ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নবীন-প্রবীণের মিলন উৎসব

প্রকাশিত: ০৩:৫৯, ২৬ জানুয়ারি ২০১৯

নবীন-প্রবীণের মিলন উৎসব

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ রাজশাহীর পদ্মা নদীর তীরে বড়কুঠির কাছাকাছি খড়ের দোচালা ঘরে টাইল নির্মিত বারান্দায় শিক্ষা বিস্তারের ব্রত নিয়ে যে স্কুলের যাত্রা শুরু হয়েছিল আজ তা দেশের ঐতিহ্যবাহী ও প্রচীন বিদ্যাপীঠের একটি। এটি এখন রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল। মাধ্যমিকের পাশাপাশি এখন উচ্চ মাধ্যমিকেও রূপ নিয়েছে এ স্কুল। দিন, সাল বছর পেরিয়ে ১৯০ বছর পার করল রাজশাহীর এ ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ। ইতিহাসের পথ বেয়ে ১৯০ বছরে পদার্পণে দু’দিনের উৎসব শুরু হয়েছে স্কুলে। উৎসবের প্রথম দিন শুক্রবারের সকাল থেকে স্কুলের নবীণ ও প্রবীণদের উপস্থিতিতে বিশাল মিলনমেলায় রূপ নিয়েছে। বর্ণিল আয়োজনে চলছে উসব। দেশের বিভিন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা প্রাক্তন ছাত্ররা এসে স্মৃতি রোমাঞ্চ করছেন স্কুল জীবনের কথা। শুরুর দিন থেকেই রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলে নবীন-প্রবীণরা মিলন মেলায় মেতে উঠেছেন। স্কুল জীবনের প্রিয় বন্ধুদের কাছে পেয়ে অনেকে আপ্লুত হয়ে উঠেন। ঘুরে ঘুরে দেখেন পুরনো দিনের পদচিহ্ন। স্কুলের বন্ধুকে কাছে পেয়ে অশ্রুসিক্ত চোখে বুকে জড়িয়ে ধরতে দেখা গেছে একে অপরের সঙ্গে। রাজশাহীর প্রাচীনতম ও উপমহাদেশের ঐতিহ্যবাহী এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মিলন মেলায় পরিণত হয়েছে। ১৯০ বর্ষে পদার্পণ উপলক্ষে আয়োজিত উৎসবে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে থেকে সাবেক শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেছেন। বেলা ১১ টার দিকে উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পরে আনন্দ র‌্যালি বের করা হয়। র‌্যালিটি নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে আবার স্কুলে এসে শেষ হয়। উৎসবের উদ্বোধন করেন রাজশাহী সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। ঐতিহ্যের ১৯০ বছরে পা রাখায় অতিপ্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলের উৎসব চলছে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও অনুষ্ঠান উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক ড. নূরজাহান বেগম জানান, চার পর্বে সাজানো হয়েছে দু’দিনের অনুষ্ঠান। সিডিউল অনুযায়ী শুক্রবার সকালে প্রথম অধিবেশনে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন। এরপর বর্ণাঢ্য র‌্যালি বের করা হয়। একই দিন দ্বিতীয় অধিবেশনে প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন রাজশাহী-১ আসনের সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী। আজ শনিবার প্রথম অধিবেশনের প্রধান অতিথি থাকবেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এএইচএম আব্দুল মোমেন। আর সমাপনী অধিবেশনে প্রধান অতিথি থাকবেন রাজশাহী-২ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা। অনুষ্ঠান আনন্দঘন করতে দুই দিনই জমকালো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ব্যান্ড-শো ও আতশবাজীর ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রাক্তন ছাত্ররা বলেন, আমরা কলেজিয়েট স্কুলের সকল ছাত্র এক ও অভিন্ন। এত বড় পরিসরে ১৯০ বছর পূর্তি উৎসবটাই তার প্রমাণ। ব্যক্তিগত মতানৈক্য থাকলেও স্কুলের স্বার্থে আমরা সবাই কলেজিয়েটিয়ান। সেই ধারাবাহিকতায় এই ১৯০ বছরপূর্তি উৎসব আয়োজন বলে জানান তারা। প্রসঙ্গত, ১৮২৮ সালের দিকে এটি ছিল একটি অবৈতনিক প্রাইভেট স্কুল। সে সময় স্কুলের জন্য কোন সরকারী সাহায্য বরাদ্দ ছিল না। রাজশাহীতে বসবাসকারী ইংরেজ কর্মকর্তা, আইনব্যবসায়ী এবং নাটোর দিঘাপতিয়া, দুবলহাটি, পুঠিয়া ও বলিহারের জমিদারদের সাহায্য ও সহযোগিতায় স্কুলটি চলতে থাকে। এদেশের তৎকালীন শিক্ষা বিস্তারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইউলিয়াম এ্যাডাম ১৮৩৫ সালে নাটোরে শিক্ষা জরিপ শেষে রাজশাহী বউলিয়া স্কুল পরিদর্শনের পর সরকারের কাছে স্কুলের উজ্জ্বল সম্ভাবনা তুলে ধরলে ১৮৩৬ সালে ২০ জুন স্কুলটিকে সরকারীকরণ করা হয়। এটি রাজশাহী জেলা স্কুল হিসেবে অধিগ্রহণ করে রাজশাহীর কৃতীসন্তান সারদা প্রসাদ বসুকে স্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়।
×