ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

গার্মেন্টস মালিক-শ্রমিক আস্থার সঙ্কট দূর হওয়া প্রয়োজন

প্রকাশিত: ০৬:০৭, ২৭ জানুয়ারি ২০১৯

গার্মেন্টস মালিক-শ্রমিক আস্থার সঙ্কট দূর হওয়া প্রয়োজন

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ পোশাকখাতের অসন্তোষ প্রতিরোধে শ্রমিক ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের মধ্যে সর্বদা কার্যকর যোগাযোগ স্থাপন করার ওপর তাগিদ দেয়া হয়েছে। এছাড়া মজুরি ও বেতন ভাতাসহ যেকোন ইস্যুতে মালিক ও শ্রমিকের মধ্যে আস্থার সঙ্কট দূর হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এতে করে এ খাতের যেকোন অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি এড়ানো সম্ভব। অন্যদিকে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি পোশাক খাতের যেকোন অসন্তোষ দূর করতে শ্রমিকদের পক্ষ থেকে পাঁচজনের একটি প্রতিনিধি দল তৈরির আহ্বান জানিয়েছেন। এই প্রতিনিধি দল মালিক পক্ষসহ সরকারের সঙ্গে শ্রমিকদের প্রতিনিধিত্ব করবে। শনিবার রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টার ইনে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত ‘পোশাকখাতে সাম্প্রতিক মজুরি বিতর্ক ঃ কী শিখলাম?’ বিষয়ক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহানের সভাপতিত্বে এই আলোচনা অনুষ্ঠানের সঞ্চালক ছিলেন সিপিডির সম্মানীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টচার্য। বাণিজ্যমন্ত্রী ছাড়াও আলোচনায় অংশ নেন এফবিসিসিআই সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান, শহিদুল আজিম, মুমীনুর রহমান, শ্রমিক নেতা মন্টু ঘোষ, বাবুল আকতার, কাজী রুহুল আমিন, নুরুল ইসলাম প্রমুখ। পোশাক শিল্প মালিক টিপু মুনশি মালিকপক্ষকেও গড়িমসি না করে নতুন মজুরি কাঠামো বাস্তবায়নের ওপর জোর দিয়ে বলেন, দু’একজন মালিকের জন্য যেন পুরো সেক্টরের বদনাম না হয়। অনুষ্ঠানে গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরেন সংস্থার গবেষক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম ও মোহাম্মদ আলী। এদিকে, তৈরি পোশাক শিল্পে শ্রমিকদের সাম্প্রতিক অসন্তোষের প্রধান কারণ হিসেবে মজুরি কাঠামো নির্ধারণে ত্রুটিপূর্ণ প্রক্রিয়াকে চিহ্নিত করেছে সিপিডি। সংলাপে নিজেদের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে সিপিডি। সংস্থাটির পক্ষ থেকে এ খাতের শ্রম অসন্তোষের মতো সমস্যা নিরসনে বেশ কিছু সুপারিশও তুলে ধরা হয়েছে। প্রসঙ্গত, চলতি মাসের শুরুতে তৈরি পোশাক শিল্পে নতুন মজুরি কাঠামো বাস্তবায়নের পর দেখা দেয় শ্রমিক অসন্তোষ। পরে সরকারের উদ্যোগে কয়েকটি গ্রেডে সংশোধন এনে মজুরি কাঠামো সংস্কার করলে পরিস্থিতি শান্ত হয়। ঢাকা, সাভার, আশুলিয়া, টঙ্গী, গাজীপুর অঞ্চলের ৬১ জন শ্রমিক, কারখানা মালিক ও ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এই