ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ভেনিজুয়েলায় সঙ্কট ঘনীভূত

প্রকাশিত: ০৬:২২, ২৫ জানুয়ারি ২০১৯

ভেনিজুয়েলায় সঙ্কট ঘনীভূত

ভেনিজুয়েলায় বিরোধী নেতা হুয়ান গুয়েইদো বুধবার নিকোলাস মাদুরোর বিদায় ঘণ্টা বাজিয়ে দিয়েছেন। গুয়েইদো নিজেকে প্রেসিডেন্ট বলে দাবি করার পর যুক্তরাষ্ট্র তাকে দেশটির বৈধ প্রেসিডেন্ট হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এর ফলে মাদুরো কার্যত ক্ষমতাচ্যুত হলেন। এর আগে মাদুরোর পদত্যাগ দাবি করে রাজধানী কারাকাসের রাজপথে হাজার হাজার মানুষের ঢল নামে। সিএনএন, বিবিসি ও টরোন্টো অনলাইন। গুয়েইদো হাজার হাজার হর্ষোৎফুল্ল জনতার সামনে প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন। ঈশ্বরের নামে শপথ নিয়ে তিনি বলেন, ‘আজ ২৩ জানুয়ারি, ২০১৯ আমি আনুষ্ঠানিকভাবে ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট হিসেবে জাতীয় নির্বাহী ক্ষমতা গ্রহণের শপথ করলাম।’ যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি কানাডাও দেশটির নতুন প্রেসিডেন্টকে স্বীকৃতি দেয়। পাশাপাশি ১০টি লাতিন আমেরিকান দেশ তাকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে মেনে নেয়। তবে মাদুরো প্রেসিডেন্ট পদ ছাড়তে অস্বীকার করেছেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্নের ঘোষণা দেন এবং ৭২ ঘণ্টার মধ্যে মার্কিন কূটনীতিকদের ভেনিজুয়েলা ছাড়তে বলেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অন্তর্বর্তীকালীন নেতা হিসেবে গুয়েইদোকে দেশটির বৈধ নেতা ঘোষণা করার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই মাদুরোর এ ঘোষণা আসে। ট্রাম্প মাদুরোকে উদ্দেশ করে হুঁশিয়ারিমূলক বার্তা পাঠান। ট্রাম্প বলেন, গণতন্ত্রে শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের ব্যাপারে আমরা যে কোন পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হতে পারি। মাদুরোবিরোধী সহিংস বিক্ষোভে গত দুইদিনে দেশটিতে ১৩ জন নিহত হয়েছেন। বুধবার কারাকাসভিত্তিক ডানপন্থী সংগঠন ভেনিজুয়েলান অবজারভেটরি অব সোশাল কনফ্লিক্ট এ কথা জানিয়েছে। মাদুরো ভেনিজুয়েলার প্রয়াত প্রেসিডেন্ট হুগো শ্যাভেজের উত্তরসূরি হিসেবে ২০১৩ সালের মার্চ থেকে ক্ষমতায় ছিলেন। বামপন্থী শ্যাভেজ প্রেসিডেন্ট থাকাকালে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে তাকে উৎখাতের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলেছিলেন। শ্যাভেজ একজন মার্কিনবিরোধী নেতা হিসেবে আন্তর্জাতিক পর্যায়েও সুপরিচিত ছিলেন। কিন্তু তার মৃত্যুর পর মাদুরো নিজের জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে পারেননি। বুধবার কারাকাসে বিক্ষোভের মধ্যে বিরোধী নেতা গুয়েইদো নিজেকে দেশের অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট হিসেবে ঘোষণা দেন। এরপর মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর এক বিবৃতিতে মাদুরো সরকারকে ‘অবৈধ’ আখ্যায়িত করে গুয়েইদোকে দেশটির প্রেসিডেন্ট হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র কলাম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট ইভান দুকি বলেন, ভেনিজুয়েলার মানুষকে স্বৈরশাসন থেকে মুক্তি দিতে তিনি এই পরিবর্তনকে ও গুয়াইদোকে সমর্থন করেন। যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, মাদুরো যদি বিরোধী দলের উদ্যোগ বাতিলের চেষ্টা করেন তবে তারা সবধরনের ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত আছে। এটি ভেনিজুয়েলার সেনাবাহিনীর প্রতি মার্কিন হুমকি। বিক্ষোভের ডাক দিয়ে গুয়েইদো দেশটির পার্লামেন্টের প্রধানেরও দায়িত্ব নেন। তিনি সশস্ত্র বাহিনীকে সরকারের নির্দেশ অমান্য করার আহ্বান জানান। কারণ সশস্ত্র বাহিনী এখনও মাদুরোকে সমর্থন করে যাচ্ছে। চলতি মাসে আরও আগের দিকে দেশটিতে সাধারণ নির্বাচনে জিতে দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন মাদুরো। তবে বিরোধীরা নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তুলেছে। মাদুরোর শাসনাধীনে ভেনিজুয়েলা অর্থনৈতিকভাবে দুর্দশায় পড়েছে। ফলে তার বিরুদ্ধে জনবিক্ষোভ দেখা দিয়েছে। বিক্ষোভকারীদের দাবি, বুধবার রাতভর বিক্ষোভের মধ্যে তাদের চার সঙ্গীকে হত্যা করা হয়েছে। ইইউ গুয়েইদোকে সরাসরি সমর্থন দেয়নি। তবে স্বাধীন নির্বাচনের আহ্বান জানিয়েছে। ৩৫ বছর বয়সী গুয়েইদোর ক্ষমতাগ্রহণকে যথেষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ বলে অনেক বিশ্লেষক মনে করেন। তবে দেশকে একনায়কমুক্ত করতে এর বিকল্প ছিল না বলেও তারা বলছেন।
×