ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কয়েক দফা অভিযানে বাংলাদেশীসহ ৫শ’ অভিবাসন প্রত্যাশী আটক

ভূমধ্যসাগরে নৌকা থেকে ২ বাংলাদেশীর লাশ উদ্ধার

প্রকাশিত: ০৬:৩৬, ২৭ জানুয়ারি ২০১৯

ভূমধ্যসাগরে নৌকা থেকে ২ বাংলাদেশীর লাশ উদ্ধার

ফিরোজ মান্না ॥ ইউরোপের দেশ ইতালি যাওয়ার পথে ভূ-মধ্যসাগরের লিবিয়া উপকূলে ভাসমান একটি নৌকা থেকে দুই বাংলাদেশীর মরদেহ উদ্ধার করেছে স্থানীয় কোস্টগার্ড। এরপরই বৃহস্পতিবার থেকে উপকূলে উদ্ধার অভিযান করা হয়। কয়েক দফা অভিযান চালিয়ে বাংলাদেশীসহ বিভিন্ন দেশের প্রায় ৫শ’ লোককে উদ্ধার করা হয়েছে। দালাল চক্রের প্রলোভনে পড়ে সাগর পথে তারা ইউরোপে পাড়ি জমাতে চেয়েছিল। কিন্ত বৈরী আবহাওয়ায় সাগর উত্তাল থাকায় তাদের আর ইতালি যাওয়া হয়নি। এখন ধৃতদের স্থান হয়েছে লিবিয়ার কারাগারে। স্বপ্নের ইউরোপে ভাল বেতনের চাকরি তাদের আর হলো না। ভাগ্য তাদের লিবিয়ার কারাগারে স্থান করে দিয়েছে। লিবিয়া উপকূলে কোস্টগার্ডের বরাত দিয়ে সংবাদ সংস্থা এএফপি জানায়, অভিবাসন প্রত্যাশীদের মধ্যে ৪৭৩ জন আফ্রিকা, সিরিয়া ও বাংলাদেশের। ভিন্ন ভিন্ন অভিযানে তাদের উদ্ধার করা হয়েছে। প্রথমে দু’জনের মরদেহ পাওয়া যায় একটি ভাসমান নৌকায়। এরপর অভিযান চালিয়ে ১৪০ জনকে উদ্ধার করা হয়। পর্যায়ক্রমে প্রায় ৫শ’ অভিবাসন প্রত্যাশীকে উদ্ধার করেছে লিবিয়ার কোস্টগার্ড। লিবীয় নৌবাহিনীর অনুরোধে দুটি মার্চেন্ট জাহাজ এই উদ্ধার অভিযানে অংশ নেয়। এদিকে ইতালি সরকার লিবীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে, যাতে উদ্ধার অভিযানে সহায়তা লাগলে তারা যেন সাহায্য করতে পারে। রোমের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সমুদ্র কিছুদিন অশান্ত থাকার পর গত তিন চারদিন বেশ শান্ত ছিল। সেই সুযোগটি নিয়েছে ওই অভিবাসন প্রত্যাশীরা। জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর জানায়, সম্প্রতি পানিতে ডুবে অন্তত ১৭০ অভিবাসীর মৃত্যু হয়েছে ভূ-মধ্যসাগরে। বেশিরভাগ অভিবাসন প্রত্যাশীর লক্ষ্য লিবীয় উপকূল থেকে ৩শ’ কিলোমিটার দূরের দেশ ইতালিতে পৌঁছানো। প্রতিবছর এক লাখের বেশি মানুষ সাগর পথে ইতালি পাড়ি জমাচ্ছে। সমুদ্র পথে পাড়ি দিতে গিয়ে কয়েক হাজার মানুষের ভূ-মধ্যসাগরে সলিল সমাধি ঘটেছে। অন্যদিকে, মানবপাচারের ঘটনার সঙ্গে জড়িতরা এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাচ্ছে। ’১২ সালে মানব পাচার আইন হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত চার হাজার ১৫২ মামলা হলেও শাস্তির ঘটনা খুব বেশি ঘটেনি। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, এসব মামলার অধিকাংশেরই এখন পর্যন্ত বিচার কার্যক্রম শুরু হয়নি। পাচার রোধে যথেষ্ট পদক্ষেপ না নেয়ায় এ বছরও যুক্তরাষ্ট্রের মানবপাচার বিষয়ক প্রতিবেদনে বাংলাদেশকে টায়ার-২ ওয়াচ লিস্টে রাখা হয়েছে। সূত্র মতে, অনিয়মিত অভিবাসনও বাংলাদেশের জন্য একটা বড় সমস্যা। ইউরোপীয় কমিশনের পরিসংখ্যান দফতর ইউরোস্ট্যাটের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০০৮ থেকে ’১৮ পর্যন্ত এক লাখেরও বেশি বাংলাদেশী ইউরোপের দেশে দেশে অবৈধভাবে প্রবেশ করেছেন। এ বছরের শুরুতে ভারতের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিএসএফএ দাবি করেছে। প্রতিবছর ভারতে বাংলাদশে থেকে গড়ে ৫০ হাজার নারী পাচার হয়। বছর তিনেক আগেও সাগর দিয়ে হাজারও মানুষের মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডে যাওয়ার কারণে বাংলাদেশসহ বিশ্বজুড়ে আলোচনা ছিল। আবারও মিয়ানমারের বিপুলসংখ্যক নাগরিক বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। ফলে পাচারের ঝুঁকি থাকছেই। ছাত্র ও পর্যটক সাজিয়ে বিভিন্ন দেশে লোক পাঠানোসহ নানা উপায়ে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে যাওয়ার চেষ্টা থেমে নেই। বাংলাদেশ যখন মধ্যম আয়ের দেশের দিকে যাচ্ছে এবং নিরাপদ অভিবাসন প্রতিষ্ঠিত করতে চাচ্ছে তখন এসব ঘটনা উদ্বেগজনক হারে ঘটছে। মানব পাচার ও অভিবাসন নিয়ে কাজ করেন এমন কয়েকটি সংগঠন বলেছে, বেশিরভাগ মানব পাচার হয় মালয়েশিয়া, ভারত, পাকিস্তানসহ ইউরোপের কয়েকটি দেশে। এক শ্রেণীর দালালের মাধমে তারা বেশি বেতনের চাকিরর লোভে বিদেশ যাচ্ছে। এতে বৈধ শ্রমবাজারের ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়ছে। এখানে থেকে উত্তরণ না ঘটাতে পারলে দেশের বহু মানুষ নিস্ব সর্বস্বান্ত হয়ে পড়বে। সরকার মানব পাচার প্রতিরোধ আইন করলেও তার প্রয়োগ হচ্ছে না বললেই চলে। ন্যাশনাল লেভেল শেয়ারিং ফর এ্যাডাপশন অব কাম্প্রহেনসিভ ল এগেনস্ট ট্রাফিকিং ও রিফিউজি এ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিট (রামরু) জানিয়েছে, অবৈধ অভিবাসন ঠেকাতে না পারলে বিভিন্ন দেশের শ্রমবাজার হারাতে হতে পারে বাংলাদেশ।
×