খুলনার আর কোন সুযোগই নেই। বিদায় ঘণ্টা বেজে গেছে গত আসরের ‘প্লে-অফ’ খেলা দলটির। খুলনাকে হারিয়ে সিলেটের ভালই সুযোগ আছে। সিলেটও ছিটকে পড়া দলের মধ্যেই থাকার সম্ভাবনায় ছিল। কিন্তু এখনও দলটি নিজেদের লীগে টিকিয়ে রেখেছে। খুলনার সঙ্গে জিতে ষষ্ঠ থেকে পঞ্চম স্থানেও উঠে যায় সিলেট। ১০ ম্যাচে ৪ জয়ে ৮ পয়েন্ট পেয়েছে। যদি হাতে থাকা দুই ম্যাচে জিতে সিলেট তাহলে ১২ পয়েন্ট হবে। এই মুহূর্তে শুধু চিটাগং ভাইকিংসেরই ১২ পয়েন্ট আছে। তার মানে এখনও লীগের ‘প্লে-অফ’ খেলার সুযোগ সিলেটের সামনে খোলা আছে। তবে যে কোন একটি ম্যাচ হারলেই সেই সুযোগ শেষ হয়ে যাবে। আবার দুই ম্যাচ জিতেও ‘প্লে-অফ’ না খেলার সম্ভাবনা জোরালোই আছে। সিলেটের ওপরে থাকা চার দলেরই যে এরই মধ্যে ১০ পয়েন্ট বা তার বেশি পয়েন্ট রয়েছে। দলগুলো আবার নিজেদের মধ্যে খেলবে। ১২ পয়েন্ট করে হবে। ‘প্লে-অফে’ খেলার সম্ভাবনা শেষ পর্যন্ত জিইয়ে রাখতে হলে সিলেটের এখন হাতে থাকা দুই ম্যাচেই জিততে হবে। সিলেট কী তা করতে পারবে? খুলনার বিপক্ষে ম্যাচটিতে ব্যাট হাতে ২১ বলে ৩ চার ও ২ ছক্কায় অপরাজিত ৩৯ রান করার পর বল হাতে ১ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা হয়েছেন পাকিস্তান ক্রিকেটার মোহাম্মদ নাওয়াজ। তিনি ‘প্লে-অফ’ খেলার আশাতেই আছেন। ম্যাচশেষে তিনি বলেছেন, ‘অনেক ভাল অনুভূতি হচ্ছে। আমি সুযোগের অপেক্ষায় ছিলাম। সেই সুযোগ মিলেছে। পারফর্ম করতে পেরে অনেক ভাল লাগছে। আমরা এখন দলগত নৈপুণ্য দেখিয়েছি। আশা করছি, শেষ দুই ম্যাচে জিতে আমরা পরের ধাপে উন্নীত হব।’ সিলেট শুরুতে যেভাবে খেলেছে তাতে ‘প্লে-অফ’ খেলার কোন আশাই ছিল না। শেষ মুহূর্তে জ্বলে উঠেছেন দলের ব্যাটসম্যান ও বোলাররা। তাতে দলও এখন পরের ধাপে খেলার আশা দেখছে। কিন্তু হতাশা নিয়েই বারবার মাঠ ছাড়েন খুলনা অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। এবার চূড়ান্তভাবেই বিদায় নিলেন। মাহমুদুল্লাহ এ নিয়ে বলেন, ‘আমাদের জন্য খুবই হতাশাজনক একটি মৌসুম গেল। আমার জন্য এবং দলের জন্যও। হাতে এখন ২ ম্যাচ আছে। আশা করছি দুই ম্যাচ জিততে পারব।’ স্কোর ॥ সিলেট সিক্সার্স ইনিংস- ১৯৫/৪; ২০ ওভার (লিটন ৩৪, আফিফ ৪৯, জেসন ১, সাব্বির ৪৪*, পুরান ১২, নাওয়াজ ৩৯*; তাইজুল ৩/৩০)। খুলনা টাইটান্স ইনিংস- ১৩৭/১০; ১৮.১ ওভার (টেইলর ৩৪, জুনায়েদ ২০, আল-আমিন ১৬, শান্ত ৩, মাহমুদুল্লাহ ১১, আরিফুল ২৪, উইজ ৫, ইয়াসির ৮, তাইজুল ৯, জুনাইদ ২, শুভাশীষ ০*; নাবিল ৩/২০, তাসকিন ২/৬)। ফল ॥ সিলেট সিক্সার্স ৫৮ রানে জয়ী। ম্যাচসেরা ॥ মোহাম্মদ নাওয়াজ (সিলেট সিক্সার্স)।
×