ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

১৩ শ্রমিকের মরদেহ হস্তান্তর ॥ পরিবার প্রতি লাখ টাকা

প্রকাশিত: ০৪:০৬, ২৭ জানুয়ারি ২০১৯

১৩ শ্রমিকের মরদেহ হস্তান্তর ॥ পরিবার প্রতি লাখ টাকা

তাহমিন হক ববী, নীলফামারী থেকে ॥ বাড়ি ফিরেছে প্রিয়জন। তবে কফিনে বন্দী হয়ে। বাড়ির প্রিয়জনের লাশ পেয়ে শোকে কাতর হয়ে পড়ে পরিবারের সদস্যরা। জলঢাকার বাতাস ভারি হয়ে ওঠে তাদের কান্না আর আহাজারিতে। শোকে মুহ্যমান পুরো এলাকা। শনিবার ভোর কাটিয়ে সকালের সূর্যটা উঁকি দিতেই একটি বড় কাভার্ড ভ্যানের গাড়ি করে পৃথক পৃথকভাবে কাঠের বাক্সে ১৩টি মরদেহ কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম হতে নীলফামারীর জলঢাকা নিয়ে আসা হয়। সকাল ৮টায় উপজেলার শিমুলবাড়ি ইউনিয়নের রাজবাড়ি কর্নময়ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে স্বজনদের কাছে মৃতদেহ হস্তান্তর করেন জেলা প্রশাসক বেগম নাজিয়া শিরিন। এ সময় প্রত্যেকের পরিবারকে মরদেহ দাফন ও সৎকারের জন্য সরকারী অনুদানের ২০ হাজার টাকা প্রদান করা হয়। সেই সঙ্গে দেয়া হয় শীতবস্ত্র ও শুকনো খাবারের প্যাকেজ প্যাকেট। মরদেহের মধ্যে ১০টি সংখ্যালঘু ও ৩টি মুসলিম পরিবারের। ধর্ম অনুযায়ী যে যার মতো দুপুরের মধ্যে শ্মশানঘাটে সৎকার ও কবরস্থানে দাফনের ব্যবস্থা করে। কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের ট্র্যাজেডির ১৩ জন নিহত শ্রমিকের মরদেহ কিভাবে পাবেন শোকের মাঝে এই চিন্তা স্বজনদের ভাবিয়ে তুলেছিল শুক্রবার ভোরে ঘটনার পর পরেই। কিন্তু কোন ঝুট ঝামেলা ছাড়াই বিনা খরচে সরকার যে মরদেহগুলো বাক্সবন্দী করে বহন করে এনে নিহতদের বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দেবে এটি তারা ভাবতেও পারেনি। স্বজনদের লাশ পেতে কোন হয়রানি হতে হয়নি। ছুটে যেতে হয়নি কুমিল্লায়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুজাউদৌলা, জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার সুভাশিষ চাকমা, সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আরিফা সুলতানা লাভলী, মুক্তিযোদ্ধা কান্তি ভুষন রায়, শিমুবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হামিদুল হক ও মীরগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হুকুম আলী। এর আগে এত লাশ এক সঙ্গে এলাকাবাসী দেখেনি। সকলের চোখে কান্নার জল। কেউ এটি মেনে নিতে পারছে না। শুক্রবার ভোর সোয়া ৫টার দিকে পূর্বাঞ্চলের কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার ঘোলপাশা ইউনিয়নের নারায়ণপুর এলাকায় কাজী এ্যান্ড কোং নামের একটি ইটভাঁটির কয়লার ট্রাক উল্টে ঘুমন্ত ১৩ শ্রমিক নিহত হয়। নিহতরা হলেন নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার শিমুলবাড়ি ইউনিয়নের আরাজি শিমুলবাড়ি গ্রামের অমল চন্দ্র রায়ের ছেলে মনোরঞ্জন রায় (১৫), মৃত জগদীশ চন্দ্র রায়ের ছেলে মৃণাল চন্দ্র রায় (১৬), রাজবাড়ি গ্রামের ধৌলু বর্মনের ছেলে কনক চন্দ্র (৩২), খোকারাম রায়ের ছেলে বিকাশ রায় (৩২), মীরগঞ্জ ইউনিয়নে নিজপাড়া কুড়ারপাড় গ্রামের কেশব চন্দ্র রায়ের ছেলে শঙ্কর চন্দ্র রায় (১৬), অমল চন্দ্র রায়ের ছেলে প্রশান্ত রায় দীপু (১৫), মানিক চন্দ্র রায়ের ছেলে তরুণ চন্দ্র রায় (১৫), সুরেশ চন্দ্র রায়ের ছেলে রঞ্জিত কুমার (৩০), কামিক্ষা রায়ের ছেলে অমিত চন্দ্র রায় (১৯), রাম প্রসাদ চন্দ্রের ছেলে বিপ্লব কুমার রায় (১৫) ও পাঠানপাড়া গ্রামের জাহাঙ্গীর আলমের ছেলে মোঃ সেলিম (১৫), নুর আলমের ছেলে মোরসালিন (১৮) ও ফজলুল হকের ছেলে মোঃ মাসুম (১৬)। এ সকল নিহতদের পরিবারদের শ্রম মন্ত্রণালয় হতে এক লাখ ও আহতদের পরিবারকে ৫০ হাজার টাকা করে প্রদানের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। শনিবার সকালে এই আর্থিক সহায়তার ঘোষণা দিয়েছেন শ্রম প্রতিমন্ত্রী বেগম মুন্নুজান সুফিয়ান।
×