ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

তিনটি ক্ষেত্র নিয়ন্ত্রণের আশা

খাদ্য সেক্টরকে দুর্নীতি মুক্ত করতে চান নতুন খাদ্যমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৬:০৫, ২৭ জানুয়ারি ২০১৯

খাদ্য সেক্টরকে দুর্নীতি মুক্ত করতে চান নতুন খাদ্যমন্ত্রী

তপন বিশ্বাস ॥ খাদ্য মন্ত্রণালয় ও তার অধীন সকল সেক্টরকে দুর্নীতিমুক্ত করতে চান নতুন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। এ লক্ষ্যে তিনি কাজ শুরু করেছেন। মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর তিনি দুর্নীতির সূতিকাগারগুলো চিহ্নিত করে সেখানে হানা দেয়ার পরিকল্পনা করেছেন। এ বিষয়ে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার জনকণ্ঠকে বলেন, বদলি, নিয়োগ ও টেন্ডার এই তিনটি ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে এই সেক্টরের দুর্নীতি ৮০ ভাগ কমে যাবে বলে মনে করি। বাকিটুকু মনিটরিংয়ের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, খাদ্য অধিদফতর তথা মাঠ প্রশাসনে দুর্নীতির সূতিকাগার হলো খাদ্যগুদামগুলো। খাদ্যগুদামের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাধ্যমে এই সেক্টরের দুর্নীতি বিস্তার লাভ করে। গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সহযোগীদের মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে প্রতিনিয়ত টাকা উঠাতে থাকে। আর এই টাকার অংশ চলে আসে শীর্ষ মহল পর্যন্ত। এই সেক্টরের অতীতে যারা অবসরে গেছেন তাদের অধিকাংশ কর্মকর্তারা বিপুল বিত্ত-বৈভবেরও মালিক। এই সকল টাকা সারাদেশ থেকে সংগৃহীত হয়ে থাকে। ইতিপূর্বে অধিদফতরের প্রশাসন বিভাগের দায়িত্ব থাকা কর্মকর্তাদের কাছে প্রতি সপ্তাহে লাখ লাখ টাকা পৌঁছে দিত খাদ্যগুদামে চাকরি করা কর্মকর্তা-কর্মচারী। জানা গেছে, বড় গোডাউনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে পদায়ন পেতে টাকা ঘুষ দেয়ার প্রতিযোগিতা হওয়ারও নজির আছে এই বিভাগে। দুর্নীতি করলেও কিছু হয় না। উর্ধতন কর্মকর্তাকে ঠিক মতো কমিশন দিলে সে ভাল কর্মকর্তা বনে যান। আবার কমিশনে ঘাটতি হলে তার সামনে ঝুলতে থাকে খড়গ। এমনকি মন্ত্রীর নির্দেশে কেউ কোন গুদামে বদলি হলে তাকেও দিতে হয় উর্ধতন কর্মকর্তাকে মোটা অঙ্কের উপঢৌকন। তাতে গুদামের কর্মকর্তারাও বাধ্য হন দুর্নীতি করে তা পুষিয়ে নিতে। আবার কোন কোন ক্ষেত্রে সহকারী খাদ্য পরিদর্শকের (যাদের খাদ্য গুদামের দায়িত্বে দেয়ার কথা নয়) বড় খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। মোটা অঙ্কের উপঢৌকনের বিনিময়ে তারা এই নিয়োগ পেয়ে আসছেন। এই সকল কথা বিবেচনায় নিয়ে এই প্রথমবারের মতো খাদ্য পরিদর্শক, সহকারী পরিদর্শকসহ বিভিন্ন পদে গ্রেডেশন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন নতুন খাদ্যমন্ত্রী। জ্যেষ্ঠতা, সততা এবং কর্মদক্ষতাকে প্রাধান্য নিয়ে এই গ্রেডেশন করা হবে। এ বিষয়ে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, গ্রেডেশন করতে পারলে দক্ষ ও যোগ্য কর্মকর্তাদের বড় খাদ্যগুদামে পদায়ন করা হবে। স্বচ্ছতার সঙ্গে এই পদায়ন দিলে আশা করি তারাও দুর্নীতি থেকে সরে আসবেন। এর পরও তাদের ওপর থাকবে মনিটরিং ব্যবস্থা। তখন কেউ দুর্নীতি করলে ছাড় পাবে না। তাকে শাস্তি পেতে হবে। তিনি বলেন, পদায়নের জন্য এই নীতিমালা করা হবে। এর আগে কাউকে বদলি-পদায়ন না করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সূত্র জানায়, গ্রেডিং করা হলে প্রতি দুই বছর পর মনিটরিংয়ের ভিত্তিতে গ্রেডেশন তালিকা পরিবর্তন হবে। তাদের পদায়নের জন্য একটি নীতিমালাও থাকবে। কিন্তু খাদ্য অধিদফতরের কিছু কর্মকর্তারা এই গ্রেডেশনের বিরোধিতা করেছেন। তারা মন্ত্রীকে বলেন, এটা করা সম্ভব নয়। কিন্তু মন্ত্রী তাদের সাফ বলে দিয়েছেন, গ্রেডেশন তালিকা থাকতে হবে। হোটেল রেস্তরাঁর যদি গ্রেডেশন থাকতে পারে তবে কর্মকর্তাদের কেন থাকতে পারবে না। আমি কোন কথা শুনতে চাই না। এটা হতে হবে। জানা গেছে, এই গ্রেডেশন তালিকা প্রস্তুত করার জন্য খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার দেশে সকল খাদ্যপরিদর্শক ও সহকারী পরিদর্শকদের তালিকা সংগ্রহ করেছেন। তিনি নিজেও এইটি দেখছেন। পাশাপাশি ধারণ ক্ষমতার ভিত্তিতে খাদ্যগুদামগুলোরও গ্রেডিং করা হবে। খাদ্যগুদামগুলোকে তিনটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হবে। ‘এ’ গ্রেড, ‘বি’ গ্রেড এবং ‘সি’ গ্রেড। কর্মকর্তাদের গ্রেডেশন তালিকা থেকে নির্দিষ্ট সংখ্যক ‘এ’ গ্রেডের খাদ্যগুদামে পদায়ন পাবেন। এভাবে ‘বি’ গ্রেড ও ‘সি’ গ্রেডের খাদ্যগুদামে পদায়ন পাবেন। এছাড়া খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে সহল টেন্ডারিংকে ই-টেন্ডারিং করা নির্দেশ ইতোমধ্যে দিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের তিনি বলেছেন, কোন অবস্থায় আমি টেন্ডার বা অন্য কোন ক্ষেত্রে দুর্নীতি সহ্য করব না। এ বিষয়ে যা যা করা প্রয়োজন তা করতে তিনি নির্দেশ দিয়েছেন। খাদ্য অধিদফতরে প্রায় এক হাজার ছয়শত পদে নিয়োগের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। তিনি বলেন, এক হাজার ছয়শত পদের বিপরীতে প্রায় ১৩ লাখ আবেদন জমা পড়েছে। এটি বিসিএস-এর আদলে প্রথমে প্রিলিমিনারি পরীক্ষার মাধ্যমে প্রার্থী বছাই করতে হবে। পরে সেই বাছাইকৃতদের মধ্যে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা নিয়ে প্রকৃত মেধাবীদের নিয়োগ দিতে হবে।
×