ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সান্তাহার-নওগাঁ-রহনপুর রেলপথ নির্মাণ ১০৮ বছরেও হয়নি

প্রকাশিত: ০৪:০৬, ২৬ জানুয়ারি ২০১৯

 সান্তাহার-নওগাঁ-রহনপুর  রেলপথ নির্মাণ ১০৮ বছরেও হয়নি

বিশ্বজিৎ মনি, নওগাঁ ॥ উত্তরাঞ্চলের প্রসিদ্ধ রেলওয়ে জংশন সান্তাহার থেকে নওগাঁ হয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর পর্যন্ত ৯৯ কিমি রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের কাজ দীর্ঘ ১০৮ বছরেও আলোর মুখ দেখেনি। তদানীন্তন ব্রিটিশ আমলে সান্তাহার জংশন থেকে নওগাঁর ওপর দিয়ে রহনপুর পর্যন্ত রেলপথ স্থাপনের গণদাবির প্রেক্ষিতে ১৯১০ সালে তদানীন্তন ইস্টার্ন বেঙ্গল স্টেট রেলওয়ে একটি জরিপ পরিচালনা করে। জরিপ দলের নেতা ডেলগ্রিন তার রিপোর্টে অবিলম্বে এই রেলপথ নির্মাণের সুপারিশ করেন বলে বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভক্তির পর থেকে উত্তরাঞ্চলের মানুষের দাবির প্রেক্ষিতে তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের রেলওয়ে বোর্ড ১৯৬৩ সালে এই প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষে পুনরায় কাজ শুরু করে। এই জরিপ দলের তৎকালীন প্রধান মরহুম আশরাফ আলী আগের জরিপ কর্মকর্তা ডেলগ্রিনের রিপোর্টের পক্ষে মত দেন। তিনি অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে ১৯৪ পৃষ্ঠার লিখিত রিপোর্টে প্রকল্পের একটি ব্লুপ্রিন্ট ১৯৬৪ সালে পূর্ব পাকিস্তানের গবর্নরের কাছে হস্তান্তর করেন। কিন্তু যাবতীয় প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পরেও রেলওয়ে বোর্ড রহস্যজনকভাবে হঠাৎ করেই প্রকল্পটি বন্ধ করে দেয়। ১০৮ বছর আগে জরিপের পর বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার সান্তাহার রেলওয়ে জংশন থেকে নওগাঁ হয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পর্যন্ত এই রেলপথ নির্মাণের পক্ষে মত দেয়া হয়। পরবর্তীতে প্রকল্পটি হাতে নিয়েও বন্ধ করে দেয়া হয়। ব্রিটিশ, পাকিস্তান এবং পরবর্তীতে বাংলাদেশ কোন সরকারই জনগুরুত্বপূর্ণ এই দাবি বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে অনগ্রসর এই জনপদে সারাবছর যাত্রীর পাশাপাশি উৎপাদিত কৃষিপণ্য বিশেষ করে ধান, পাট, আম, গম, আখ, ভুট্টা ইত্যাদি পরিবহনে প্রধান ভূমিকা রাখতে পারবে। যোগাযোগের ক্ষেত্রেও ঘটবে উন্নয়নের বিপ্লব। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের সংসদে এই প্রকল্পের কথা উপস্থাপন করেছিলেন তৎকালীন সংসদ সদস্য মরহুম আবুল কালাম আজাদ ও মরহুম মোজাফ্ফর রহমান চৌধুরী। স্বাধীনতার পর ১৯৭৯ সালে জাতীয় সংসদের বাজেট আলোচনায় সান্তাহার-রহনপুর রেলপথ প্রকল্পটি নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। ৬৬ মাইল দীর্ঘ এই রেলপথ প্রকল্পটিতে ব্রডগেজ ও মিটারগেজ লাইন স্থাপনের কথা ছিল। এই রেলপথে ১১টি স্টেশন স্থাপনের কথা ছিল। সান্তাহার ও রহনপুরের মধ্যকার স্টেশনগুলো হলো- নওগাঁ শহর, হাপানিয়া হাট, হযরতপুর, জাহাঙ্গীরাবাদ, মহিষবাথান, নজিপুর, মধইল, সাপাহার, পোরশার সরাইগাছী বাজার, বেজোড়া ও দাদপুর। উক্ত প্রকল্পে ২টি রেলসেতু নির্মাণেরও কথা ছিল। একটি নওগাঁ শহরের ডিগ্রী কলেজের উত্তর ধারে ছোট যমুনা নদীর ওপর এবং অন্যটি পত্নীতলা উপজেলার নজিপুরে আত্রাই নদীর ওপর। তবে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ নওগাঁ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ তথা বরেন্দ্র অঞ্চলের আর্থসামাজিক উন্নয়নে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটাতে তেমন কোন পদক্ষেপ নেয়নি। তবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বরেন্দ্র সন্তান সাধন চন্দ্র মজুমদার এমপি খাদ্যমন্ত্রী নিযুক্ত হওয়ায় এলাকাবাসী আশায় বুক বেধেছে। উন্নয়নের সরকার শেখ হাসিনা বিষয়টি ভেবে দেখবেন বলে এলাকার সচেতনমহল আশা করছেন। ইতোমধ্যেই খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার এমপি বলেছেন, নওগাঁ ও চাঁপাইয়ের মানুষের শতাধিক বছরের স্বপ্ন এই রেলপথ নির্মাণে তিনি শেখ হাসিনার আশু হস্তক্ষেপ কামনা করবেন।
×