ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৪ বৈশাখ ১৪৩১

চাঁপাইয়ে দস্যুদের দখলে দেবোত্তর সম্পত্তি

প্রকাশিত: ০৪:১৫, ২৭ জানুয়ারি ২০১৯

চাঁপাইয়ে দস্যুদের দখলে দেবোত্তর সম্পত্তি

স্টাফ রিপোর্টার, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ॥ একদিকে মাজারের জমি দখল, অপরদিকে দেবোত্তর সম্পত্তির দখল নিয়ে বড় ধরনের জটিলতা সৃষ্টিতে দুই ধর্মের মানুষের মধ্যে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে। এইসব ভূমি দস্যুদের নাকি মদদ দিচ্ছে বিএনপিসহ একটি ধর্মাদ্ধ, হামজি বিরোধী এবং প্রতিহিংসা পরায়ণ সাম্প্রদায়িক দল। মাজারের জমি দখলের ঘটনাটি গোমস্তাপুর উপজেলার কামারপাড়া গ্রামে। এখানে হযরত শাহ করমনি (রাঃ) সাহেবের মাজার রয়েছে। জমির পরিমাণ এখানে ৫৬ শতাংশ। মাজারের আশপাশ এলাকায় জমির অবস্থান। বর্তমানে এরমধ্যেই ৫০ শতাংশ জমি বিভিন্নভাবে দখল করে নিয়েছে ভূমিদস্যুরা। বিষয়টি কোর্ট পর্যন্ত গড়ালে দখলকারীদের বিরুদ্ধে কারণ দর্শানো নোটিস জারি করেছে কোর্ট। কিন্তু গোমস্তাপুর থানার ওসি জসিম উদ্দীন জানতে পেরে আইনশৃঙ্খলায় যাতে টান না পড়ে তার জন্য তিনি দখল করা জমিতে কোন স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না এই মর্মে গৃহনির্মাণ কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন। সাম্প্রতিক মাজার কমিটির সভাপতি আলহাজ খাদেমুল ইসলাম ও তার সঙ্গীরা উপজেলা পর্যায়ে সাংবাদিক সম্মেলন করে মাজারের জমি রক্ষার চেষ্টা করেন। তাদের অভিযোগ মাজারের ৫০ শতাংশ জমি বিভিন্নভাবে দখল নিয়ে খতিয়ানে জমির শ্রেণী পরিবর্তন করে কবুলিয়াত জাল দলিলের মাধ্যমে মাজারের জমি নিজেদের বলে দাবি করছে। এদিকে মাজারের জমি দিন দিন অবৈধ দখলকারীদের কবলে পড়ায় মাজারের স্থান সংকুচিত হয়ে আসছে। এই ঘটনায় মাজারের ভক্তসহ এলাকাবাসীর মধ্যে দারুণ ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়। এদিকে অবিলম্বে মাজার চত্বর অবৈধ দখল মুক্ত করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানিয়েছে মাজার কমিটি। একইভাবে শিবগঞ্জ উপজেলার চককীর্তি ইউনিয়নের বিমর্ষী গ্রামে দেবোত্তর সম্পত্তি বেদখল হবার কারণে পূজা অর্চনা ও তিন দিনের মেলা বন্ধ হয়ে গেছে। এখানকার হিন্দুরা এতটাই দুর্বল যে তারা কোন ধরনের মামলা মোকদ্দমায় যেতে পারেনি। অর্থ না থাকায় তারা এখন সমস্যার মধ্যে পড়েছে। বিমর্ষী মৌজার কালুবালু থানতলী নামে বিশাল নিমগাছের নিচে ২৪ শতাংশ জমির ওপর প্রতিবছর বাংলা পৌষ মাসের সংক্রান্তিতে পূজা অর্চনা হয়ে আসছে ব্রিটিশ আমল থেকে। স্থানীয়দের ধারণা এই বিশাল নিম গাছের বয়স দুইশত বছর পেরিয়ে গেছে। বহু আগে পূজা অর্চনাকে কেন্দ্র করে তিনদিনের মেলা বসত। মেলায় বিভিন্ন দেশ থেকে ভক্তরা এসে ভিড় জমাত। বিশেষ করে পশ্চিম বাংলার মুর্শিদাবাদ মালদহসহ একাধিক জেলার পরিবারগুলো এসে পূজা অর্চনায় যোগ দিয়ে মেলাকে মাতিয়ে তুলত। ভক্তদের খাবার দাবারের জন্য বড় বড় চুলা খুঁড়ে তৈরি করা হতো বিভিন্ন ধরনের ভোগ। ৯টি পরিবার এই মাটি দখল নিয়ে বাড়িঘর বানিয়েছে। দখলদার এইসব পরিবারের দাবি তারা ভূমিহীন হবার কারণে এখানে আশ্রয় নিয়েছে। তাদের দাবি তারা অন্যত্র কোথাও বসবাসের জায়গা পেলে স্থানটি দখল মুক্ত করে চলে যাবে। কিন্তু স্বপন কুমার সাহা জানান ৯ ব্যক্তি দীর্ঘদিন থেকে একটু একটু করে তাদের দেবোত্তর সম্পত্তি দখল করেই যাচ্ছেন। দখলদারেরা এতই প্রভাবশালী যে এখন জমির পরিমাণ এসে ঠেকেছে আধা শতকে। আধা শতকের ওপর নিমগাছ ও তার নিচে একটি পূজার স্থান থাকায় এ অংশটুকু দখল করতে পারছে না। পূজা অর্চনা শুরু হলে হিন্দুদের বড় ধরনের সমস্যায় পড়তে হয়। ভোগ রান্না করতে গেলে দখলদারদের বাড়ির মধ্যে করতে হয়। হিন্দুরা জানান, বিভিন্ন সময়ে তাদের সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসক, স্থানীয় সংসদ সদস্য, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে দেবোত্তর সম্পত্তির ওপর থেকে ভূমিদস্যুদের উচ্ছেদের আবেদন জানালেও অজ্ঞাত কারণে তা আমলে না নিয়ে চুপ করে থাকে। শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার চৌধুরী রওশান ইসলাম মিডিয়াকে বলেন তিনি মাত্র কয়েক মাস হলো এখানে বদলি হয়ে এসেছেন। তিনি বিষয়টি সম্পর্কে কোন ধরনের খবরা খবর জানে না। এখানে অর্থাৎ এলাকায় এক সময়ে দুইশত হিন্দু পরিবার বসবাস করলেও বর্তমানে নিম গাছের নিচের থানতলা ছাড়া কোন পরিবার নেই। কৌশলে মৌলবাদীরা নানান কৌশলে এদের তাড়িয়ে দিয়েছে। ভূষণ নামে এক পূজারী জানান তিনি ধারা চক্র থেকে তার বাবা দাদার সঙ্গে এখানে আসতেন পৌষসংক্রান্তিতে পূজা অর্চনা করতে। বর্তমানে জায়গা সংকটের কারণে ৫০ এর অধিক লোক জড়ো হতে পারে না। তাই এখন আর পরিবার নিয়ে আসা হয় না।
×