ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সান্তাহারে জাল কাগজে খাস জমি বিক্রির তথ্য ফাঁস

প্রকাশিত: ০৪:০১, ২৬ জানুয়ারি ২০১৯

 সান্তাহারে জাল কাগজে  খাস জমি বিক্রির  তথ্য ফাঁস

নিজস্ব সংবাদদাতা, সান্তাহার, ২৫ জানুয়ারি ॥ বগুড়ার সান্তাহার শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত জেলা পরিষদ ডাকবাংলোর ভোগ-দখলে থাকা সরকারী ’ক’ তালিকাভুক্ত জমি বিক্রির তথ্য ফাঁস হয়ে গেছে। এ ঘটনায় এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। জাল কাগজ দিয়ে বিক্রি করা প্রায় ৫ কোটি টাকা মূল্যের জমিটির মুল্য দেখানো হয়েছে মাত্র ৯ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। বিক্রেতা রবীন্দ্র রায় চৌধুরী নিজেকে ভারতবাসী মূল মালিকের ওয়ারিশ বলে দাবি করেছেন। জমিটির ৯ ক্রেতা হলেন আবু রেজা খান (সহ-সভাপতি, উপজেলা আওয়ামী লীগ), সাজেদুল ইসলাম চম্পা (যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, উপজেলা আওয়ামী লীগ), নিসরুল হামিদ ফুতু (সাংগঠনিক সম্পাদক, উপজেলা আওয়ামী লীগ), শাহিনুর ইসলাম মন্টি (সভাপতি, উপজেলা যুবলীগ) রাসেদুল ইসলাম রাজা (আহ্বায়ক, উপজেলা শ্রমিক লীগ), হারুনুর রশিদ সোহেল (সভাপতি, উপজেলা কৃষক লীগ), আওয়ামী লীগ কর্মী আইয়ুব খান ও চন্দন কুমার কুন্ডু এবং জাল কাগজ তৈরির কারিগর হিসেবে পরিচিত বিএনপি কর্মী শহিদুল ইসলাম মন্ডল হিটলু। সপ্তাহ খানেক আগে ফাঁস হওয়া তথ্যে জানা গেছে, ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর আদমদীঘি উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে রেজিস্ট্রি কবলা দলিল সম্পাদন করা হয়েছে। সাব-রেজিস্ট্রি কার্যালয়ের তথ্য মতে, সান্তাহার কলসা মৌজায় এমআরআর খতিয়ান নং-৮, সাবেক দাগ নং-১৬৭তে ৩৩ শতক জমির মালিকানা দাবিদার রবীন্দ্র নাথ রায় চৌধুরী নামের এক ব্যক্তি। তিনি ডিপি খতিয়ান ও সান্তাহার ভূমি কার্যালয়ের হিসাব নং-৬ এ ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করেছেন মর্মে রশিদ দিয়ে ওই জমি বিক্রি করে দিয়েছেন। যার দলিল নং-৩৯০৬। বর্তমান আইনে হাল নাগাদ ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের রসিদ জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক। বিক্রেতা যে রসিদ জমা দিয়েছেন তা জাল বলে দাবি করেছেন সান্তাহার পৌর ভূমি কর্মকর্তা ওসমান গনি। তিনি বলেন, জমি বিক্রেতার নামে ভূমি কার্যালয়ে কোন হিসাব খোলা নেই। ফলে কর পরিশোধের প্রশ্নই আসে না। তিনি জানান হাল রেকর্ড অনুযায়ী ওই জমির মালিক বাংলাদেশ সরকার। ওই খতিয়ানে ১২টি দাগে প্রায় সোয়া একর জমির মূল মালিক নওগাঁর দুবলহাটির জমিদার হরেন্দ্র নাথ রায়ের স্ত্রী স্নেহলতা রায়সহ ৪জন ভারতবাসী হবার কারণে সরকারের ’ক’ তালিকাভুক্ত হয়েছে। এদিকে, বগুড়া জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষ ওই জমিসহ বেশ কিছু জমি লিজ প্রদান করে রাজস্ব আয় করে আসছেন দীর্ঘদিন থেকে। ভূমি কর্মকর্তা ওসমান গনি আরও জানান, গত ৩০ বছর ধরে সান্তাহার কলসা মৌজার জমি জরিপ কাজ নানা কারণে অসমাপ্ত রয়েছে। এ সুযোগে ভূমিদস্যুরা তাদের পছন্দ মতো জমির জাল কাগজপত্র সৃষ্টি করে এভাবে বিক্রি করে আসছে। খাস জমি রেজিস্ট্রি করার ব্যাপারে আদমদীঘি উপজেলা সাব-রেজিস্টার মোঃ ইউসুফ আলী বলেন, কাগজের সঠিকতা যাচাই করার দায়িত্ব দলিল লেখকের। তবে জাল-জালিয়াতির ঘটনা জানার পর দলিল লেখক বাবলু উদ্দিনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। কিন্তু ২৪ জানুয়ারি সরেজমিন দেখা যায় তিনি বহাল তবিয়তে তার চেয়ার-টেবিলে বসে কার্যক্রম চালাচ্ছেন। ওই জমির বিক্রেতা ও ক্রেতাদের দাবি এম,আর,আর খতিয়ান মূলে তাদের বিক্রি করা বৈধ। কিন্তু মামলা চলমান থাকা ও হালনাগাদ ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের রসিদ বিষয়ে কোন সদুত্তর দিতে পারেননি।
×