ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সৌদি বিনিয়োগ

প্রকাশিত: ০৪:৩৪, ২৬ জানুয়ারি ২০১৯

সৌদি বিনিয়োগ

কোন উন্নয়নকামী দেশে বিদেশী বিনিয়োগ পেতে সবচেয়ে বেশি জরুরী হলো সরকারের ধারাবাহিকতা। আর সরকারের ধারাবাহিকতা তখনই থাকে যখন সুশাসন বিদ্যমান থাকে এবং দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকে। এমন ইতিবাচক পরিবেশেই দেশের উন্নয়ন যে সম্ভব, সেটি বলাই বাহুল্য। দেশের সার্বিক উন্নয়ন চলমান থাকলে বাইরের রাষ্ট্র দেশটিতে বিনিয়োগে আগ্রহী হয়, এটাই বাস্তবতা। তবে এ জন্য রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ, পরিকল্পনা প্রস্তাব প্রণয়ন এবং পারস্পরিক সুসম্পর্ক খুবই প্রয়োজন। সৌদি আরবের সঙ্গে বাংলাদেশের রয়েছে দীর্ঘ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। সেখানেই আমাদের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার ছিল। অধুনা দেশটির কিছু অভ্যন্তরীণ নীতির কারণে সৌদি আরবের শ্রমবাজার সঙ্কুচিত হয়ে পড়ছে। যদিও আগামীতে সেক্ষেত্রেও বাংলাদেশের রয়েছে বিশেষ সম্ভাবনা। সম্প্রতি সৌদি আরব বাংলাদেশে বড় অঙ্কের বিনিয়োগ প্রস্তাব বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এ লক্ষ্যে কিছুকালের মধ্যে সৌদি আরবের বাণিজ্য ও বিনিয়োগসংক্রান্ত সরকারী চারটি দফতরের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফরে আসছে। সফরকারী প্রতিনিধি দলটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বিডা, অর্থ মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য, শিল্প ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে মিলিত হবে। প্রসঙ্গত সৌদি আরব বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সৌদি সফরকালে এ নিয়ে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সইয়ের পর সৌদি বিনিয়োগকারীরা কয়েকবার বাংলাদেশ সফর করেছেন। সৌদি আরবের সঙ্গে স্বাক্ষরিত এমওইউ অনুযায়ী দেশটির আলফানা কোম্পানি বাংলাদেশে ১০০ মেগাওয়াট উৎপাদনক্ষম সৌরবিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপনে বিনিয়োগ করবে। ইঞ্জিনিয়ারিং ডাইমেনশন্স নামের একটি সৌদি প্রতিষ্ঠান ছাতক সিমেন্ট কারখানার মানোন্নয়ন করে কাফকো মডেলে প্লান্ট নির্মাণ করবে। এ ছাড়া দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য প্রতিবছর বাড়ছে। স্মরণযোগ্য লন্ডনের জ্যেষ্ঠ ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে কমনওয়েলথভুক্ত সরকার প্রধানদের এক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে এশিয়ার সেরা বিনিয়োগ হাব হিসেবে উল্লেখ করে বিশ্বের শীর্ষ ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছিলেন। সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশে প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগ বাড়ছে। গত অর্থবছরে তিন বিলিয়ন ডলারের প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগ এসেছে। অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন ও টেকসই উন্নয়নের জন্য বর্তমান সরকারের নেয়া বিভিন্ন নীতি ও কর্মসূচীর সুফল আসতে শুরু করেছে। গ্যাস, বিদ্যুত ও পেট্রোলিয়াম, তৈরি পোশাক শিল্প এবং টেলিকমিউনিকেশন খাতে আগের তুলনায় বিনিয়োগ বৃদ্ধি যথেষ্ট আশাব্যঞ্জক। ফুড প্রোডাক্ট এবং কৃষি ও মৎস্য খাতে কী উপায়ে আরও বিনিয়োগ আনা যায় এ বিষয়ে উদ্যোগী হওয়ার সুযোগ কাজে লাগাতে হবে। এ ছাড়াও আরও কয়েকটি খাত শনাক্ত করে পরিকল্পিতভাবে সম্ভাবনার দিকটি তুলে ধরে উদ্যোগ গ্রহণ করা হলে সে সব খাতেও বিনিয়োগ আনা অসম্ভব হবে না। বর্তমান সরকার প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগের জন্য দেশের বিভিন্ন এলাকায় ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে এবং অধিকতর বৈদেশিক বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টিতে প্রয়োজনীয় সংস্কার কার্যক্রমও বাস্তবায়ন করছে। অতীতের যে কোন সময়ের চাইতে বর্তমানে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি ভাল। বিনিয়োগের জন্যও যে এটি সুবর্ণ সময়, এই যুক্তিগুলো ছোট ও বড় সবস্তরের বিনিয়োগকারীর সামনে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করার বিকল্প নেই। আগামীতে এশিয়ায় সেরা বিনিয়োগ যে বাংলাদেশেই হবে- এমনটা শুধু স্বপ্ন নয়, বাস্তবরূপ লাভ করবে বলেই দেশবাসী আশা করে। সৌদি আরবে আমাদের শ্রমবাজারের নতুন সম্ভাবনা তৈরি হোক, সেটিও প্রত্যাশা।
×