ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

যানজটমুক্ত হচ্ছে যশোর শহর

প্রকাশিত: ০৩:৫৭, ২৬ জানুয়ারি ২০১৯

 যানজটমুক্ত হচ্ছে  যশোর শহর

সাজেদ রহমান, যশোর অফিস ॥ পৌরসভার মাস্টারপ্ল্যানের ফল পেতে শুরু করেছে যশোর শহরবাসী। আগামী মাসেই যানজটমুক্ত হতে যাচ্ছে প্রাচীন এ শহর। এ লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে যশোর পৌরসভা। ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে টার্গেট এক শ’ ৩০ কোটি টাকার কাজ সম্পন্ন করা। যার প্রায় ৯০ ভাগ কাজই ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। এ কাজ শেষ হলে শহরের প্রধান সড়ক থেকে বাড়তি চাপ কমে যাবে। জনগণ নির্বিঘ্নে অল্প সময়ে শহরের সংস্কার করা সড়ক দিয়ে তার গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবে। শহরের প্রধান সড়কে কমে যাবে বাড়তি চাপ। যার ফলে অনেকংশ কমে যাবে যানজট। এতে করে চলাচলে কমে আসবে ভোগান্তি। এ সকল কাজই চলছে পৌরসভার মাস্টার প্লান অনুযায়ী। মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী, কাজ চলছে রোড ডিভাইডার, স্থানীয় সড়ক সংস্কার ও প্রশস্তকরণ, পানি নিষ্কাশনের জন্যে ড্রেন তৈরি, ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ করা, অতিরিক্ত ইজিবাইক চলাচল বন্ধ করা, ফুটপাত দখলমুক্ত, হকারদের বিকল্প ব্যবস্থাকরণসহ একাধিক প্রশংসনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে পৌরসভার পক্ষ থেকে। পৌরসভা থেকে জানা যায়, সড়ক ও ড্রেনের অধিকাংশ কাজ শেষের দিকে। বাকি রয়েছে কার্পেটিং ও সামান্য কিছু সড়ক সংস্কারের কাজ। এ কাজ দ্রুত গতিতে চলছে। পৌর কর্তৃপক্ষের নির্দেশ, কাজের গুণগতমান ঠিক রেখে আগামী মাসেই কাজ শেষ করতে হবে। মাস্টারপ্ল্যান সম্পন্ন করতে ব্যয় হচ্ছে ১শ’ ৩০ কোটি টাকা। ইতোমধ্যে নগর অঞ্চল উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় সড়ক ও ড্রেনের কাজ শেষ হয়েছে। এতে ব্যয় হয়েছে ৮০ কোটি টাকা। কাজ চলমান রয়েছে তৃতীয় নগর পরিচালনা অবকাঠামো উন্নীতকরণ (সেক্টর) প্রকল্পের। এই প্রকল্পের অধীনে রয়েছে ২৫ কিলোমিটার সড়ক ও ৪৮ কিলোমিটার ড্রেন। এর মধ্যে আরসিসি ঢালাইকরণ সাত কিলোমিটার সড়ক ও ৪৮ কিলোমিটার ড্রেনের কাজ শেষ হয়েছে। চলমান রয়েছে ১৮ কিলোমিটার সড়কের কাজ। এ প্রকল্পের ৯০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। অবশিষ্ট ১০ ভাগ কাজ আগামী মাসের মধ্যে শেষ হবে বলে জানিয়েছেন যশোর পৌরসাভার মেয়র জাহিরুল ইসলাম চাকলাদার রেন্টু। তিনি জানান, নগর উন্নয়ন প্রকল্পে প্রতিটি সড়ক প্রশস্ত করা হয়েছে। ১৫ ফুটের সড়ক প্রশস্ত করে ২০ ফুট এবং ২০ ফুটের সড়ক ৩০ ফুট করা হয়েছে। ড্রেনের প্রস্থ দু’ফুট থেকে ছয় ফুট, উচ্চতা তিন ফুট থেকে সাত ফুট করা হয়েছে। তৃতীয় নগর পরিকল্পনা ও উন্নয়নের কাজ চলছে। এতে