ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

অভিমত ॥ দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে...

প্রকাশিত: ০৩:৪৬, ২৭ জানুয়ারি ২০১৯

অভিমত ॥ দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে...

দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে সরকারের পাশাপাশি দরকার সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা। এই দুইয়ের সমন্বয়ে দুর্নীতি অনেকাংশে রোধ করা সম্ভব। আমার চাকরি জীবনের এমন অনেক ঘটনা ঘটেছে। এক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাড়তি প্রাণশক্তি হিসেবে কাজ করেছে। প্রথম কথা দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়তে গেলে বাধা আসবেই। তবে মজার ব্যাপার হলো, শেষ পর্যন্ত জয় হবেই। পরিচ্ছন্নভাবে কাজ করতে গেলে অনেক সময়ই বিব্রতকর অবস্থায়ও পড়তে হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরে চাকরি করার সময় তদানীন্তন ত্রাণ ও খাদ্যমন্ত্রী বর্তমানে কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাকের নির্দেশে অনেকটা চ্যালেঞ্জের মুখে সরকারের আত্মসাত করা টাকা উদ্ধারে নেমেছিলাম। খানিকটা সফলও হয়েছিলাম। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে টিআর ও কাবিখার আত্মসাতকৃত বহু টাকা আদায় করি। তা সরকারী কোষাগারে জমা দিতে বাধ্য করেছিলাম। এ নিয়ে বহু বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছিল। বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের একটা প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক থাকা অবস্থায় সার, পাট বীজ, কীটনাশক ইত্যাদি থেকে লুণ্ঠনকৃত লাখ লাখ টাকা আদায় করেছি। ওইসব টাকা সরকারী কোষাগারে জমা দিতে বাধ্য করেছিলাম। বিদেশ না গিয়েই বিদেশ যাওয়ার কথা বলে বহু রাঘব বোয়াল টাকা মেরে দিয়েছিল। পরবর্তী সময়ে তদন্তের পর সেইসব ব্যক্তিদের কাছ থেকে প্রায় নয় হাজার মার্কিন ডলার আদায় করে সরকারী কোষাগারে জমা দেই। যার মধ্যে সাবেক একজন মন্ত্রীও ছিলেন। তবে তিনি টাকা দিতে পুরোপুরি সহযোগিতা না করলেও, অসযোগিতাও করেননি। এতে করে অনেক বাধা বিপত্তি এসেছে। আমাকে হয়রানি করা হয়েছে। তারপরেও দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে আমার অবস্থান দৃঢ় ছিল। ওই সময় দুর্নীতির কারণে কোন কোন কর্মকর্তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছিল। প্রমাণের পর কোন কোন প্রকল্প থেকে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের নাম বাদ দেয়া হয়েছিল। এসব কর্মকা-ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এবং পাট অধিদফতরের প্রাক্তন মহাপরিচালক বর্তমানে বিএসটিআইয়ের মহাপরিচালক মহোদয় আমাকে যথেষ্ট সাহায্য করেছেন। দেশের পাট ও পাট বীজ উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য ৪৪টি জেলার দু’শ’টি উপজেলার আনাচে-কানাছে ঘুরেছি। কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করেছি। কৃষক এবং কর্মকর্তাদের হাতে-কলমে কাজ শিখিয়েছি। পাটের হারিয়ে যাওয়া অতীত পুনরুদ্ধারের জন্য সকলের সঙ্গে আপ্রাণ চেষ্টা করেছি। সেখান থেকেও কয়েকজন দুর্নীতিবাজকে হাতে-নাতে ধরার সুযোগ হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে লিখিতভাবে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য পাট অধিদফতরের বর্তমান মহাপরিচালককে বলেছি। ওইসব কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য লিখিতভাবে অভিযোগ করেছি। বর্তমানে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। বীমা খাতের প্রতি সাধারণ মানুষের একটি পজেটিভ ধারণা আনার জন্য প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন। সেই নির্দেশনা মোতাবেক বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে একটি শক্তিশালী দল গঠন করে কাজ করছি। গত এক বছরে গ্রাহকদের করা অভিযোগের মধ্যে প্রায় ২৩ হাজার অভিযোগের নিষ্পত্তি করেছি। অভিযোগকারীদের প্রায় সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকা বিভিন্ন বীমা কোম্পানির কাছ থেকে আদায় করে হস্তান্তর করা হয়েছে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে বর্তমান সরকার অত্যন্ত শক্ত অবস্থান নিয়েছে। সরকারের সহযোগী হিসেবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এখন সকলের সম্পৃক্ততা নিশ্চিত হলে সফলতা আমরা পাবো। সম্প্রতি ফিজিতে একটি আন্তর্জাতিক সেমিনারে উন্নত দেশসমূহ কর্তৃক কার্বনডাই-অক্সাইড উদগীরণের ফলে বাংলাদেশের ক্ষতির পরিমাণ উল্লেখ করে ক্ষতিপূরণ দাবি করেছি। বিশ্বব্যাংক, জাতিসংঘের প্রতিনিধি ও ৪০টি দেশের প্রতিনিধিদের সামনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে চলমান উন্নয়ন সর্ম্পকিত চিত্র তুলে ধরা হয় ওই সেমিনারে। আমার বিশ্বাস আমরা সবাই যদি সততা আর দেশপ্রেমের আদর্শ নিয়ে কাজ করি তাহলে, দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ অবশ্যই গড়ে তোলা সম্ভব। লেখক : অতিরিক্ত সচিব
×