ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ধরা পড়ছে না চোরাকারবারিরা

সীমান্ত দিয়ে অস্ত্র ও বিস্ফোরক আসা বন্ধ হয়নি

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ২৭ জানুয়ারি ২০১৯

সীমান্ত দিয়ে অস্ত্র ও বিস্ফোরক আসা বন্ধ হয়নি

স্টাফ রিপোর্টার, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ॥ সংসদ নির্বাচন শেষ হলেও সীমান্ত দিয়ে অস্ত্র ও বিস্ফোরক আসা বন্ধ হয়নি। অস্ত্রের চালান আসা অনেক বেড়ে গেছে। গত দুই মাসে প্রায় ১৮টি অস্ত্রের চালান এলেও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার বিচক্ষণতার কারণে পাচারকারীরা হারিয়েছে তাদের অস্ত্র ও বিস্ফোরক। কারণ এসব অস্ত্র ও বিস্ফোরক ধরা পড়েছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হাতে। তবে অস্ত্র চোরাকারবারিরা সুকৌশলে পালিয়ে যাওয়ার কারণে তাদের ধরা সম্ভব হয়নি। বেশকিছু দিন ধরে লক্ষ্য করা যাচ্ছে অস্ত্র ও বিস্ফোরক ধরা পড়লেও চোরাকারবারিরা ধরা পড়ছে না। এরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার উপস্থিতি টের পেয়ে অস্ত্র ও বিস্ফোরক ফেলে আবার সীমান্ত পেরিয়ে ভেতরে ঢুকে যাচ্ছে। যার কারণে অস্ত্র ব্যবসায়ীদের ধরা সম্ভব হচ্ছে না। তবে এসব অস্ত্রধারী ব্যবসায়ীরা খুব সম্ভব বাংলাদেশী নাগরিক। এরা দীর্ঘদিন ধরে অস্ত্র ব্যবসার কারণে ভারতে অবস্থান করে থাকে। বাধ্য হয়েই এরা ভারতে অবস্থান করছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে। এদের অধিকাংশ সন্ত্রাসের জনপদ শিবগঞ্জের মানুষ। নানান ধ্বংসাত্মক কর্মকা- ও নাশকতার কারণে ভারতে পালিয়ে গিয়ে বিভিন্ন জঙ্গী সংগঠনের আশ্রয়ে এরা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে। এদের একমাত্র কাজ হচ্ছে এপারে অস্ত্র ও বিস্ফোরক পাঠানো। এরা বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার সন্ত্রাসী ও জঙ্গীদের চাহিদা মাফিক অর্ডারের মালামাল ভারি, হালকা ও বিস্ফোরক পাঠিয়ে থাকে। একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে এখানকার জঙ্গী ও সন্ত্রাসীরা নতুনভাবে অস্ত্র ও বিস্ফোরক মজুদ করছে। এরা মাঝে মধ্যেই বিভিন্ন ধরনের মাদকও ঠেলে দিচ্ছে বাংলাদেশে। এদের সংখ্যা কয়েক হাজার। এদের অধিকাংশের বয়স ১৮ থেকে ৪০ এর মধ্যে। এরা শিবগঞ্জের বিভিন্ন করিডোর সংলগ্ন এলাকার সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে। কারণ একশ্রেণীর করিডোর গ্রহণকারী গরু আনার কাজেও ভারতে পালিয়ে থাকা সন্ত্রাসীদের ব্যবহার করে থাকে। এরা অবসর সময়ে গরু, মহিষ, ভেড়া পাঠিয়ে থাকে বাংলাদেশে। তবে এসব ভারতে পালিয়ে