ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জলবায়ুর ধকলে

প্রকাশিত: ০৪:৩৫, ২৬ জানুয়ারি ২০১৯

 জলবায়ুর ধকলে

জলবায়ু পরিবর্তনের ধকল ক্রমশই বাড়ছে। বিশ্বজুড়েই তার আগ্রাসন চলছে। বিশ্ববাসীকে আতঙ্ক, উদ্বেগ ও সংশয়ের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। প্রতিবছর তাপমাত্রা ও অস্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ যেভাবে বাড়ছে, তা মোকাবেলায় ব্যবস্থা না নিলে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে অর্থনীতি, জনগণের জীবনযাত্রা ও অবকাঠামো খাতের উপর। ২০৫০ সালের মধ্যে বার্ষিক গড় তাপমাত্রা এক থেকে দেড় ডিগ্রী সেলসিয়াস পর্যন্ত বাড়তে পারে এই বাংলাদেশেই। এতে এ দেশের ১৩ কোটি ৪০ লাখ মানুষ বড় ধরনের ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব যে এরই মধ্যে পড়তে শুরু করেছে, তা বিশ্বব্যাংকেরই বিভিন্ন সময়ের প্রতিবেদনে প্রতিফলিত হচ্ছে। এমনটাও বলা হয়েছে, কোন উদ্যোগ নেয়া না হলে ২০৫০ সাল নাগাদ দক্ষিণ এশিয়া, সাব-সাহারা আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার ১৪ কোটি ৩০ লাখ মানুষকে দেশের অভ্যন্তরে বাস্তুচ্যুত হতে হবে। খরা, শস্য নষ্ট হয়ে যাওয়া এবং সমুদ্রের পানির উচ্চতা বৃদ্ধিতে এ সকল দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ সমুদ্রগর্ভে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকায় এমন বিপর্যয়কর পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে ২০৫০ সালে বাংলাদেশের জনসংখ্যা দাঁড়াবে ২০ কোটি ২০ লাখ। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাস্তুচ্যুত মানুষের সর্বনিম্ন সংখ্যা দাঁড়াবে এক কোটি ৩৩ লাখ। এই হিসাবে দেশের মোট জনসংখ্যার সাত দশমিক ৫৩ শতাংশ তাদের ভিটেমাটি হারিয়ে পথে বসে যাবে। আর যদি প্রতিকারমূলক কোন পদক্ষেপ না নেয়া হয়, তা হলে এ সংখ্যা এক কোট ৯৯ লাখ তথা প্রায় দুই কোটিতে উপনীত হবে। তখন জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে থাকবে দেশের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ। এটি বাস্তুবিকই এক মহা দুশ্চিন্তার বিষয়। তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে হিমবাহু গলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে ঝুঁকিতে আছে বাংলাদেশ ও মালদ্বীপ। এ অবস্থায় বাংলাদেশের বেশ কিছু অংশ তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন বিজ্ঞানীরা। বর্তমান বিশ্ব উষ্ণতা বৃদ্ধিও জলবায়ু পরিবর্তনে মানব সমাজের ওপর অভিযাত নিয়ে সারাবিশ্বেরই আলোচনা চলছে। বিশ্ব প্রকৃতির ভাঙাগড়া সর্বকালেই ছিল। কিন্তু বিষয়টি এখন জনমনে নতুন অনুসন্ধিৎসার জন্ম দিয়েছে। প্রকৃতির উপর আমাদের কোন হাত নেই, এ কথা যেমন সত্য, তেমনি নিজেদের আচার-আচরণের মাধ্যমে প্রকৃতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে বিশ্ব উষ্ণতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করারও কোন অর্থ হতে পারে না। তাই জলবায়ু পরিবর্তন জনিত ক্ষয়ক্ষতি যতটা সম্ভব কমিয়ে আনাই প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত। এটা অনস্বীকার্য যে, অধিক জ্বালানি ব্যবহার ও অন্যান্য কারণে জলবায়ু পরিবর্তনে উন্নত দেশগুলোর ভূমিকাই সর্বাধিক এবং এর নেতিবাচক প্রভাব অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর উপরই বেশি পড়ছে। তবে এ কথাও সত্য যে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে উন্নত দেশগুলোও আজ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ দুর্বিপাকে নিপতিত হচ্ছে। অধিক বৃষ্টি বা তুষারপাতে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ জর্জরিত হচ্ছে। এ থেকে প্রমাণিত হয় যে, জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত হতে কেউই রক্ষা পাবে না। যা এখন একটা বৈশ্বিক সমস্যা এবং এই সমস্যার মোকাবেলাও করতে হবে বৈশ্বিকভাবে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পর জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টিকে অবহেলার চোখে দেখলেও এখন এর গুরুত্ব খানিকটা উপলব্ধি করতে পারছেন বলেই প্রতীয়মান হয়। এতে প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নে স্থবিরতা কেটে যেতে পারে যদিও এ ব্যাপারে এখনও দৃশ্যমান কোন অগ্রগতি নেই। এতদিন গরিব ও অনুন্নত দেশগুলো বলে থাকলে ভুল হবে, কেবল উন্নত দেশের সাহায্যের আশায় বসে না থেকে সামর্থ্য অনুযায়ী নিজেদেরও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক জলবায়ু সম্মেলনে গ্রীন হাউস গ্যাস নির্গমনের হার কমিয়ে আনার বিষয়ে যে মতৈক্য হয়েছিল, তা বাস্তবায়নে বিশ্বের সব দেশকে এগিয়ে আসা জরুরী। কিন্তু আন্তর্জাতিক ফোরামে অনেক আলোচনা হলেও তা যথাযথ বাস্তবায়নে এগিয়ে আসছে না কেউ। ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর উচিত এ ব্যাপারে সম্মিলিতভাবে জোরালো দাবি উত্থাপন করা। সেই সঙ্গে প্রতিটি দেশের সরকারকে তাদের নিজ নিজ দেশের ঝুঁকি মোকাবেলার প্রস্তুতি নিতে হবে।
×