অসন্তোষের কারণ খুঁজে বের করার প্রয়াস চালায় সিপিডি। সংস্থাটির পক্ষ থেকে বেশকিছু সুপারিশও তুলে ধরা হয়। সিপিডির মতে, নতুন বেতন কাঠামো ঘোষণার আগে ও পরের বিভিন্ন ধাপের কাজে যে ত্রুটিপূর্ণ প্রক্রিয়া অবলম্বন করা হয়েছিল, তার ফলেই শ্রমিকদের মধ্যে অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়ে। মজুরি নির্ধারণের ক্ষেত্রে যথার্থ প্রাতিষ্ঠানিক প্রক্রিয়া অবলম্বন করা হয়নি বলে সংস্থাটি মনে করে। তারা বলছে, মজুরি বৃদ্ধির ক্ষেত্রে গ্রেডভিত্তিক তারতম্য সৃষ্টি হওয়ায় শ্রমিকদের মাঝে অঞ্চল ও গ্রেডভেদে মিশ্র উপলব্ধির জন্ম দেয়। পাশাপাশি তারা বলেছে, নতুন মজুরি সম্পর্কে শ্রমিকদের পূর্ব ধারণা দেয়ার কোন উদ্যোগ অধিকাংশ মালিকই নেননি। আবার একেক কারখানায় একেকভাবে মজুরি বাস্তবায়ন ঘটেছে, আবার অনেক কারখানা নতুন কাঠামো অনুসরণ করে মজুরি বাড়ায়নি। টিপু মুনশি বলেন, সামনের দিনগুলোতে পাঁচজনের একটা প্রতিনিধি দল যদি শ্রমিক পক্ষ থেকে হয়, সময় সময় তাদের সঙ্গে আলাপ করে সমস্যাগুলো বিবেচনা করতে পারব। মালিক পক্ষকেও ডাকতে পারব। তাদের সঙ্গে কথা বলে আমরা সমস্যাগুলো সমাধানের চেষ্টা করব। তিনি বলেন, কোন শ্রমিককে যদি কোন মালিক অন্যায়ভাবে বের করে দেয় সেটা গ্রহণযোগ্য না। কেননা সেটা অমানবিক। স্বার্থের জন্য অন্যায়ভাবে কাউকে এ রকম করা ঠিক নয়। তিনি বলেন, বেতনের বিষয়ে যেটা করা হয়েছে, আমাদের বিজিএমইএ যেন অত্যন্ত সতর্কভাবে সেটা ফলোআপ রাখে। এফবিসিসিআই সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন মজুরি কাঠামোয় গ্রেডে সংখ্যা কমিয়ে আনার ওপর গুরুত্ব দিয়ে বলেন, গ্রেডের সংখ্যা কমিয়ে আনতে হবে। কারণ পোশাকখাতে মজুরি হয় কাজের দক্ষতার ওপর ভিত্তি করে। মজুরি বাড়লেও বিশ্ববাজারে দিনে দিনে পোশাকের দাম কমছে দাবি করে তিনি বলেন, এই পরিস্থিতিতে আরও বেশি সরকারী সহায়তা না পেলে এই শিল্প টিকিয়ে রাখা কঠিন হবে। বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমানও একই কথা বলেন। পোশাক শিল্পে সরকার প্রণোদনা বাড়ানোর কথাটিও সঠিক নয় বলে দাবি করেন তিনি। তিনি বলেন, সিপিডি যে প্রস্তাবনা বা তত্ত্ব উপস্থাপন করেছে, তা উন্নত বিশ্বের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। কিন্তু বাংলাদেশ এখন নিম্ন আয়ের দেশ থেকে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার প্রচেষ্টায় আছে। এগুলো আমাদের দেশের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। শ্রমিক নেতা মন্টু ঘোষ বলেন, শ্রমিকরা তাদের মনের ক্ষোভ প্রকাশ করার জন্য রাস্তায় নামতে বাধ্য হয়। সেখানে পুলিশ যদি তাদের ওপর আঘাত করে, তার প্রতিক্রিয়া কেমন হতে পারে, সেটা সবারই জানার কথা। এটা নিয়ে এখন যে শ্রমিক হয়রানি হচ্ছে কিংবা দোষারোপ করা হচ্ছে, সেটা উচিত নয়। মনের ভেতরে ক্ষোভ জমিয়ে রেখে প্রকৃত উৎপাদন সম্ভব নয়।
×