থাকা সন্ত্রাসীরা অস্ত্র, বিস্ফোরক, মাদক ও বিভিন্ন ধরনের পশু পাঠিয়ে থাকে আগাম টাকা নিয়ে। এরা বাংলাদেশী টাকা গ্রহণে কোন ধরনের ওজর আপত্তি তোলে না। তবে এখানকার অসাধু ব্যবসায়ীরা বাংলা টাকার সঙ্গে অনেক সময়ে ভারতীয় রুপী, ডলারও দিয়ে থাকে। তবে ভারতীয় রুপী ও ডলার পেলে ভারতে পালিয়ে যাওয়া সন্ত্রাসীরা পাঠানো পণ্যের কম দাম ধরে থাকে। তাদের আগ্রহ বেশি সোনা, রুপী ও ডলারের প্রতি। বহুদিন পর র‌্যাব ২টি পিস্তলসহ অস্ত্র ব্যবসায়ী নাইমুলকে আটক করে রানীবাড়ি চাঁন্দ থেকে ১৪ রাউন্ড গুলি ও ২টি ম্যাগজিন জব্দ করে। সাম্প্রতিক কালে অস্ত্রের একটি ছোট চালান বিজিবি ধরলেও পাচারকারীরা আবার ভারতে পালিয়ে যায়। অস্ত্র ব্যবসায়ীরা অস্ত্রের চালান পাঠানোর কাজে চটের ব্যাগ ব্যবহার করে থাকে। সাম্প্রতিক কালে শিবগঞ্জের তারাপুর মাঠ থেকে একটি পরিত্যক্ত চটের ব্যাগ উদ্ধার করে। চোরাকারবারিরা পালিয়ে যায় ভারতে। ব্যাগ থেকে একটি বিদেশী পিস্তল, একটি ম্যাগজিন ও সাত রাউন্ড গুলি জব্দ করে। এভাবে অস্ত্র চোরাকাবারিরা মাল ফেলে ভারতে ঢুকে পড়ে। একইভাবে শিবগঞ্জের বাগিচাপাড়ার একটি কলাবাগান থেকে বিজিবি সদস্যরা একটি পিস্তল, গুলি ও ম্যাগজিন উদ্ধার করে। বিজিবি ৫ জানুয়ারির আগ পর্যন্ত ১৭টি অভিযানে ২৬টি পিস্তল, ১০৬ রাউন্ড গুলি, ২৬টি ম্যাগজিন ও ২৭ কেজি গান পাউডার জব্দ করে। এর আগের দিন অর্থাৎ ৪ জানুয়ারি শুক্রবার গুলি, ম্যাগজিনসহ একটি বিদেশী পিস্তল উদ্ধার করে। একই ভাবে পুলিশ ও র‌্যাব অভিযান চালিয়ে কয়েক মাসে সম পরিমাণ অস্ত্র, বিস্ফোরক, গুলি ও ম্যাগজিন উদ্ধার করলেও তারা একজন অস্ত্র চোরাকারবারিকে ধরতে পারেনি। সন্দেহ করে যাদের ধরা হয়েছে তারা অস্ত্র চোরাকারবারি না ভারতী মালামাল আনার কাজে তাদের ব্যবহার করা হয় এটা কেউ নিশ্চিত করতে পারেনি। তবে তারা চোরাকারবারি এটা নিঃসন্দেহে বলা যায়। তিনটি আইন প্রয়োগকারী সংস্থার একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভারতে অবস্থানকারী অস্ত্র চোরাকারবারিরা এখানকার অর্ডার মোতাবেক অস্ত্র পাচার করে থাকে। একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে নিশ্চত করেছে উপজেলা নির্বাচন সামনে রেখে প্রতিদিন ভারতে অবস্থানকারী চোরাকারবারিরা অস্ত্রের ও বিস্ফোরকের অর্ডার পাচ্ছে। কোন কোন দিন ১০/১২টি করে অর্ডার পাচ্ছে। একটি সূত্র নিশ্চিত করে, ২৩ জানুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে প্রায় কয়েক হাজার কোটি টাকার অর্ডার গেছে ভারতীয় অস্ত্র ও বিস্ফোরকের। তবে এবার অস্ত্রের চেয়ে বিস্ফোরকের অর্ডার বেশি যাচ্ছে বাংলাদেশ থেকে বলে জানা গেছে।
×