ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মুনাফার আশায় পোর্টফলিও পুনর্বিন্যাস করছেন বিনিয়োগকারীরা

প্রকাশিত: ০৩:৫৮, ২৭ জানুয়ারি ২০১৯

মুনাফার আশায় পোর্টফলিও পুনর্বিন্যাস করছেন বিনিয়োগকারীরা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ নির্বাচনের পর থেকে উর্ধমুখী রয়েছে দেশের শেয়ারবাজার। তালিকাভুক্ত সব ধরনের শেয়ারদর বাড়ার পাশাপাশি বাড়ছে লেনদেন এবং সূচক। এই সুযোগে স্বল্প সময়ে অধিক লাভের আশায় রয়েছেন অধিকাংশ বিনিয়োগকারী। এসব বিনিয়োগকারী রাতারাতি পুঁজি বাড়ানোর জন্য ঘনঘন পোর্টফলিওতে পরিবর্তন আনছেন। দ্রুত এক খাত থেকে বিনিয়োগ তুলে নিয়ে অন্য খাতে চলে যাচ্ছেন তা। তবে খাতভিত্তিক লেনদেন করার চেয়ে মৌলভিত্তি সম্পন্ন কোম্পানিতে বিনিয়োগ বৃদ্ধিমানের কাজ বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। তাদের অভিমত বাছ-বিচার ছাড়া খাতভিত্তিক বিনিয়োগ এক সময় তাদের জন্য হিতে বিপরীত হতে পারে। সম্প্রতি বাজার চিত্রে পরিলক্ষিত হয় কিছুদিন আগে বিনিয়োগকারীদের নজর ছিল বস্ত্র খাতের শেয়ারে। এটি শুরু হয় নির্বাচনের কিছুদিন আগে। কিন্তু নির্বাচনের পরপরই এ খাতের দিকে আরও বেশি ঝুঁকে যান বিনিয়োগকারীরা। তখন কারণ ছাড়াই এ খাতের বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারদর একযোগে বাড়তে থাকে। এর পরপরই বিনিয়োগকারীরা ঝুঁকে পড়ের ব্যাংকিং খাতের শেয়ারে। তখন ব্যাংক খাতের প্রায় সব শেয়ারদর প্রায় একযোগে বাড়তে থাকে। যদিও এসব শেয়ার দর বৃদ্ধি নিয়ে তেমন কোন বিতর্ক দেখা যায়নি। কারণ দীর্ঘদিন থেকে ব্যাংক খাতের অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ার দর তলানিতে অবস্থান করছেন। এখন চলছে বীমা খাতের কোম্পানি প্রাধান্য। তবে এর মধ্যেও কিছু কোম্পানির শেয়ারের বিনিয়োগের আগে ভেবে দেখার পরামর্শ দিয়েছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। ব্যাংক শেয়ারের দরবৃদ্ধির পর বিনিয়োগকারীদের নজর চলে আসে আর্থিক খাতের শেয়ারের। যে কারণে অন্য খাতের মত এ খাতের অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারদর বাড়তে থাকে। এটি বাজারের একটি শক্তিশালী খাত হলেও এখানেও কিছু দুর্বল শেয়ার রয়েছে। যে কারণে এসব শেয়ার বিনিয়োগকারীদের ভোগান্তির কারণ হতে পারে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। জানতে চাইলে ডিবিএর প্রেসিডেন্ট শাকিল রিজভী বলেন, আমি বিনিয়োগকারীদের একটি কথা বারবার বলি তা হচ্ছে কোন কোম্পানিতে বিনিয়োগের আগে সেই কোম্পানির আর্থিক অবস্থা বিবেচনায় নিতে হবে। কোন খাতের অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ার দর বাড়ছে বলে ওই খাতের সব কোম্পানির শেয়ারদর বাড়বে এমনটি ভাবা ঠিক নয়। বিশেষ করে দর বৃদ্ধির পাওয়া কোম্পানিতে শেষর দিকে যারা শেয়ার ক্রয় করেন তারাই বেশি বিপদে পড়েন। বস্ত্র, ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান ছেড়ে বর্তমানে বিনিয়োগকারী নজর দিয়েছেন বিমা খাতের দিকে। যে কারণে বর্তমানে এখাতের কোম্পানির শেয়ারদর উর্ধমুখী রয়েছে। গত সপ্তাহজুড়ে দেখো গেছে এই খাতের আধিপত্য। সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসেই দর বৃদ্ধির শীর্ষে অবস্থান করেছে এ খাতের কোম্পানি। যার জের ধরে সপ্তাহ শেষে দরবৃদ্ধির শীর্ষ (ক্লোজ প্রাইজের ভিত্তিতে) দশ কোম্পানির মধ্যে নয়টিই ছিল এ খাতের কোম্পানি। কোম্পানিগুলো হচ্ছে অগ্রণী ইন্স্যুরেন্স, সোনার বাংলা ইন্স্যুরেন্স, ইউনাইটেড ইন্স্যুরেন্স, ফেডারেল ইন্স্যুরেন্স, কর্ণফুলী ইন্স্যুরেন্স. ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্স, সিটি জেনারেল ইন্স্যুরেন্স, পূরবী জেনারেল ইন্স্যুরেস এবং বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স। বিষয়টি নিয়ে আলাপ করলে বাজার সংশ্লিষ্টরা বলেন, ব্যাংক খাতের মতো এ খাতের কিছু কোম্পানির শেয়ারদর বিনিয়োগের অনুকূলে রয়েছে। তবে বেশ কিছু কোম্পানির শেয়ারদর অকারণেই বেড়েছে। যার কোন ভিত্তি নেই। বিনিয়োগকারীরা যে কোন সময় এসব শেয়ার নিয়ে ভোগান্তিতে পড়তে পারেন। এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএসইর একজন পরিচালক বলেন, বিমা খাতের অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ার দর বৃদ্ধির কোন যুক্তি নেই। বর্তমানে এ খাতসহ অন্য খাতগুলোতে জুয়াড়িদের উপস্থিতি সক্রিয়। তারা একটি সেক্টর ছেড়ে অন্য একটি সেক্টরে যাচ্ছে। এর সঙ্গে সঙ্গে বিনিয়োগকারীরাও পোর্টফলিও পরিবর্তন করছেন। এটা এক সময় তাদের বিপদের কারণ হতে পারে।
×