ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সিএমপির বিরুদ্ধে অভিযোগ

তদন্ত এড়াতে থানায় মামলা নিতে চায় না পুলিশ

প্রকাশিত: ০৬:৩৫, ২৭ জানুয়ারি ২০১৯

তদন্ত এড়াতে থানায় মামলা নিতে চায় না পুলিশ

মাকসুদ আহমদ, চট্টগ্রাম অফিস ॥ তদন্ত আর ঝামেলা এড়াতে পুলিশ এখন আর মামলা নিতে চায় না। জিডি ছাড়া মামলার বিষয়টি সরাসরি নাকচ করে দেন ডিউটি অফিসার। মামলা নিতে হলে ‘ওসির অনুমতি’র দোহাই দেন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা ঘটনার পর পর ক্ষতিগ্রস্তরা থানায় গেলেও কোন না কোন ভাবে সময় ক্ষেপণ করে অপরাধীকে আরেক দফা অপরাধের সুযোগ করে দেয় পুলিশ। ঘটনাস্থলে পুলিশের অনুুপস্থিতির সুযোগে আবারও অপরাধী আরেক দফা অপরাধ ঘটিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেয়ে যায়। পুলিশ অপরাধীর রাজনৈতিক পরিচয় ক্ষমতাসীন দলের গন্ধ পেলে আর এক ইঞ্চিও এগোয় না। পুলিশের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ এখন নিত্য নৈমিত্তিক। এ বিষয়ে সিএমপির এক কর্মকর্তা জানান, মামলা নিলে তদন্তের ঝামেলা বাড়ে। ফলে মামলা নিতে চায় না পুলিশ। ঝামেলা সামলাতে উভয়পক্ষকে থানায় ডেকে সুরাহা করার চেষ্টা করেন তারা। মামলা না নেয়া বা নিতে অপারগতা প্রকাশের কারণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অপরাধীর রাজনৈতিক পরিচয়ের বিষয়টি এখন উল্ল্যেখযোগ্য। প্রভাবশালী কোন রাজনৈতিক দল হলেই অপরাধী পুলিশের কাছে আরেক দফা সুযোগ আশা করে। এই প্রতিবন্ধকতা থেকে সরে আসা না গেলে অপরাধের মাত্রা আরও বাড়বে। অভিযোগ রয়েছে, ঘরের বাইরের চুরিকে থানার জিডিতে হারানো লিখতে বাধ্য করে পুলিশ। এমন অভিযোগ চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের প্রত্যেকটি থানার কর্তব্যরত ডিউটি অফিসারদের বিরুদ্ধে। ফলে কোন ঘটনার বিরুদ্ধে থানায় সাজানো জিডি নিয়ে পুলিশ অপরাধীদের প্রশ্রয় দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। নিজেদের দায়িত্বকে এড়িয়ে যেতেই মামলা বা এজাহারের পরিবর্তে জিডি নিতে সক্রিয় থাকে থানা পুলিশ। তবে এমন অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। আবার কোন ডাকাতির ঘটনা ঘটলেও পুলিশ অভিযোগকারীকে অপরাধীদের সংখ্যাভেদে ও বিশ্লেষণে চুরির মামলায় ফেলে দিয়ে পুলিশ দায়িত্ব এড়ানোর চেষ্টা করে। কারণ এমন ঘটনায় তদন্তে ঢিলেমী দেয়ার পাশাপাশি গ্রেফতারকৃতরা জেল থেকে জামিনে বেরিয়ে আসারও একটা সুযোগ করে দেয় পুলিশ এমন অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। সিএমপির আরেক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, জিডি হচ্ছে অধর্তব্য অপরাধ। জিডিকে পুলিশ গুরুত্ব দেয় না। কোন অপরাধীর বিরুদ্ধে শত জিডি হলেও লাভ নেই। জিডির মাধ্যমে অপরাধীকে উল্টো ছাড় দেয়া হয়। সিএমপির বা থানার হিসেবে অনুযায়ী প্রতিদিন গড়ে ৫০টি জিডি হচ্ছে। কিন্তু এসব অপরাধীদের কখনই ধরা হয় না। জিডির কপি তদন্তকারী কর্মকর্তাকে অভিযোগকারীর সামনেই তদন্ত কারার নির্দেশ প্রতিনিয়ত দেয়া হচ্ছে। কিন্তু দুয়েকদিন পরে এগুলো ফাইল বন্দী হয়ে পড়ে থাকে তদন্তকারী কর্মকর্তার টেবিলের ডেক্সে। ধর্তব্য অপরাধ হলে নিয়মিত মামলা করতে হয়। তবে মামলার হিসেব নিকেশ উর্ধতনকে বুঝিয়ে দিতে হয়। সেক্ষেত্রে তদন্তকারী কর্মকর্তা পর্যায়ে তদন্তের নিয়ম থাকলেও মামলা অনুযায়ী উভয়পক্ষকে নোটিস করার মাধ্যমে সমাধা করার চেষ্টা চালায়। নগরীর থানাগুলোতে প্রতিমাসেই ভুক্তভোগীরা মামলা দায়ের করছেন। মাস শেষে উর্ধতন কর্মকর্তারা তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছ থেকে মামলার রিপোর্ট জানতে চাইলে সেক্ষেত্রে অবশ্যই কর্মকর্তারা ধর্তব্য অপরাধের হিসেব বুঝিয়ে দিতে হয়। এক্ষেত্রে এড়িয়ে যাওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। তবে দীর্ঘদিন তদন্তবিহীন অবস্থায় মামলা পড়ে থাকলে সেক্ষেত্রেও অপরাধীরা পুনরায় ক্ষতিগ্রস্তদের ওপর হামলা চালানোর আশঙ্কা থাকে। দুয়েকবার তদন্ত হলেই অপরাধীদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি হয় বলে সিএমপির এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন। পুলিশের সিটিজেট চার্টার অনুযায়ী, যে কোন থানায় কোন ভুক্তভোগী গেলেই তাকে প্রাধান্য দেয়ার কথা কর্তব্যরত ডিউটি অফিসারের। ক্ষতিগ্রস্তের কথা শুনে সে অনুযায়ী জিডি কিংবা মামলা রুজুর পরামর্শ ও কর্তব্যরত পুলিশের কাছ থেকে পাওয়ার কথা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির। পুলিশের এ সিটিজেন চার্টার সিএমপির প্রত্যেকটি থানায় ঝুলানো থাকলেও এর ১০ ভাগও কার্যকর হয় না ক্ষতিগ্রস্তদের পক্ষে।
×