ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

স্বামীকে নিজ হাতে ৬ টুকরা করেছে পাষণ্ড স্ত্রী

প্রকাশিত: ০৬:০৬, ২৭ জানুয়ারি ২০১৯

স্বামীকে নিজ হাতে ৬ টুকরা করেছে পাষণ্ড স্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর ॥ গাজীপুরের শ্রীপুরে বেতনের টাকা নিয়ে কলহের জেরে স্ত্রীকে থাপ্পড় দেয়ায় তার হাতে নৃশংসভাবে স্বামী খুনের ঘটনা ঘটেছে। শনিবার গাজীপুর পুলিশ সুপার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে স্ত্রী জীবন নাহার তার স্বামী রফিকুল ইসলামকে ৬ টুকরো করে খুনের নৃশংস ঘটনা বর্ণনা করে। গাজীপুরের পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার সংবাদ সম্মেলনে জানান, গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার গড়গড়িয়া মাস্টার বাড়ির গিলার চালা এলাকার মেঘনা কারখানার সীমানা প্রাচীরের পাশে আব্দুল হাই মাস্টারের বাড়িতে স্ত্রী জীবন নাহারকে নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকতেন রফিকুল ইসলাম। রফিকুল ইসলাম (৩০) স্থানীয় হাউ আর ইউ পোশাক কারখানায় লোডার পদে এবং তার স্ত্রী জীবন নাহার (২৫) একই এলাকার মেঘনা নিট কম্পোজিট কারখানায় সুয়িং অপারেটর পদে চাকরি করে। রফিকুল ইসলাম ময়মনসিংহের তারাকান্দা থানার উলমাকান্দি এলাকার আব্দুল লাতিফের ছেলে এবং জীবন নাহার নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার বিষমপুর গ্রামের চান মিয়ার মেয়ে। স্বামী রফিকুল ইসলাম বেতন পেতেন সাত হাজার টাকা আর তার স্ত্রী জীবন নাহার বেতন পান ১৩ হাজার টাকা। বিভিন্ন সময় জীবন নাহারের বেতনের টাকা রফিকুল তার কাছে দিতে বলতেন। কিন্তু জীবন নাহার বেতনের টাকা স্বামীর কাছে না দিয়ে মায়ের কাছে পাঠিয়ে দিত। এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে প্রায়ই কলহ হতো। সপ্তাহ খানেক আগে, স্বামী রফিকুলকে ছেড়ে চলে যাওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন স্ত্রী জীবন নাহার। গত বৃহস্পতিবার সকালে এসব নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে স্ত্রীকে সজোরে থাপ্পর মারেন। এতে স্বামীর ওপর প্রচ- ক্ষুব্ধ হয় জীবন নাহার। ক্ষুব্ধ জীবন নাহার স্বামীর ওপর প্রতিশোধ নেয়ার জন্য ঘরে পায়চারি করতে থাকে। এ ঘটনার পর রফিকুল নিজ ঘরের খাটে শুয়ে থাকেন। এ সময় কোন কিছু বুঝে ওঠার আগে স্ত্রী জীবন নাহার ইট দিয়ে ঘুমন্ত স্বামীর মাথায় সজোরে আঘাত করে। মাথায় আঘাত পেয়ে রফিকুল খাট থেকে নিচে পড়ে যান। এমতাবস্থায় জীবন নাহার ইট দিয়ে তার স্বামীর মাথায় উপর্যুপরি আঘাত করলে অচেতন হয়ে পড়েন রফিকুল ইসলাম। একপর্যায়ে স্বামীর গলায় গামছা দিয়ে শ^াসরোধ করে রফিকুলের হত্যা নিশ্চিত করে। পরে নিহতের লাশ ঘরে থাকা ওয়ার্ড ড্রপে লুকিয়ে রেখে জীবন নাহার কারখানায় চলে যান। পরে বাসায় ফিরে রাতে পার্শ্ববর্তী বোন লুৎফুন্নাহারের বাসায় যান। এ সময় বোনের বাসায় রাতের খাওয়া দাওয়া করেন জীবন নাহার। এ সময় তিনি তার বোনকে জানান রফিকুল রাগ করে বাসা থেকে অন্যত্র চলে গেছেন। রাত ১১টার দিকে জীবন নাহার ঘরে ফিরে রফিকুলের লাশটি ওয়ার্ড ড্রপ থেকে বের করে। এ সময় লাশের পরিচয় গোপন করতে দা-বঁটি দিয়ে নিহতের দুই হাত কুনই থেকে, দুই পা হাঁটু থেকে এবং ঘাড় থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। পরে মাথা-হাত ও পা বিচ্ছিন্ন দেহাংশটি বস্তায় ভরে পাশের বাঁশ ঝাড়ে, দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন পা দুটি অদূরে একটি পরিত্যক্ত টয়লেটের পেছনে এবং দেহ হতে বিচ্ছিন্ন মাথা ও দুই হাতের অংশগুলো ময়লার ড্রেনে ফেলে দেয়। পরদিন সকালে এলাকাবাসী বাঁশ ঝাড়ের নিচে রক্তমাখা বস্তা ও লাশ দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায় এবং বিকেলে ঘটনাস্থল থেকে নিহত রফিকুলের লাশের ৬ টুকরো উদ্ধার করে। খ-িত অংশগুলো ওই এলাকার ৩০০ থেকে ৪০০ গজের ব্যবধানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফেলে রাখা হয়েছিল। এ সময় পুলিশ স্ত্রী জীবন নাহারকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করে। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে জীবন নাহার নৃশংসভাবে তার স্বামীকে খুনের ঘটনা স্বীকার করেন। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত জীবন নাহার বলেন, প্রায় পাঁচ বছর আগে রফিকুল ইসলামের সঙ্গে জীবন নাহারের বিয়ে হয়। তাদের ঘরে মারিয়া আক্তার রোজা নামের চার বছরের একটি কন্যা শিশু রয়েছে। রোজা বেশিরভাগ সময়ই তার নানির বাড়ি থাকত। ঘটনার দিনও রোজা বাসায় ছিল না। শ্রীপুর থানার ওসি মোঃ জাবেদুল ইসলাম জানান, এ ব্যাপারে নিহত রফিকুলের বাবা আব্দুল লতিফ বাদী হয়ে জীবন নাহারকে আসামি করে শ্রীপুর থানায় মামলা করেছেন। এ মামলায় আটক জীবন নাহারকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনে গভীরভাবে তদন্ত চলছে। সংবাদ সম্মেলনে গাজীপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) শামসুন্নাহার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেল শেখ, শ্রীপুর থানার ওসি মোঃ জাবেদুল ইসলামসহ পুলিশের কর্মকর্তা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
×