ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

হিমালয়ের দেশে একদিন

প্রকাশিত: ০৭:২৩, ২৫ জানুয়ারি ২০১৯

হিমালয়ের দেশে একদিন

ভ্রমণ মানুষের জীবনে এমন এক অধ্যায় যার স্মৃতি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কারও পিছু ছাড়ে না। অজানাকে জানার জন্য মানুষ পাড়ি দেয় সকল প্রতিকূল দেয়াল। ভ্রমণ মানুষের জন্য সাহিত্য না হলেও অমূল্য এক সম্পদ। ভ্রমণের সকল দৃশ্য বছরের পর বছর মানুষের চোখের সামনে ভেসে বেড়ায়। ২০১১ সালের সেই ভ্রমণের স্মৃতি আজও আমাকে পুলকিত করে। বাবা-মাসহ নেপাল ভ্রমণ তার চেয়ে বড় বিমানে চড়ার এক অপূর্ণ ইচ্ছা আমার কাছে নেহাতই এক স্বপ্ন। বরং স¦প্নের চেয়েও বেশি কিছু। ২০১১ সালের ২৭ জুন রৌদ্র উজ্জ্বল দুপুরে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ‘বিমান বাংলা এয়ারলাইনস’-এর একটি বিমানে করে আমরা রওনা দিলাম এভারেস্টের দেশে। বিমান যতই উপরে ওঠে ততই ঘরবাড়ি ছোট হয়ে যাচ্ছিল। আকাশের সাদা মেঘ শুধু আমাকে অবাক করেনি মনে হচ্ছিল যেন আমি এখন স্বর্গে। বিমানে একজন বিশেষ যাত্রী ছিলেন তিনি হলেন তৎকালীন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এম শাখাওয়াত হোসেন যার সঙ্গে আমি একটি ছবি তুলি। নির্ধারিত সময়ে বিমান অবতরণের পর সকল ঝামেলা মিটিয়ে আমরা রওনা দিলাম আগে থেকে বুকিং করা হোটেলে। সবচেয়ে বেশি আনন্দ পেয়েছিলাম নেপালিদের পোশাক দেখে। পরের দিন আমরা গেলাম ‘হনুমান ডোকা দরবার স্কয়ার’-এ। এটি মূলত হিন্দু ও বৌদ্ধদের ছোট-বড় মোট ৪৩টি মন্দিরের সমন্বয়ে তৈরি এক দর্শনীয় স্থান। এটি ইউনেস্কো কর্তৃক স্বীকৃিত লাভ করে ১৯৭৯ সালে। বিভিন্ন উৎসব অনুষ্ঠান নেপালিরা এখানে পালন করে থাকে। বিংশ শতাব্দীর আগ পর্যন্ত এটি রাজপ্রসাদ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল। বর্তমানে এটি জাদুঘর হিসেবে পরিচিত। এর মূল প্রবেশ পথে দুটি হনুমান আকৃতির ভাস্কর্য আছে যা রাজা প্রতাপ মাল্লা তৈরি করেছিলেন। আমি হনুমান দেখে একটু ভয়ই পেয়েছিলাম। ছোট ছিলাম তাই মনে করেছিলাম এটি বোধোদয় আমার দিকেই তেড়ে আসছে। আসলে যে এটি ছিল ভাস্কর্য সেটা তো তখন আমার স্মরণে আসেনি। মা জানাল ভয় পাওয়ার কিছু নেই এটি সত্যিকারের হনুমান নয়। ওই দিন আমরা কাঠমান্ডুর সবচেয়ে বড় মার্কেট ‘সিটি সেন্টার’-এ কেনাকাটা করতে গিয়েছিলাম। পরের দিন আমরা আরেক শহর পাঠানে ঘুরতে গিয়েছিলাম। এটি তৃতীয় বৃহত্তম নগর নেপালের। পাঠানের সবচেয়ে বড় ও আকর্ষণীয় হল জাদুঘর এবং চিড়িয়াখানা। জাদুঘরে বিভিন্ন মূর্তি ও ভাস্কর্য ছিল। তাদের প্রত্যেকটির নিচে ফলকে তাদের নিজস্ব পরিচয় খোদাই করা আছে। এ ছাড়া চিড়িয়াখানায় ৮৭৬ প্রজাতির প্রাণী রয়েছে। সবচেয়ে বেশি মজার ছিল হাতি। কারণ আমি ওখানে হাতিতে চড়েছিলাম। হাতিতে চড়ার মজাই আলাদা। প্রথমত যদিও আমি হাতিতে উঠতে ইতস্ততা করছিলাম কিন্তু পরে মনে হলো কত লোকেই তো ওঠে আমি উঠলে আর তেমন কী হবে। এর কারণ হলো হাতির বিশাল দেহ আর যেই লম্বা সুর- এতে যে কারোরই হাতিকে ভয় পাওয়ার কথা। তৃতীয় দিন আমরা পোখরাতে গিয়েছিলাম। পোখরার অনেক গল্পই শুনেছি। তাই দেখার ও খুব ইচ্ছে ছিল। এ ছাড়া সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে হাজার ফুট উঁচু জায়গার কথা শুনেছি কিন্তু দেকা তো হয় নাই। পোখরা সমুদ্র পৃষ্ঠ হতে ৫৭১০ ফুট উঁচুতে অবস্থিত এক নগরী। ভাবা যায়! পাহাড় ঘেরা জায়গাটি সৌন্দর্যের এক লীলাক্ষেত্র। এক একটি পাহাড় যেন এক একটি সৌন্দর্যের লীলাভূমি। পাহাড়ের সৌন্দর্য ভ্রমণ প্রেয়সীদের মনে দোলা দিয়ে যায়। সেখানে নেপালের বিভিন্ন নৃ-গোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে। যাদের সঙ্গে আমরা বেশ কয়েকটি ছবিও তুলেছি। কথা না বলতে পারলে ও ভাষার অঙ্গভঙ্গিমায় বেশ কিছু সময় তাদের সঙ্গে কাটিয়েছি। এর পরই পাহাড়ের খুব কাছে চলে যাই। পাহাড়গুলো এমন উঁচু যেন মনে হয় এরা মেঘকে তালি দিচ্ছে। আপনি চাইলেই যেন মেঘকে ছুঁয়ে দেখতে পারেন। আহা যেন মেঘের হাওয়ায় দোনলা খাওয়ায়। পোখরার রাস্তা হলো পেচানো সাপের মতো। আঁকাবাঁকা রাস্তা। তবে রাস্তা দিয়ে চলতে বেশ দারুণ মজা। এ ছাড়া ওখানের ঐতিহ্যবাহী খাবার অনেক সুস্বাদু ও মনোমুগ্ধকর। পরের দিন অর্থাৎ পহেলা জুলাই সকালে আমরা বাংলাদেশের উদ্দেশে রওনা দেই। বিমানে ওঠার আগেও মনে হয়নি যে আমাদের ভ্রমণের সমাপ্তি ঘটতে চলেছে। এই ছোট সফরটি যেন শেষ হয়েও শেষ হচ্ছিল না। সত্যিই অনেক খারাপ লেগেছিল তখন। কিন্তু আবার যে ফিরতে হবে ব্যস্ত নাগরিক জীবনে। আজও এই ভ্রমণের কথা মনে পড়লে আমি নেপালের গন্ধ খুঁজে পাই। এই ভ্রমণটি আমার চলার পাথেয় হয়ে থাকবে আজীবন।
×