ব্যয় হচ্ছে ৫০ কোটি টাকা। এ প্রকল্পে সড়ক প্রশস্ত করার কাজ চলছে ৩৭ টির। এর অধিকাংশ কাজ প্রায় শেষের দিকে। সড়কগুলোর মধ্যে রয়েছে আশ্রম রোড, পিয়ারী মোহন রোড, বেজপাড়া রোড, ঘোপ নওয়াপাড়া রোড, শংকরপুর রোড, বোরহান শাহ রোড, পূর্ব বারান্দী প্রধান সড়ক, খালধার রোড, শহীদ আবু তালেব রোড ও রেলরোড। এ ছাড়াও সড়ক সংস্কার করা হয়েছে, ষষ্টিতলা বুনোপাড়া সড়ক, আজিমাবাদ কলোনি, বকচর কবরস্থান সড়ক, গাজীরঘাট কবরস্থান সড়ক, আব্দুল মতিন সড়ক, তুলোতলা সড়ক ঘোপ নওয়াপাড়া বাইলেন, সিটি প্লাজার সামনের সড়ক, হযরত বোরহান শাহ বাইলেন, নিকারিপাড়া সড়ক, কদমতলা সড়ক, এইচএমএম সড়ক, নীল রতন ধর রোড, ঘোপ নওয়াপাড়া রোড, তাঁতীপাড়া রোড, ঘোষপাড়া রোড, গাজীর ঘাট রোড, রওশন আলী রোড, টিবি ক্লিনিক রোড, স্কাউট রোড, মাওলানা শাহ আব্দুল করিম রোড, ইসহক সড়ক, মুন্সি মেহেরউল্লাহ রোড, এমএম আলী রোড ও কেশবলাল রোড। যশোর পৌরসভার নগর পরিকল্পনাবিদ সুলতানা সাজিয়া জানান, শহরকে নতুন আঙ্গিকে সাজাতে ও জনদুর্ভোগ কমাতে মাস্টারপ্ল্যান গ্রহণ করা হয়েছে। এটা ধারাবাহিকতার সঙ্গে পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করা হচ্ছে। বিশেষ করে শহরের বাড়তি চাপ কমাতে অনেকগুলো বিকল্প সড়ক নির্মাণ, প্রশস্তকরণ, সড়ক সংস্কার, ফুটপাত দখল মুক্তকরণ ও তাদের জন্যে নির্দিষ্ট স্থানে ব্যবসা করার সুযোগ তৈরিসহ শহরকে আধুনিকায়ন করার নানা পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করে যাচ্ছেন তারা। পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী এসএম শরীফ হাসান বলেন, আবহাওয়া ভাল থাকলে এ প্রকল্পের কাজ ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে শেষ হবে এমন প্রত্যাশা করছেন তিনি। এ কাজ শেষ হলে শহরের অনেকাংশ কমে যাবে যানজট। এ ক্ষেত্রে জনগণকেও সড়ক ও ড্রেনের সঠিক ব্যবহার করতে হবে। সঙ্গে সঙ্গে যেখানে সেখানে পার্কিং থেকে বিরত থাকতে হবে। মেয়র জহিরুল ইসলাম চাকলাদার রেন্টু বলেন, ইতোমধ্যে তারা ফুটপাত দখলমুক্ত করেছেন। এবং হকার্স মার্কেট করা হয়েছে। এজন্য জনগণ স্বাভাবিকভাবে ফুটপাত ব্যবহার করতে পারছে। যার ফলে যানজট অনেকাংশে কমতে শুরু করেছে। ভারসাম্য বজায় রেখে ইজিবাইকের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সীমা বেধে দেয়া হয়েছে। যার কারণে যানজট অনেকটা কমে গেছে। সড়কের প্রধান প্রধান জায়গায় চাপ কমাতে অনেকগুলো সড়ক সংস্কার ও প্রশস্ত করা হয়েছে। আশা করছি ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে এক শ’ ৩০ কোটি টাকার কাজ শেষ হবে। এ কাজ শেষ হলে অনেকাংশ কমে যাবে শহরের যানজট। শহরকে আধুনিকায়ন করার জন্য প্রধান প্রধান স্থানে সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। আর সব কাজই চলছে মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী।
×