ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মানবিকতায় শিক্ষাজীবন ফিরে পেল রুবা

প্রকাশিত: ০৬:৪৪, ২৫ জানুয়ারি ২০১৯

মানবিকতায় শিক্ষাজীবন ফিরে পেল রুবা

সঞ্জয় সরকার, নেত্রকোনা ॥ বাবা আবুল কাশেম দুর্ঘটনায় আহত। মা শরীফা আক্তার অসুস্থ। এ কারণে দিন দিনই বাড়ছিল পরিবারের ঋণের বোঝা। আর তাই কাজের সন্ধানে অজানার উদ্দেশে পাড়ি জমাতে যাচ্ছিল মেধাবী ছাত্রী রুবা আক্তার। এমন সময় এগিয়ে এলেন নিজ বিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ। সহযোগিতার হাত বাড়ালেন স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনও। সকলের মানবিক সহযোগিতায় আবারও শিক্ষা জীবন ফিরে পেল সে। রক্ষা পেল অনিশ্চিত জীবনের গ্লানি থেকে। নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলার ঘটনা এটি। জানা গেছে, বারহাট্টার সুসং ধোবাওলা গ্রামে বাড়ি রুবার। সে স্থানীয় হারুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণীতে পড়ে। রুবা ওই ক্লাসের ফার্স্ট গার্ল। তার আর বিবাহিত এক বোন ঢাকায় গার্মেন্টসে কাজ করে। আর ছোট দুই ভাই বোন স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ে। বাবা আবুল কাশেম ঢাকায় দিনমজুরি করতেন। কিন্তু কাজ করতে গিয়ে দুর্ঘটনায় আহত হওয়ার পর থেকে তিনি আর কোন কাজ করতে পারেন না। এদিকে মা শরীফা আক্তার দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। বাবা-মার চিকিৎসা, পড়ালেখার খরচ আর সংসারের ঘানি টানতে গিয়ে প্রায় ৪০ হাজার টাকার মতো ঋণ করতে হয় তাদের। দিন দিনই বাড়ছিল ওই ঋণের সুদ। কিন্তু পরিশোধের কোন উপায় পাচ্ছিল না। উপরন্তু পাওনাদারদের তাগাদায় বাড়িতে থাকাই অসম্ভব হয়ে পড়ছিল তাদের। তাই লেখাপড়া ছেড়ে কাজের সন্ধানে ঢাকায় পাড়ি জমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল রুবা। বৃহস্পতিবার দুপুরের কমিউটার ট্রেনে বারহাট্টা রেল স্টেশন থেকে ঢাকায় যাওয়ার কথা ছিল তার। ট্রেনের টিকিট কেটে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছিল সে। এমন সময় রুবার চলে যাওয়ার খবর পেলেন হারুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জুলফিকার হায়দার মামুন। দ্রুত স্টেশন থেকে ফিরিয়ে আনলেন রুবাকে। এরপর নিয়ে গেলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফরিদা ইয়াসমিনের কাছে। ইউএনও মেয়েটিকে সাহায্যের জন্য হাত পাতলেন। এতে সাড়া দিলেন অনেকে। তাৎক্ষণিক ইউএনও, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মানিক আজাদ ও শিক্ষকরা মিলে নগদ পাঁচ হাজার টাকা তুলে দিলেন মেয়েটির হাতে। এছাড়া ইউএনওর আহ্বানে আহছানিয়া মিশন নামে একটি এনজিও ওই পরিবারটিকে ২০ হাজার টাকা ঋণ দিতে সম্মত হয়। রুবার বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা দায়িত্ব নেন আরও ১০ হাজার টাকার। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মানিক আজাদ মেয়েটির পড়ালেখা বাবদ প্রতি মাসে ৫শ টাকা করে সহযোগিতার আশ্বাস দেন এবং দুই মাসের টাকা তিনি অগ্রিম পরিশোধ করেন। অন্যদিকে ইউএনও ও বিএনপিএস নামক একটি এনজিও কলেজ জীবন পর্যন্ত মেয়েটির লেখাপড়ার খরচ চালিয়ে নেবার প্রতিশ্রুতি দেয়। ইউএনও ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, ‘কাজে চলে গেলে মেধাবী মেয়েটির পড়ালেখা চিরদিনের জন্য বন্ধ হয়ে যেত। আমরা তাকে আরও কীভাবে সহযোগিতা করতে পারি- তা নিয়ে ভাবছি।’
×